এক মিডিয়া আরেক মিডিয়ার পেটে চলে যাচ্ছে

ড. শেখ মো. শফিউল ইসলাম
ড. শেখ মো. শফিউল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

ড. শেখ মো. শফিউল ইসলাম। স্নাতক, স্নাতোকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে। তিনি একাধারে একজন গণমাধ্যম শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শিক্ষক। বর্তমানে দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের (এমএসজে) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এই সহযোগী অধ্যাপক। সম্প্রতি গুণী এ শিক্ষক দেশের গণমাধ্যম শিক্ষা, গণমাধ্যম শিক্ষায় ইউআইইউ’র যাত্রা, সংবাদ-সাংবাদিকতা এবং পুরো গণমাধ্যম খাতে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি, চ্যালেঞ্জ, সংকট সম্ভাবনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। গল্প-আলাপে তার চৌম্বক অংশ তুলে ধরেছেন খাঁন মুহাম্মদ মামুন। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির সমানতালে দেশের গণমাধ্যম শিক্ষার বড় অংশই চলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আসলে অবস্থাটি কেমন? 

ড. শফিউল ইসলাম: যোগাযোগ প্রযুক্তিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। মানব যোগাযোগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন প্রভাব ফেলছে। সে অনুযায়ী গণমাধ্যম শিক্ষার মাধ্যমে যে পরিমাণ দক্ষ জনবল তৈরি করা প্রয়োজন, তা আমরা করতে পারছি না। আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। সেজন্য মিডিয়া শিল্পে দক্ষ জনবলেরও ঘাটতি রয়েছে। সে ঘাটতি পূরণে আমাদের দক্ষ জনবল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় যে উদ্যোগ এবং আয়োজন থাকা দরকার, তার সবই ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের রয়েছে।

 দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কেন ভর্তিচ্ছুরা ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজমকে বেছে নেবে? তুলনামূলক নতুন বিভাগ হিসেবে ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ কেমন করছে? 

ড. শফিউল ইসলাম: আমাদের হালনাগাদ সিলেবাস রয়েছে। এটি সময়ের সাথে সাথেই আপডেট করা হয়। এছাড়াও হালনাগাদ সব আর্টিকেল এবং জার্নালগুলো শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। তারা সেগুলো থেকে শেখার সুযোগ পায়। আমাদের মিডিয়া স্টাডিজের জন্য আলাদা একটি বিশেষায়িত ল্যাব রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান। ফলে তারা বাস্তব এবং অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখাটাও সম্পন্ন করতে পারেন। এসব সুযোগ তাদের বাজার উপযোগী এবং দক্ষ করে গড়ে তুলছে। ফলে তারা অন্যান্যদের তুলনায় সবসময়ই এগিয়ে থাকার সুযোগ পাবেন। 

ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীরা। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত।

আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের সে উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। দরকারে দেশের বাইরে থেকেও রিসোর্স আনা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের এখানে একজন বিদেশি শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও আমরা মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার জন্য যত ধরনের দক্ষতা দরকার, শিক্ষার্থীদের সেসব দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিষয়ে উচ্চশিক্ষার পর কাজের সুযোগ আসলে কতটুকু? ব্যাপ্তি বা ধরণ? 

ড. শফিউল ইসলাম: আমাদের দেশে নিউজ মিডিয়ার পাশাপাশি এখন এনজিও, আইএনজিও, জনসংযোগ এজেন্সি, সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনসংযোগ বিভাগ, বিভিন্ন দূতাবাস, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। এছাড়া ডিজিটাল দুনিয়ায়ও অনেক সুযোগ তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ: দক্ষ গণমাধ্যম কর্মী তৈরির প্রত্যয় ও প্রস্তুতির মেলবন্ধন যেখানে

আমরা এখানে পাবলিক রিলেশন এবং কর্পোরেট রিলেশনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করেছি এবং গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়গুলোও এখানে বেশ গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এর বাইরে অ্যানিমেশন, বিভিন্ন ডেটার ব্যবহার শেখানো এবং গণমাধ্যম শিল্পের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের আমরা এখানে নিয়মিতই শিক্ষার্থীদের সাথে সংযুক্ত করি। ফলে তারা দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় সবসময়ই এগিয়ে থাকবে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখানে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ কতটুকু? তাদের জন্য কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে? 

ড. শফিউল ইসলাম: ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগে (এমএসজে) রয়েছে আধুনিক ল্যাব সুবিধা; যেখানে সংবাদ-সাংবাদিকতার নানা বিষয়াদি হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা বিভাগটিতে স্নাতকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পান বিভাগটিতে।

দেশ-বিদেশের মেধাবী শিক্ষকদের অধীনে পাঠ গ্রহণের সুযোগের ফলে বিদ্যার্থীরা নিজেকে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগী করে গড়ে তোলার সুযোগ পান। এর বাইরে ইউআইইউতে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমও এগিয়ে রাখে শিক্ষার্থীদের। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় গণমাধ্যম শিল্পের আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে?

ড. শফিউল ইসলাম: আর্থ-সামাজিক কাঠামোর এবং প্রযুক্তির পরিবর্তন আমাদের গণমাধ্যম শিল্পেও ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে আমাদের একটি মিডিয়া আরেকটি মিডিয়ার পেটে চলে যাচ্ছে। এখন আমাদের কোনটি সংবাদ বা কোনটি আধেয় (কনটেন্ট) তা নিয়ে জনগণের মধ্যে, এমনকি অনেক সংবাদ কর্মীর মধ্যেও ধোঁয়াশা বা অজ্ঞতা তৈরি করেছে। সব সংবাদই কনটেন্ট। কিন্তু সব কনটেন্টই সংবাদ নয়। সংবাদ সাক্ষরতারও অভাব রয়েছে। বর্তমানে আমাদের জন আকাঙ্ক্ষা ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবং জনগণের উপকারে আসবে এমন সব কনটেন্ট সৃষ্টিতে মূল ধারার গণমাধ্যমের বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজ করার সুযোগ রয়েছে। 

আরও পড়ুন: পড়াশোনার সঙ্গে চাকরিরও সুযোগ ইউআইইউতে

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুবিধা রয়েছে কিনা? 

ড. শফিউল ইসলাম: ইউআইইউ’তে ফলাফলের ভিত্তিতে শীর্ষ ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কলারশিপ সুবিধা পান। এর মধ্যে প্রথম ২ শতাংশ শিক্ষার্থী শতভাগ, পরবর্তী ৪ শতাংশের জন্য ৫০ ভাগ এবং তার পরবর্তী ৪ শতাংশের জন্য ২৫ ভাগ স্কলারশিপ সুবিধা রয়েছে। মেধাবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকেই শীর্ষ ফলাফলধারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি গ্রহণের জন্য ডাকা হয়। শিক্ষার্থীদের মেধা এবং পরিশ্রমকে আমরা উৎসাহিত করতে চাই। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা কেমন করছে?

ড. শফিউল ইসলাম: আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি তারা বিভিন্ন দূতাবাস, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের সবকিছুই হাতে-কলমে শেখানোর চেষ্টা করি। এখাতে কাজ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গণমানুষের সাথে আরও বেশি সংযুক্ত করার সুযোগ পাবেন। সেজন্য তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে কাজ করছি। 

শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে বিভিন্ন বিষয় শেখানো হয় ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের ল্যাবে। ছবি: সৌজন্যে প্রাপ্ত।

এছাড়া বাজার উপযোগী দক্ষ গ্র্যাজুয়েট হিসেবে গড়তে কাজ করছি। ফলে তারা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই উপযোগী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আমাদের এখানে প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তুলতে কাজ করছি। এককথায় শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণরূপে বাজার উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের গণমাধ্যমের ইন্ড্রাস্ট্রির চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর করণীয় কী?

ড. শফিউল ইসলাম: বাংলাদেশের গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট শিল্পর সময়োপযোগী এবং দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে বেসরকারি উচ্চশিক্ষালয়গুলোর এখনও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেজন্য আমাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একসাথে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে। একইসাথে আমাদের ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগকে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় দেখার আকাঙ্ক্ষা থাকবে। দেশের মিডিয়া ইন্ড্রাস্ট্রির জন্য দক্ষ জনবল তৈরিতে শিক্ষার্থীদের জন্য যা যা করার দরকার, তার সবই করবে ইউআইইউ’র মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ।


সর্বশেষ সংবাদ