ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে ফিরে প্রথমে মা-বাবাকে সালাম করতাম

অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান  © ফাইল ছবি

দীর্ঘ একমাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর সাওয়াল মাসের প্রথম দিনে মুসলমানরা পালন করে ঈদ-উল-ফিতর। ঈদ-উল-ফিতর মুসলমানদের জন্য একটা বড় ধর্মীয় উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তিনি এবারের ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে ঈদ উদযাপনের পরিকল্পনা, ছোটবেলার স্মৃতি, অতীতের ঈদ ও বর্তমানের ঈদের পার্থক্য, ঈদের গুরুত্ব, ঈদের ভিন্ন অর্থ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের প্রতি বার্তা ইত্যাদি নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি রিফাত হক-

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এবারের ঈদ কোথায়, কীভাবে উদযাপন করবেন?
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: এবারের ঈদ-উল-ফিতর ঢাকাতেই করবো। সবাইকে নিয়ে ঈদ করবো। একা একা কখনো ঈদ হয় না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অনেক বড়। আমার সহকর্মী, শিক্ষার্থী উপদেষ্টা, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাইকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ উদযাপন করে থাকি। আর গ্রামের বাড়ির মানুষ-জন, আত্মীয়-স্বজন, যারা তুলনামূলক সুবিধাবঞ্চিত। তাদেরকেও আমি ঈদে সম্পৃক্ত করে থাকি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদের স্মৃতি সকলের মনে পড়ে। সেক্ষেত্রে আপনার ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে কিনা?
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: হ্যাঁ, স্মৃতি তো মনে পড়েই। সকালে ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে এসে মা-বাবাকে প্রথমে সালাম করতাম। বাড়িতে সেমাই ও নানা প্রকার নাস্তার আয়োজন থাকতো। সেগুলো খাওয়ার পর আমাদের বড় দায়িত্ব দেওয়া হত দাদা-দাদী, নানা-নানীর কবর জিয়ারত করা। তাছাড়া আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বাড়ি কাছে ছিল, সেখানে যেতাম। তারপরে আমরা গুরুজনদের সালাম করে আসতাম এবং সেই সুবাধে সেখানে খাওয়া দাওয়া হতো। এই কাজটা আমাদেরকে খুব রিলিজিয়াসলি ও আন্তরিকতার করতে হত। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অতীতের ঈদ আর বর্তমানের ঈদের মধ্যে কোনো পার্থক্য খোঁজে পান কিনা?
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: বর্তমানের ঈদ অনেক জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐশ্বর্যময় হচ্ছে। কিন্তু এখানে আন্তরিকতা অভাব রয়েছে। মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদের বিলাসিতা, বাহারি ধরনের খাবার সেগুলো খুব বেড়েছে। সেই সাথে মানুষে সাথে মানুষের সম্পর্কের দূরত্ব বেড়েছে। মানুষের মধ্যে আবেগ-অনুভূতি জায়গায় সম্পর্কের ঘাটতি চোখে পড়েছে। আগে এরকম ছিল না। তবে গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা হয়তো পুরনো ঐতিহ্যটা ধরে রেখেছে। আগে মানুষেরা খাবার, পোশাক-পরিচ্ছদে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতো। কিন্তু বর্তমানের মানুষের মধ্যে ভোগ-বিলাসিতার মানসিকতা বেড়েছে। আরও দেখতে পাই, শহুরে অনেক মানুষ গ্রামের বাড়ির মানুষের খোঁজ-খবর নেয় না। মানুষ দিনদিন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। এই পার্থক্যগুলো চোখে পড়ার মতো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ আপনার কাছে কী মনে হয়? এটি কী কেবল ধর্মীয় উৎসব বা পারিবারিক মেলবন্ধন? নাকি ভিন্ন কিছু খোঁজে পান?
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও এর বড় একটি বার্তা রয়েছে। বার্তাটি হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ। এটি মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে মানুষের মানবিক সম্পর্ক স্থাপন, সম্প্রীতির জায়গাকে সম্প্রসারণ ঘটানো, একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণ, অন্যের জন্য কোনোকিছু করার মূল্যবোধ তৈরি হওয়া সুযোগ এটি এনে দেয়। এটি ধর্মীয় উৎসব হলেও এর সামাজিক ও মানবিক গুরুত্ব রয়েছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঈদ উপলক্ষ্যে দেশ এবং জাতি, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কী ধরনের বার্তা থাকবে?
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: ঈদের বড় দিক হলো মানুষে সাথে মানুষের সম্পর্ক সুদৃঢ় করা, মানবিক সম্পর্ক স্থাপন, সৌহার্দ ও সম্প্রীতির মাধ্যমে সমাজ বিনির্মাণ। ঈদকে কেন্দ্র করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, প্রান্তিক মানুষদের জন্য কোনো কিছু করা এবং গরীবদের সহযোগিতা করা ইত্যাদি কাজগুলো যখন করতে পারবে, তখন ঈদটা হবে আরও বড় আনন্দের। সেগুলো যেন সবাই আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়া জন্য ধন্যবাদ। 
অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ