‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ স্বীকৃতি ধরে রাখতে নতুন অনুমোদনের প্রয়োজন হবে: ইউনেস্কো

আনন্দ শোভাযাত্রায় ‘ফ্যাসিবাদী মোটিফ’
আনন্দ শোভাযাত্রায় ‘ফ্যাসিবাদী মোটিফ’  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখায় ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ধরে রাখতে নতুন করে আবেদন ও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো।

বিবিসি বাংলার পাঠানো এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটি জানায়, অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রকৃতি এবং এর গতিশীলতাকে বিবেচনায় রেখে নাম পরিবর্তনের জন্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। এ জন্য ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ কমিটি’র অনুমোদন লাগবে, যা ২৪টি দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত।

এর আগে, গত ১১ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাংলা নববর্ষের অন্যতম ঐতিহ্য ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে 'বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা' করার সিদ্ধান্ত জানায়। এই সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। কেউ কেউ নাম পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি দিলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করেন।

২০১৬ সালে 'মঙ্গল শোভাযাত্রা অন পহেলা বৈশাখ' শিরোনামে এই আয়োজন ইউনেস্কোর অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। ফলে নাম পরিবর্তনের পর স্বীকৃতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে ইউনেস্কোকে ই-মেইল করা হলে সংস্থাটি জানায়, এখন পর্যন্ত নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা পড়েনি। তবে নতুন নাম ধরে রাখতে হলে আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে হবে এবং কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।

ইউনেস্কো আরও জানিয়েছে, তাদের সনদে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রকৃতি ও গতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং নৈতিক নীতিমালার প্রতি অনুগত থাকার কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায় ও অংশীজনদের যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি, সম্ভাব্য ও নির্দিষ্ট প্রভাব সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও বার্তায় উল্লেখ করা হয়। তবে বাংলাদেশের মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ইউনেস্কোর নীতির পক্ষে না বিপক্ষে, এ বিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। পরের বছর থেকে এটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পর এই শোভাযাত্রা আরও জনপ্রিয়তা পায়, যদিও সময় সময় বিতর্কও সৃষ্টি হয়।

বিশেষ করে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো বরাবরই মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে দাবি করে আপত্তি জানিয়ে আসছে। প্রতিবছরই পহেলা বৈশাখের আগে এই বিতর্ক সামনে আসে। এবারও 'মঙ্গল' শব্দ নিয়ে আপত্তির মুখে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে ১১ এপ্রিল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম নাম পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন, বাইরের কোনো চাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তিনি জানান, অতীতে ‘মঙ্গল’ শব্দটি নিয়ে বিতর্ক কম ছিল না। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় ‘মঙ্গল’ শব্দের ব্যবহার নেতিবাচক চর্চার জন্ম দিয়েছিল। তাই সাংস্কৃতিক চেতনায় ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যেই নতুন নামকরণ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence