শতভাগ বই মেলেনি— কারো মুখে হাসি, কারো মুখ মলিন

বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীদের একাংশ
বই পেয়ে খুশি শিক্ষার্থীদের একাংশ  © টিডিসি ছবি

ফেনীতে প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শতভাগ বই বিতরণ সম্পন্ন হলেও চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই এখনও পুরোপুরি আসেনি। অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে বই সংকটের কারণে এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আজ বুধবার (১ জানুয়ারি) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বছরের বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়। তখন বই সংকটের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই ফিরে যেতে হয়েছে মলিন মুখে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ফেনীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মোট ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৫৭৬টি বই বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় শতভাগ বই এসেছে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির চাহিদার এখনও ৩ লাখ ১৬১টি বই আসেনি। 

এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শতভাগ বই এসেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইও দ্রুত চলে আসবে। গতবছরের মতো এবার বই বিতরণ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। শিক্ষার্থীরা সরাসরি নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে বই সংগ্রহ করছে।

অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে বই পায়নি শিক্ষার্থীরা। জেলা শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্যমতে, ফেনীতে মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা পর্যায়ে মোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৮৭৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৬টি বই প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৭ হাজার ৪০০টি বই এসেছে, যা চাহিদার মাত্র ১ দশমিক ২৬ শতাংশ।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, ফেনীর সদর উপজেলায় নবম শ্রেণির তিনটি বিষয়ে ৩৪ হাজার ৫০০টি বই এবং দাখিল পর্যায়ে সপ্তম শ্রেণির জন্য ১২ হাজার ৯০০টি বই সরবরাহ করা হয়েছে। সোনাগাজী উপজেলায় নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ও গণিত বিষয়ের ২৫ হাজার ৮০০টি বই এবং দাখিলের বাংলা, গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ৮ হাজার ৪০০টি বই সরবরাহ করা হয়েছে।

এদিকে সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পেয়ে আনন্দিত হলেও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বই না পেয়ে অনেকেই ফিরেছেন হতাশ হয়ে। 

ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই নিতে এসে হতাশ সামিয়া আফরোজ। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে সে জানায়, নবম শ্রেণির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণিতে উঠেছে। তবে নতুন বছরে আগের কারিকুলামে ফিরতে হচ্ছে। মাত্র এক বছরের প্রস্তুতিতে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে, কিন্তু বছরের শুরুতেই বই হাতে পায়নি এখনও।

জয়নাল আবেদীন নামের এক অভিভাবক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেয়ে নতুন কারিকুলামে নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা দিয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার বছরের মাথায় আবার এটি বাদ হয়ে আগের কারিকুলাম শুরু হচ্ছে। যেখানে মাত্র এক বছর পড়েই এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তারমধ্যে বছরের শুরুতে বই পাচ্ছে না। সবমিলিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি।

এদিকে, বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তবে অন্যদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শতভাগ বই না পেয়ে মলিন মুখে ফিরছেন শিক্ষার্থীরা।

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা আড়কাইম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া সন্তানের জন্য বই নিতে এসেছিলেন সারমিন আক্তার। নতুন বই হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বলেন, বছরের প্রথম দিনে নতুন বই নিয়ে সবার মধ্যে বাড়তি আনন্দ কাজ করে। ছেলের সঙ্গে এসে বিদ্যালয় থেকে সব বিষয়ের নতুন বই নিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের নতুন বইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে। তবে সরকার পতনের পর আগের কারিকুলামে ফিরে আসায়, বই সরবরাহে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসমুখী হতে চাইবে না, যা আমাদের জন্য কিছুটা অসুবিধার কারণ হতে পারে। তবে, আশা করি সরকার সকল প্রতিষ্ঠানে অতিদ্রুত বই সরবরাহ নিশ্চিত করবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রতিবছর ১ তারিখে বই উৎসব হলেও এ বছর আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসব হচ্ছে না। বইয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ফেনী সদর ও সোনাগাজী উপজেলায় কিছু বই এসেছে। তবে, জেলায় চাহিদার অনুযায়ী বই আসতে আরও প্রায় দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ