পাঠ্যবই সংশোধন কমিটিতে নেই শিক্ষা-গবেষণার কোনো বিশেষজ্ঞ

পাঠ্যবই সংশোধন কমিটির সদস্যরা
পাঠ্যবই সংশোধন কমিটির সদস্যরা  © ফাইল ছবি

পাঠ্যবই পরিমার্জনে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটিতে রাখা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে সক্রিয় কর্মী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে। তবে এতে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের স্থান হয়নি। জায়গা হয়নি মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত শিক্ষকদেরও, যা নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলছে শিক্ষা পরিবারে।

অ্যাডমিন ক্যাডারে কর্মরত তিনজন, শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত এনসিটিবির তিনজন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করা এক আন্দোলনকারীর সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঠপুস্তকে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলন, পাণ্ডুলিপি সংশোধন, পাণ্ডুলিপিকে প্রকাশযোগ্য ও মানসম্পন্ন করা, পাঠ্যবইকে সামাজিক, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ যথাযথ আছে কী না তা যাচাই, শিখন-শেখান কৌশলের সঙ্গে পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত টাস্ক, এক্টিভিটি সামঞ্জস্যতা পর্যবেক্ষণ ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সমন্বয় করবে এ কমিটি।

অ্যাডমিন ক্যাডারে কর্মরত তিনজন, শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত এনসিটিবির তিনজন সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক ও নতুন শিক্ষাক্রমের বিরোধিতা করা এক আন্দোলনকারীর সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে ১০ সদস্যের সমন্বয় কমিটি গঠন

পাঠ্যবই সংশোধন কমিটির আহ্বায়কের পদে আছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম। কমিটির সদস্য পদে আছেন নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, এনসিটিবি শিক্ষাক্রমের সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী এবং এনসিটিবি প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটিতে শিক্ষা গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্তদের অন্তর্ভুক্তি যাথার্থ হতো। টিচিং লার্নিংয়ের সমন্বয়, পাঠ্যক্রমের ক্রমানুপাতিক পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবইকে গ্রহণযোগ্য করার কাজ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব না আমার কাছে বোধগম্য নয়। 

এ কমিটি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটিতে শিক্ষা গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্তদের অন্তর্ভুক্তি যাথার্থ হতো। টিচিং লার্নিংয়ের সমন্বয়, পাঠ্যক্রমের ক্রমানুপাতিক পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠ্যবইকে গ্রহণযোগ্য করার কাজ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব না আমার কাছে বোধগম্য নয়। 

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, টিচার ইস দ্যা বেস্ট কারিকুলাম। কিন্তু এ কমিটিতে শিক্ষকদের স্থান হয়নি। বাংলা বিভাগের যে শিক্ষক এতে আছেন, তিনি হয়তো পাঠ্যবইয়ের ভাষাগত বিষয়টুকু দেখবেন। কিন্তু আমলারা বা বিষয়ভিত্তিক অধ্যাপকরা পাঠ্যবইতে জ্ঞানের ক্রমানুপাতিক বিস্তার কীভাবে করবেন তা জানি না। 

শিক্ষা গবেষক ও বিভিন্ন সময় পাঠ্যপুস্তকে সম্পৃক্ত থাকা হাসান আল জুবায়ের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক হুট করে পরিবর্তন করা যায় না। এখানে পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে হয় ক্রমানুপাতিক। শিক্ষার্থীদের পাল্স  বুঝে পরিবর্তনগুলো আনতে হয়। প্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যবইয়ের কি বুঝবে তা জানি না। তবে পাঠ্যবই সংশোধনে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা জরুরি। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কলেজ শিক্ষক হলেও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। তাদের নিজের বিষয়ের জ্ঞান থাকতে পারে। তবে পাঠ্যপুস্তুকে শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্যের প্রতিফলন, মানসম্মত করা বা টিচিং লার্নিংয়ের সমন্বয়ের কাজটি শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের। 

শিক্ষা গবেষক ও বিভিন্ন সময় পাঠ্যপুস্তকে সম্পৃক্ত থাকা হাসান আল জুবায়ের দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক হুট করে পরিবর্তন করা যায় না। এখানে পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে হয় ক্রমানুপাতিক। শিক্ষার্থীদের পাল্স বুঝে পরিবর্তনগুলো আনতে হয়। প্রশাসন ও শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যবইয়ের কি বুঝবে তা জানি না। তবে পাঠ্যবই সংশোধনে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা জরুরি।

তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কলেজ শিক্ষক হলেও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। তাদের নিজের বিষয়ের জ্ঞান থাকতে পারে। তবে পাঠ্যপুস্তুকে শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্যের প্রতিফলন, মানসম্মত করা বা টিচিং লার্নিংয়ের সমন্বয়ের কাজটি শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের। 

আরও পড়ুন : পাঠ্যবইয়ে থাকছে বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, বাদ যাচ্ছে হাসিনার গুণগান

এ বিষয়ে পাঠ্যবই সংশোধন কমিটির আহবায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। 

তবে কমিটির সদস্য ও এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কমিটি করা হয়েছে পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কাজটি সমন্বয়ের জন্য। পাঠ্যবই সংশোধনের মূলকাজ শিক্ষক ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরাই করবেন। তাই এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। 


সর্বশেষ সংবাদ