‘হাওয়া’ পরিচালক কে এই মেজবাউর রহমান সুমন?
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২, ০৬:৫৪ PM , আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২২, ০১:১৫ PM
‘হাওয়া’য় মেতে উঠেছে বাংলাদেশের সিনেমা প্রাঙ্গণ। অনন্য নির্মাণ শৈলী, চমৎকার অভিনয় আর ভিন্ন ধারার গল্পের কারণে প্রশংসায় ভাসছে হাওয়া। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’য় ভেসে বেড়াচ্ছে এখন সবাই। প্রায় ১০ বছর পরে সুমনের তৈরী ‘হাওয়া’ বাংলা সিনেমার পালে হাওয়া লাগিয়েছে। কিন্তু কে এই মেজবাউর রহমান সুমন?
হাওয়া সিনেমার প্রতিটা ডিপার্টমেন্ট দেখে দর্শক মুগ্ধ বলে জানিয়েছেন। তবে সেই মুগ্ধতার জন্য অবশ্যই সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ প্রাপ্য পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের। কিন্তু এত প্রশংসার পরও আত্মপ্রচারে গা ভাসাননি তিনি। ফেসবুকে একটা আইডি খুলতে হবে বলে যেন খোলা, খুব কম সময়ই সেখানে এক্টিভ পাওয়া যায় সুমনকে। তাই তাকে নিয়ে দর্শকদের আগ্রহও অনেকটা।
মেজবাউর রহমান সুমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক শেষ করেন। সিনেমা বানানোর জন্য তিনি ছেড়ে দেন অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার। ২০১২ সালে নাটক থেকে বিরতি নিয়ে একটানা বিজ্ঞাপন বানানোর কাজ করেছেন মেজবাউর রহমান সুমন। তার নির্মিত প্রায় সবগুলো বিজ্ঞাপনই দর্শকদের মন কেড়ে নিয়েছিলো। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর ওপর বিজ্ঞাপনচিত্রটি বেশ সাড়া ফেলেছিলো। এমনকি ‘অসম্ভব কে সম্ভব করাই, অনন্ত জলিলের কাজ’ এ জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনটির নির্মাতাও তিনি।
টিভি ফিকশন, বিজ্ঞাপন নিয়মিত বানালেও সিনেমার বানানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন সুমন। বেশ কয়েকবার ব্যার্থও হয়েছেন। তারপর ২০১৭ সালে স্ক্রিপ্ট লেখার পর, ২০১৯ সালে আর্টিস্টদের নিয়ে হাওয়া ছবির শুটিং করতে ছুটে যান সমুদ্রে।
আরও পড়ুন: কোরিয়ান ছবি নকলের অভিযোগ, যা বললেন ‘হাওয়া’ পরিচালক
প্রথম যেদিন সুমন তার টিম নিয়ে হোটেল থেকে বোটটা দেখতে যান, সেদিন একটি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে। সুমন সকল আর্টিস্টদের হালকা মেকাপ নিতে বলেন, কস্টিউম পরে নিতে বলেন। সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে একটি সিন রিহার্সাল করতে নিয়ে যান বোটে। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার কামরুল হাসান খসরুও সিনেমাটোগ্রাফির প্র্যাক্টিসটা সেরে নিতে ক্যামেরা চালু করেন। রিহার্সাল শুরু হয়। শরিফুল রাজ আগুন চোখে ডায়লগ দেয়, ‘সমান সমান ভাগ হবে, নাহলে একটা মাছও যাবে না, কইয়া দিলাম’।
সুমন সঙ্গে সঙ্গে সিন কন্টিনিউ করতে বলেন। এটা শুনে সবাই চমকে যায়৷ তিনি বলেন, ‘এটাই সেই সিন, আমি যেটা চাই’। পুরো ইউনিট এগিয়ে আসে। টিম সুমনের কথায় সাহস পায়। আর এভাবেই শুরু হয় হাওয়া ছবির প্রথম দৃশ্যায়নের কাজ।
আজ রিহার্সালের সেই সিন এখন ছবিতে নজর কাড়ছে। একজন নির্মাতার দেখার চোখ কতোটা প্রখর হলে এরকমভাবে শট নিতে পারেন রিহার্সাল করতে গিয়ে। বোটটা দেখতে গিয়ে প্রথমদিনই শুটিং শুরু করতে পারেন। এটা সুমন বলেই হয়তো সম্ভব!
স্ক্রিপ্ট লেখার জন্যে বার বার সমুদ্রে ছুটে গিয়েছিলেন মেজবাউর রহমান সুমন। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন সমুদ্রের জেলেদের জীবন। দিনের পর দিন জেলেদের সঙ্গে মিশেছেন, কথা বলেছেন। তাদের জীবনটাকে অনুভব করেছেন গভীরভাবে। আর সেখানে বসেই স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। স্ক্রিপ্ট লেখালেখির কাজটা অফিসে বসেও সেরে নেওয়া যেতো, কিন্তু সুমন তা চাননি। সমুদ্রে বসে জায়গাটাকে ভালোভাবে অনুভব করার জন্যে সেখানে বসেই লিখেছেন তিনি। তাই আজ— চান মাঝি, নাগু, এজা, উরকেস, পারকেসদের জয়কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
চারুকলার ছাত্র সুমন চারুকলায় পড়া অবস্থাতেই হাশিম মাহমুদ নামের একজনের গান শুনেছিলেন। কে জানতো, তখনই সুমন এই গানকে ঠিক করে রেখেছিলেন নিজের প্রথম সিনেমার জন্য?! এমন এক গান, যে গানের সাথে একাত্ম হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ। নিম্নবিত্ত হোক বা উচ্চবিত্ত- সবার মুখেই সাদা সাদা, কালা কালা। হাশিম মাহমুদের মত শিল্পী কিংবা শিবলুর মতো গায়ককে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেয়া মানুষটার নামও সুমন! অথচ এরপরেও তিনি যেন থেকেও নেই।
প্রচারনার জন্য হাওয়া সিনেমার পুরো টিম একেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়, সেখানে সবচেয়ে কম কথা বলা মানুষটার নাম সুমন। এমনভাবে লুকিয়ে থাকেন, যেন কেউ জানতেই না পারে সিনেমাটি তিনি বানিয়েছেন। সিনেমা রিলিজের দিন চঞ্চল চৌধুরী সাংবাদিকদের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ আর প্রশ্নের তীব্রতা সামলাচ্ছেন, সেখানেও সুমন নেই। একেকজনের এত এত বাহারি রকমের মন্তব্য, তাতেও সুমন নির্বিকার। খুব বেশি হলে একটু মুচকি হাসি, বা ফেসবুকে একটা লাইক বা লাভ দেয়া। তার যেন কাজ করাতেই আনন্দ, নিজের প্রথম সিনেমাটা নিজের মত বানিয়েই তিনি যেন সুখী।
অনেকেই বলেন, লোভ সামলাতে পারার অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে মেজবাউর রহমান সুমনের। শুধুমাত্র প্রচারের লোভ সামলাতে পারা না, সিনেমা তৈরীর ক্ষেত্রেও। তাড়াহুড়ো না করে অনেক সময় নিয়েই নিজের প্রথম সিনেমাটি বানিয়েছেন তিনি, প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চ সজাগ দৃষ্টি রেখেছেন।