এবার মানারাত স্কুল পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের গুঞ্জন

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ  © সম্পাদিত

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পর এবার গুঞ্জন পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তনের। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। আগামীকাল বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিএমপি, সচিবালয়, শিক্ষাবোর্ড, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 

এর আগে গত বছর সরকার অনুরূপ একটি সভা ডেকে নানা অভিযোগে মানারাত ট্রাস্ট্রের অধীনে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকরা বলছেন, যেহেতু প্রতিষ্ঠান পরিচালনার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সভা, ফলে সভায় নতুন করে সিদ্ধান্ত আসবে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার বিষয়ে। একই সাথে তাদের আশঙ্কা, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তনের মতো করে সরকার মনোনীত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিয়ে আসতে পারে নতুন পরিচালনা পর্ষদও।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা

তারা আরও বলছেন, এতে সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে ইংরেজি মাধ্যমের এ প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপের অভিযোগ করে প্রতিষ্ঠানটির সামনে গত রবিবার মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

মানববন্ধনে থাকা কুলসুম বেগম নামের এক অভিভাবক জানিয়েছেন, মানারাত ট্রাস্টি বোর্ড যারা আছেন তারা দেশের সর্বোত্তম ভালো মানুষ। সেখানে সরকারের সাবেক সচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয় গণ্যমান্য শিক্ষকবৃন্দ আছেন। তারা তাদের জীবনে ন্যূনতম দুর্নীতির সাথে আপোষ করেননি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে কখনোই অনিয়মের কোন অভিযোগ আমরা দেখিনি। তাই প্রতিষ্ঠান পরিচালনার লক্ষ্যে তাদের বাদ দিয়ে যে মিটিং হচ্ছে আমরা মনে করি এটা ঠিক হয়নি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তাদেরকে রেখে তাদের সাথে আলোচনা করা উচিত ছিল।

সাবিনা নামের আরেক অভিভাবক জানান, একটার পর একটা ভালো প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হচ্ছে। এর আগে মানারাত বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট দখল করা হয়েছে। সভ্য সমাজে এভাবে ট্রাস্ট দখল চলতে দেয়া যায় না। চলা উচিত না। তাছাড়া এর মাধ্যমে সম্মানিত শিক্ষিত এবং সুশীল সমাজকে অপমানিত করা হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জানানো হয়েছে, রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে আগামীকাল বুধবার একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা, ডিএমপি, সচিবালয়, শিক্ষাবোর্ড, জেলা প্রশাসক, সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়-১ শাখার উপসচিব মো. মিজানুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন ও নতুন করে পরিচালনার বিষয়ে কোনো পরিবর্তন আসছে কিনা—সে বিষয়ে স্পষ্ট করে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আগামীকালের বৈঠকের পর এ বিষয়ে জানা যাবে। 

তিনি বলেন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে আদালতে একটি মামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। আদালত থেকে এ নিয়ে আদেশ আসলে আমরা তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবো। আমাদের কাছে এখনও আদালত থেকে কোনো আদেশ বা সিদ্ধান্ত আসেনি।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, সভার বিষয়ে একটি চিঠি পেয়েছি। তবে আমার কাছে এ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। আগামীকালের সভার পর এ বিষয়ে জানা যাবে বলে তিনি জানান।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞার এই সভায় থাকার কথা রয়েছে। তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল (দিবা শাখা) অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান আকন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এরকম কোনো চিঠির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি বা আমার প্রতিষ্ঠান এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি পায়নি। তবে, সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সে সিদ্ধান্ত মানা ব্যতীত তাদের কিছুই করার থাকবে না বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান আকন্দ।

প্রসঙ্গত, মানারাত ট্রাস্ট নামক একটি দাতব্য সংস্থা মানারাত ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা করে আসছে ১৯৭৯ সাল থেকে। এরপর একই ট্রাস্ট ১৯৯৫ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং এ লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। ২০০১ সালে ট্রাস্টটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারি অনুমোদন লাভ করে এবং একই বছর বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

ওই বছরের ২৮ মে ঢাকার গুলশানে ৭৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পাঠ দান কার্যক্রম শুরু করেছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের একাধিক সদস্য জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে গুঞ্জন ছিল শিক্ষা প্রশাসন ও সরকারদের। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।


সর্বশেষ সংবাদ