টাইমলাইন: শাবিপ্রবিতে যা ঘটছে

শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আন্দোলন
শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে আন্দোলন  © টিডিসি ফটো

১৩ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) আন্দোলনের সূত্রপাত। এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীরা রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রভোস্ট জাফরিন লিজার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বাসভবন চত্বরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

১৪ জানুয়ারি, শুক্রবার

উপাচার্যের সঙ্গে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হওয়া প্রায় ঘন্টাব্যাপী বৈঠক শেষে তা ফলপ্রসূ হয়নি জানিয়ে কর্মসূচি চলমান রাখেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বিকাল ৪টার দিকে তারা নতুন প্রভোস্ট নিয়োগের জন্য শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে উপাচার্য জানান, সিরাজুন্নেসা হলের সহকারী প্রভোস্ট যোবাইদা কনক খানকে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

১৫ জানুয়ারি, শনিবার

বিকেল সাড়ে ৫টার দিক থেকে, প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ অন্য দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় গোলচত্বরসংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়। এই হামলায় ১০-১২ জন শিক্ষার্থী আহত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আলমগীর কবীরের উপস্থিতিতে গোলচত্বরের পাশে কিলো রোডে ছাত্রলীগ এই হামলা করে বলে অভিযোগ করা হয়।

১৬ জানুয়ারি, রবিবার

সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরসংলগ্ন প্রধান সড়ক অবরোধ করে সকল ধরনের গাড়ি প্রবেশে বাধা দেন।

বিকেলের দিকে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে গেলে সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যকে মুক্ত করতে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ সেখানে গেলে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ২১টি সাউন্ড গ্রেনেড ও ২৭ রাউন্ড শটগানের বুলেট ব্যবহার করে।

আন্দোলনের মুখে প্রভোস্ট জাফরিন লিজা পদত্যাগ করলে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজিয়া চৌধুরীকে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়।

রাতে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের।

১৭ জানুয়ারি, সোমবার

উপাচার্যের কার্যালয় ও সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিকেলে তার বাসভবন ঘেরাও করে কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

আগের দিনের সংঘর্ষের ঘটনায়, আহত সকলের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে বলে জানানো হয়। একই ঘটনায় জালালাবাদ থানা পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে।

১৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার

শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা না হলে, কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তারা।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও ক্লিপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রীদের নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে শোনা যায় শাবিপ্রবির উপাচার্যকে। এমন মন্তব্যের ফলে অনেক ছাত্রীরই উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন কোনো কোনো শিক্ষক।

১৯ জানুয়ারি, বুধবার

বিকেল ৩টায় উপাচার্যের পদত্যাগ ও পুলিশের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

২০ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার

অনশনরত শিক্ষার্থীদের একজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। উপাচার্যের ফাঁস হওয়া আপত্তিকর মন্তব্য ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রত্যাহার দাবি করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ঢাকা জজ আদালতের এক আইনজীবী। তিনি উপাচার্যকে আইনি নোটিশ পাঠান। এছাড়া শাবিপ্রবির উপাচার্যের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

২১ জানুয়ারি, শুক্রবার

দুপুর ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি শিক্ষার্থীদের ঢাকায় গিয়ে আলোচনার আহ্বান জানালে, শিক্ষার্থীরা ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করার প্রস্তাব দেন। দীপু মনি বলেন, “সব সমস্যারই একটা সমাধান আছে। এই সমস্যারও নিশচয়ই সমাধান আছে। তবে আলোচনার মাধ্যমেই সেই সমাধান খুঁজে বের করতে হবে শিক্ষার্থীদের ৪-৫ জন যদি আসেন, শিক্ষক সমিতির নেতারা যদি আসেন, তবে আমরা আলাপ করে একটা সমাধানে পৌঁছতেও পারব।”

ক্যাম্পাসের দেয়ালে “নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: ভিসি পদ ফাঁকা আছে” লিখে দেন আন্দোলনকারীরা। অনশনের তৃতীয় দিনে ১২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

২২ জানুয়ারি, শনিবার

সন্ধ্যায় মন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে শাবিপ্রবির শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও আলোচনা চলমান থাকবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি আবারও শিক্ষার্থীদের তার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য আহ্বান জানান। এসময় তিনি বলেন,শিক্ষক বা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনভিপ্রেত কিছু আমরা কামনা করি না। গত কয়েক দিন যা ঘটেছে তা আমরা চাইনি। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কারো ইন্ধন আছে কিনা, ব্যাপকতার ডাইমেনশন আছে কি না সেটা বুঝতে পারছি না।

দিনশেষে প্রায় মধ্যরাতের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, শিক্ষামন্ত্রী তাদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবেন।

২৩ জানুয়ারি, রবিবার

শনিবার ‍দিবাগত রাত ১টার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনের একটি কক্ষে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক শুরু হয় শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ জন শিক্ষার্থী দাবি আদায়ে গত বুধবার বেলা ৩টার দিকে যে অনশন শুরু করেছিলেন তাদের মধ্যে ২৩ জন এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন।রবিবার সকাল ১০টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনরত ২৩ শিক্ষার্থীর সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছেন আরও ৪ জন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৬ জন।

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শাবিপ্রবিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।

২৪ জানুয়ারি, সোমবার

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অষ্টম দিন চলছে আজ সোমবার। দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আন্দোলনকারীরা বহিরাগত এবং আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন আছে বলে যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা মিথ্যা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নাকচ করে প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ প্রবেশদ্বারগুলোতে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সংবাদকর্মী ছাড়া বহিরাগত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পরিচয় যাচাই করে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে।

এদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকী অনশনে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।  অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আজ বেলা ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অনশনে বসেন তারা।

জাবির ছাত্রীদের নিয়ে অশোভন মন্তব্যের জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন’ উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামকে ফোন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।


সর্বশেষ সংবাদ