করোনা সংকট

১০ লাখ শিক্ষকের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই

  © ফাইল ফটো

করোনাকালে দেশের বেশিরভাগ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঈদ বােনাস দূরের কথা, বেতন-ভাতাও দেয়া হয়নি তাদেরকে। তবে কেউ কেউ মার্চ মাসের আংশিক বেতন-ভাতা পেয়েছেন। সব মিলে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে গেছে।

জানা গেছে, দেশে বেসরকারি ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৬০ হাজারের মতাে। এগুলাের মধ্যে ৪০ হাজারই কিন্ডারগার্টেন (কেজি) স্কুল। এছাড়া আছে ২ হাজার বিভিন্ন রকম আধা-এমপিও, বেসরকারি স্কুল, নন এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা প্রায় সাড়ে ৮ হাজার, পলিটেকনিকসহ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পৌনে ১০, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৯৬টি।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেজি স্কুলগুলােতে ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। কারিগরি প্রতিষ্ঠানে জনবল আছে প্রায় আড়াই লাখ। বেসরকারি নন-এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আছে প্রায় ৯০ হাজার। আর ৯৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ২৯ হাজার। এছাড়া শতাধিক ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে দেশে, যেখানে আরও কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী আছেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সব মিলে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে গেছে।

কেজি স্কুলগুলাের শিক্ষকেরা বলেছেন, গত মার্চ মাসে কোনাে কোনাে প্রতিষ্ঠান পুরাে বেতন দিয়েছে। বেশির ভাগ দিয়েছে আংশিক বেতন। কিছু প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা দেয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠানগুলাে সবই ভাড়াবাড়িতে চলে। ওই ভাড়া এবং শিক্ষকের বেতনের সংস্থান হয় টিউশন ফি থেকে। মার্চ মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা শিক্ষার্থীদের কাছ মিলে থেকে টিউশন ফি আদায় করতে পারেননি। তাই শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেয়া দূরের কথা, বাড়ি ভাড়াও দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

এজন্যই উল্লিখিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব স্কুলের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা চাওয়া হয়েছে বলে জানান কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান। তিনি আরো বলেন, ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা দেয় নেইনি। বাকি ১০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিছু অংশ দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, সরকার জনগণকে আড়াই হাজার কোটি টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় দ্বৈত মোবাইল নাম্বার থাকায় ৮ লাখ বাতিল হয়েছে। ওই ৮ লাখও যদি শিক্ষক-কর্মচারীদের দেয়া হতো তাহলে তাদের ঈদ ভালো কাটতো।

জানা গেছে, আধা এমপিও, বেসরকারি ও প্রাইভেট ২ হাজার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের আংশিক বেতন দেয়া হয়েছে। বেশিরভাগ এপ্রিল বেতন দেয়নি। আবার কোন প্রতিষ্ঠান এপ্রিলের আংশিক বা পুরো বেতন দিয়েছে। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজ একটি। প্রতিষ্ঠানটি এপ্রিলের পুরো বেতন দিয়েছে বলে জানা গেছে। কিন্তু কোন বোনাস দিতে পারেনি।

এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরো আছে ক্যামব্রিয়ান, ট্রাস্ট, ন্যাশনাল আইডিয়াল। আধা এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রাইভেটগুলোর শিক্ষকদের অবস্থা বেশি করুন। আধা এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেতন-বোনাস সংস্থান করছে বলে জানা গেছে।

তবে মফস্বলের বেসরকারি ও নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ঠিকমতো বেতন-বোনাস পাননি। এমনকি অধিকাংশ শতভাগ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী সরকারি খাতের এমপিও এবং ২৫ শতাংশ বোনাস পেয়েছেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেন, সাড়ে ৮ হাজার ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষক আগে থেকেই অনেকটা অবৈতনিক খাটছেন। করোনাকাল শুরু পর তারা বেতন পাচ্ছেন না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সরকার ২৫ শতাংশ বোনাস দেন। বিাকিটা স্কুল থেকে নিয়ে আমরা পুষিয়ে নিতাম। আয় বন্ধ থাকায় এবার সেটাও পাননি বেশিরভাগ শিক্ষক। সব মিলে এমপিওভুক্ত, নন-এমপিও এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ঘরে এবার ঈদ আনন্দ নেই। এই শিক্ষক নেতা জানান, এই দুরাবস্থার কথা জানিয়ে আমরা হোয়াটসঅ্যাপে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ইতিবাচক কোনো সাড়া পায়নি।

জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। রাজধানীর বনানী এলাকায় অবস্থিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, তাদেরকে বোনাস দেয়া হয়নি। এপ্রিলের বেতন দেয়া হয়েছে ৩০-৩৫ শতাংশ।

আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী বলেন, তাদেরকে এপ্রিলের কোনাে বেতন দেয়া হয়নি। মার্চের বেতন দিয়েছে আংশিক। বােনাস সেখানে কল্পনাই করা যায় না। তবে বড় ইংরেজিমাধ্যম স্কুল, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলাে ঠিকমতাে বেতন-ভাতা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পরিচালক ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেতন-ভাতা দেয়নি বা দিচ্ছে না- এমন অভিযােগ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ই-মেইলে আমাদেরকে জানানাে হচ্ছে। কিন্তু আইনে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার কোনাে সুযােগ নেই। তার মতে, রাজধানীতে অবস্থিত যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ২ হাজারের উপরে এবং মফস্বলে ১ হাজার সেসব বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে সচ্ছল। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-জনবলের বেতনভাতা দেয়ার ব্যাপারে কোনাে সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। শিক্ষার্থীরা এখন অর্থ জমা দিতে পারছে না। কিন্তু তারা অর্থ না দিয়ে কেউ সনদ নিতে পারবে না। তা হল সাময়িক আয় বন্ধের ইস্যুকে সামনে এনে এর প্রভাব বেতনের ওপর পড়ে থাকলে সেটা দুঃখজনক।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence