নাইকোর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়, ক্ষতিপূরণ মিলবে ৮ হাজার কোটি টাকা

  © সংগৃহীত

সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যাওয়ার জন্য দায়ী কানাডার বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নাইকো। ওই বিস্ফোরণে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পরিবেশ ও স্বাস্থ্যেরও বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।

এ জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে অন্তত আট হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে বাংলাদেশকে দিতে হবে তাদের। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটস’র (ইকসিড) ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। আজ রোববার এক অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে এমন তথ্য জানায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ১০ বছর আইনি লড়াইয়ের পর বাংলাদেশের পক্ষে রায় এসেছে। এতে প্রমাণ হয়েছে নাইকোর গাফলতি ছিল। তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এতে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা গেছে বাংলাদেশে যা ইচ্ছা তাই করা যাবে না।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়, তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়। রায়ে বলেছে, নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে। বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে সেপ্টেম্বরে শুনানি হওয়ার কথা  থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা পেছাতে পারে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এই রায় প্রদান করে। মার্চের শুরুর দিকে এটি জানানোর পরিকল্পনা থাকলেও করোনার সংক্রমণে তা বাতিল করা হয়। পেট্রোবাংলা ও বাপেক্স সূত্র জানিয়েছে, ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কারণে দেশের অন্তত এক হাজার ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে।

পাশাপাশি পরিবেশ, প্রতিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে একটি বহুজাতিক কোম্পানি কাজ করছে। এদিকে আগের গ্যাস বিক্রির বিল বাবদ নাইকোর ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে পেট্রোবাংলার কাছে।

ইকসিডে এ বিষয়ে পৃথক মামলা করেছে নাইকো। তবে বাংলাদেশ সেই দেনা অস্বীকার করেনি। বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ সাপেক্ষে তা পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশে নাইকোর একমাত্র সম্পদ ব্লক-৯ এর গ্যাসের অংশীদারিত্ব। এর মূল্য ২৮০ ডলারের মত।

সেই হিসেবে গ্যাসের অপচয় বাবদ যে ক্ষতি হয়েছে তা থেকে গ্যাসের বকেয়া বিল ও ব্লক-৯ এর মূল্য বাদ দিলেও ৭০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি পাবে বাংলাদেশ। সঙ্গে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতিপূরণ যুক্ত হবে।

রায়ে ক্ষতি ও নাইকোর দায় উল্লেখ করা হলেও কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। পরবর্তী রায়ে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ জানানো হবে। তবে নাইকো ইতোমধ্যে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সে হিসেবে তারা কীভাবে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করবে তা আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জ্বালানি বিভাগ জানায়, আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পরিবেশগত ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে অপেক্ষা করতে হবে। এরপর তা ইকসিডে জানানো হবে। সবমিলিয়ে নাইকো থেকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে দেড় বছর সময় লাগবে।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, ২০০৩ সালে বিএনপির সময়ে ছাতক গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের কাজ পায়। একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে প্রান্তিক দেখিয়ে তারা নাইকোকে কাজ দেয়। এতে বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কথা উল্লেখ করে দুদক মামলা করেছে। মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।

গ্যাসকূপ খনন করার সময় ২০০৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর আবার চেষ্টা করতে গেলে ফের বিস্ফোরণ ঘটে। এতে খনিটিতে থাকা গ্যাসের অনেকাংশ পুড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এখনও ছাতকে গ্যাস উদগীরণ ঘটছে। এতে স্থানীয়রা নানা ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন।


সর্বশেষ সংবাদ