বদলি চালুর সুফল পাবেন না বেশির ভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষক

এমপিভুক্ত শিক্ষক ও মাউশি
এমপিভুক্ত শিক্ষক ও মাউশি  © সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এমপিভুক্ত শিক্ষকদের বদলি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে প্রথমবারের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে এমপিও শিক্ষকদের বদলি চালুর আশ্বাস দিলেও, ১৪ বছর পর ২০২৪ সালে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

যদিও নীতিমালায় শুধু পারস্পরিক বদলির সুযোগ দেওয়ায় বেশির ভাগ শিক্ষকই এ সুযোগ পাবেন না বলে মনে করছেন।

গত ১ আগস্ট  বেসরকারি এমপিওভুক্ত (সরকার থেকে বেতনের মূল অংশ পাওয়া) শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) বিভাগ। এতে বেসরকারি স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, শুধু সমপদে কর্মরত দুজন শিক্ষকের লিখিত সম্মতিপত্রসহ পারস্পারিক বদলির আবেদন বিবেচনা করা হবে। চাকরির আবেদনে উল্লিখিত নিজ জেলা ছাড়া অন্য জেলায় বদলির জন্য আবেদন করা যাবে না। তবে নারী আবেদনকারীরা স্বামীর জেলায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকের চাকরি দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির আবেদন করা যাবে। অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্যসংবলিত আবেদন বিবেচনাযোগ্য হবে না এবং চাকরিজীবনে কেবল একবারই বদলির সুযোগ থাকবে। প্রতিবছরের ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিক্ষকদের অনলাইনে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলির আবেদন করতে বলা হয়েছে নীতিমালায়। আগামী অক্টোবরের মাঝামাঝি এই নীতিমালা অনুসারে প্রথমবারের মতো এমপিও শিক্ষকদের বদলির আবেদন গ্রহণ করা হবে।

ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন গ্রহণে সফটওয়্যার প্রস্তুতের প্রক্রিয়া শুরু করেছে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে অধিদপ্তরের বেসরকারি মাধ্যমিক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক জিয়াউল হায়দার হেনরী মঙ্গলবার দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন গ্রহণে একটি সফটওয়্যার প্রস্তুতে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। আমরা অধিদপ্তরের ইএমআইএস সেলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

এদিকে প্রথমবারের মতো বদলির আবেদন গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর প্রস্তুতি চললেও বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের হতাশা কাটেনি। তারা বলছেন, শুধু পারস্পরিক বদলি সুযোগ দেওয়ায় বেশির ভাগ বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক এই সুফল পাবেন না।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার টি আলী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শান্ত আলী নিজ জেলা দিনাজপুরে বদলি হয়ে যেতে চান। তবে সে সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে এই শিক্ষক বলেন, দিনাজপুর উপজেলায় এমন কোনো শিক্ষক পাচ্ছি না, যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলে আসতে চান। শুধু দিনাজপুর নয়, পুরো রংপুর বিভাগেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বদলি হয়ে আসতে চাওয়া কোনো শিক্ষকের সন্ধান পাইনি। তাই আবেদন শুরু হলেও বদলির আশা আশাই থেকে যাবে।

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার রেদওয়ান আহমেদ কলেজের প্রভাষক মো. আবু হানিফ নিজ জেলা মাগুরায় বদলি হয়ে যেতে চান। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পারস্পরিক বদলির জন্য প্রার্থী না পাওয়ায় বদলির সুযোগ পাব না। এত দূর অন্য কালচারের জেলায় মানিয়ে নেওয়া কঠিন। আশা ছিল বদলি হয়ে নিজ জেলায় যাবো। কিন্তু সে সুযোগ নেই। শূন্য পদের বিপরীতে বদলির সুযোগ দিলে আমরা বদলির সুযোগ পেতাম।

খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার দক্ষিণ টেংগুছড়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মো. মনজুর রহমান বগুড়ায় বদলি হতে চান। তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত স্কুল কলেজে শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দিয়ে নীতিমালা জারি হলেও কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সে সুযোগ দিয়ে নীতিমালা এখনও জারি হয়নি। আবার স্কুল-কলেজের মত পারস্পরিক বদলি সুযোগ দিয়ে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষকদের জন্য নীতিমালা জারি হলেও বদলি হতে পারবো না। কারণ বগুড়া থেকে খাগড়াছড়িতে কোনো শিক্ষক বদলি হয়ে আসতে চাচ্ছেন বলে আমার জানা নেই। তাই শূন্যপদের বিপরীতে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাই।

একই কথা বললেন নোয়াখালীর সদর উপজেলার সোনাপুর কলেজের প্রভাষক মো. নুরুল আমিন। সাতক্ষীরা জেলায় বদলি হয়ে যেতে চাইলেও আগ্রহী শিক্ষক না পাওয়ায় বদলির আবেদন করতে পারবেন না।

বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা বলছেন, তাদের জানামতে কোনো শিক্ষকই তার কাঙ্ক্ষিত জেলায় পারস্পারিক বদলি হওয়ার জন্য আগ্রহী শিক্ষক পাচ্ছেন না। তাই নীতিমালা জারি ও মোটা অংকের টাকা খরচ করে সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হলেও সেটি শিক্ষকদের কোনো কাজে আসবে না। তারা নীতিমালা সংশোধন করে শূন্যপদের বিপরীতে বদলি সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হায়দার হেনরী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মন্ত্রণালয় যে নীতিমালা করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করা ছাড়া আমাদের করার কিছু নেই। তবে মন্ত্রণালয়ে নীতিমালা সংশোধন বা পরিমার্জন করলে এভাবেই আবেদন দেব।

এসব বিষয়ে জানতে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ, মাধ্যমিক-২ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. রবিউল ইসলাম ও যুগ্ম সচিব জহিরুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে অনুবিভাগের উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শুধু পারস্পরিক বদলির সুযোগ দেওয়ায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বদলির আবেদন করতে পারছেন না বলে আমরাও জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে আমাদের একটু বিস্তারিত জানালে আমরা ঊর্ধ্বতন ও কর্তৃপক্ষের সামনে বিষয়টি তুলে ধরব।

২০১০ সালের এমপিও নির্দেশিকায় সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি চালুর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল৷ ওই নীতিমালায় বলা ছিল, সরকার চাইলে নীতিমালা প্রণয়ন করে এমপিভুক্ত শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করতে পারবে। এরপর ২০১৩ সালে জারি হওয়া ওই নির্দেশিকা সংশোধনী, ২০১৮ সালের ও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালাতেও একই কথা বলা ছিল। পরে ২০২৪ সালের ১ আগস্ট এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের পারস্পরিক প্রথম নীতিমালা জারি করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ