নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে মাউশির জরুরি বার্তা

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর  © ফাইল ফটো

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জরুরি বার্তা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ অধিদপ্তর (মাউশি)। বৃহস্পতিবার মাউশির সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বার্তা দেওয়া হয়েছে।

জরুরি বার্তায় বলা হয়েছে, ২০৪১ এর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে স্মার্ট নাগরিক তৈরির বিকল্প নেই। ভবিষ্যতের দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে খাপ খাওয়াতে হলে শুধু মুখস্থ করায় পারদর্শী নাগরিক তৈরী করলে চলবে না। আমাদের এমন নাগরিক দরকার যে পাঠ্য বিষয়বস্তু সক্রিয় শিখনের মাধ্যমে অনুধাবন করে আত্মস্থ করবে, যেন তা পরে প্রয়োজনমতো প্রয়োগও করতে পারে। একইসাথে হাতে কলমে কাজ শিখে দক্ষ নাগরিক হবে। হবে দেশপ্রেমিক কিন্তু বিশ্ব নাগরিক, প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতা করতে পারদর্শী এবং পরিবর্তনের সাথে নিজের যোগ্যতার রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম। নতুন শিক্ষাক্রম তেমন স্মার্ট নাগরিক তৈরির লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।

এই লক্ষ্য নিয়ে ১০ বছরব্যাপী শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। প্রথমেই ২০১৭-১৮ সালে ৬ টি গবেষণা করে, ২০১৯ এ ৮০০ (আটশত) এর অধিক অংশীজনের সাথে মতবিনিময় ও বিভিন্ন দেশের শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা করে রূপরেখার খসড়া তৈরি করা হয়। এরপরে ২০২১ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদনের পরে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় অনুমোদিত হয়। ২০২২ সালে পাইলটিং এর পরে ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে ২০২৭ সালে পুরো শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হবে।

বলা হচ্ছে - পড়াশুনা নেই, পরীক্ষা নেই, শিক্ষার্থীরা কিছু শিখছে না। এটি মিথ্যাচার। মানুষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য এসব বলা হচ্ছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি পড়বে, নিজেরা সক্রিয়ভাবে পড়বে, শিখবে। গ্রুপ ওয়ার্ক করে আবার তা নিজেরাই উপস্থাপন করবে। শুধু জ্ঞান নয়, দক্ষতাও অর্জন করবে। আর মূল্যায়ন হবে প্রতিটি কাজের। আবার ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন এবং বার্ষিক মূল্যায়নও হবে। কাজেই পরীক্ষা ঠিকই থাকছে, কিন্তু পরীক্ষার ভীতি থাকছে না। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং না হওয়াও আছে। শুধু তাই নয়, পারদর্শিতার ৭টি স্কেলে তাদের রিপোর্ট কার্ডও আছে।

অভিভাবকদের একটি উদ্বেগ হচ্ছে - বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ালেখার জন্য তাঁদের সন্তানদের কীভাবে নির্বাচন করা হবে বা চাকুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের সন্তানদের ফলাফলকে কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে। এই শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীরা যখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করবে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন আসবে। চাকুরির ক্ষেত্রেও পারদর্শিতার মূল্যায়নের ভিত্তিতেই নিয়োগ হবে। সেসব কার্যক্রমও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরি করবে। এরা হবে সৎ, মানবিক, সহমর্মী, সৃজনশীল, উৎপাদনক্ষম, উদ্যোগী। এরা শুধু চাকুরি করবে না, নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি করবে।

এই শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা খুশি। সচেতন অভিভাবকরা খুশি; তাঁদের সন্তান আনন্দের সঙ্গে স্কুলে যাচ্ছে, শিখছে। অভিভাবকদের আর কোচিংয়ের, নোট-গাইডের ব্যয়ের বোঝাও বইতে হবে না। তরুণ শিক্ষকরাও খুশি। অখুশি কেবল কোচিংয়ের শিক্ষকরা। আর যে অভিভাবকরা সন্তান প্রথম দ্বিতীয় হবার জন্য খুবই উদগ্রীব, শিখল কি না, বা দেহ-মনে সুস্থ মানুষ হলো কি না তা নিয়ে ভাবেননা - তারা অখুশি। একবার ভেবে দেখুন - মাঝেমাঝে আমাদের কোনো কোনো সন্তান যে মানসিক চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়, আমরা কি আমাদের এই অতিমাত্রায় প্রতিযোগী মনোভাবের কারণে তাকে উস্কে দিচ্ছি না?

শিক্ষাক্রম নিয়ে কোচিং ব্যবসায়ী ও নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে অপপ্রচারে নেমেছে। অন্যদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের লক্ষে একটি গোষ্ঠী পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। গত জানুয়ারিতে এরা সাম্প্রদায়িক উস্কানি দেয়ার লক্ষ্যে বই নিয়ে মিথ্যাচার করেছিলো। এরা চায় না শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে শিখতে শিখুক, চিন্তা করতে শিখুক, অনুসন্ধিৎসু হোক, মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করুক। ওরা চায় মগজ ধোলাইয়ের শিক্ষাই চালু থাকুক।

যে কোনো পরিবর্তনই মেনে নিতে, খাপ খাইয়ে নিতে কষ্ট হয়। আর রূপান্তরকে মেনে নেয়া আরও কষ্টকর। কিন্তু বুঝতে হবে- এই রূপান্তর এগিয়ে যাবার জন্য অবশ্যম্ভাবী, এর কোন বিকল্প নেই। একমাত্র বিকল্প হলো পিছিয়ে পড়া, নতুন প্রজন্মের জীবনকে ব্যর্থ করে দেয়া। যা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না ।

১৯৭১ এ বঙ্গবন্ধু জানতেন আমাদের অনেক বড় ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। অবর্ণনীয় কষ্ট করতে হবে। কিন্তু স্বাধীনতার কোন বিকল্প ছিলো না। তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধের পথকেই বেছে নিয়েছিলেন।

আর এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তো তেমন কোনো ত্যাগের প্রয়োজন নেই। কোচিং ব্যবসায়ী, নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা অন্য কোনো ব্যবসা শুরু করবেন। একটু খাপ খাওয়াতে হয়তো সময় নেবে।

অভিভাবকরা সন্তানের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা ভাবুন। তাদের দক্ষ যোগ্য মানুষ হবার কথা ভাবুন। তাদের যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে খাপ খাইয়ে নিয়ে উৎকর্ষ লাভের কথা ভাবুন। একবার ভীষণ প্রতিযোগিতার চিন্তা থেকে বেরিয়ে সহযোগিতার, সহমর্মিতার চর্চার মধ্য দিয়ে সন্তানের সুখী ভালো মানুষ হবার কথা ভাবুন।

খরচ বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। উপকরণ ব্যয় বাড়বার কোনো কারণ নেই। শিক্ষক নির্দেশিকায় স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এবারের প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের পুরনো পত্রিকা, ক্যালেন্ডার, যেসব জিনিস কাজে লাগছে না সেসব জিনিসকে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করার বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর নোট-গাইড কিংবা কোচিংয়ের খরচ তো লাগবেই না।

রান্না করার বিষয়টি অতিরঞ্জিত করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সারাবছরে একদিন শুধু পিকনিক করে রান্না শিখবে। বাড়ী থেকে রান্না করে আনবার কোনো নির্দেশনা নেই। অতি উৎসাহী কোনো কোনো শিক্ষক এমন নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষকদের সচেতন হবার অনুরোধ জানাচ্ছি।

শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াবার জন্য প্রশিক্ষণ চলছে। ক্রমাগত প্রশিক্ষণ চলবে। শিক্ষকদের জীবনমান উন্নয়নেও সরকার আরও পদক্ষেপ নেবে। কারণ এরও কোনো বিকল্প নেই। কাজেই নতুন শিক্ষাক্রমকে স্বাগত জানান। নতুন প্রজন্মের জন্য সম্ভাবনার সকল দ্বার উন্মুক্ত করে দিন। স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে আপনার সমর্থনের মাধ্যমে আপনিও শরিক হোন।

আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের সন্তানদের সুখী-সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি- নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখি।


সর্বশেষ সংবাদ