চার আসামী গ্রেফতার

লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার রহস্য উদঘাটন করলো এসআই

লেগুনার সহকারীর দায়িত্ব পালন করছে এসআই বিল্লাল
লেগুনার সহকারীর দায়িত্ব পালন করছে এসআই বিল্লাল  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারে পড়ে ছিল অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যাক্তির লাশ; লেগুনা চালকের সহকারী সেজে তদন্ত চালিয়ে সেই খুনের রহস্য উদঘাটন করেছেন পুলিশের উপ পরিদর্শক বিলাল আল আজাদ , তার হাতে ধরা পড়েছে হত্যায় জড়িত চার ছিনতাইকারী।

এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য কয়েকদিন হেল্পারী করে কোন ক্লু না পেয়ে এক পর্যায়ে আজাদ নিজেই চালক হিসেবে কাজ করার জন্য লেগুনা আছে কি না, সেই খোঁজ করতে শুরু করেন লাইনম্যানদের কাছে। একজন তাকে জানান, ৭২৮ নম্বরের একটি লেগুনা রুটের সিরিয়ালে থাকলেও দুদিন ধরে সেটি দেখা যাচ্ছে না। সেটার খোঁজ নিয়ে দেখা যেতে পারে। অনুসন্ধান করে আজাদ জানতে পারেন, লেগুনাটি কদমতলীর একটি গ্যারেজে আছে। সেখানে গিয়েই তিনি খুঁজে পান লাল পাদানির সেই বাহন। বিকল অবস্থায় গ্যারেজে পড়ে ছিল সেটি।

আরও পড়ুন: মুসলিম ছাত্রী অপহরণ, শাঁখা-সিঁদুর পরা অবস্থায় উদ্ধার

তিনি বলেন, ওই লেগুনার চালকের নাম ফরহাদ। সে মাদারীপুরে আছে জানতে পেরে চলে যাই সেখানে। কিন্তু সেখানে গিয়েও হতাশ হতে হয়। ফরহাদকে খুঁজে বের করা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তিনি দাবি করেন, ২১ জানুয়ারি দুপুরে তিনি লেগুনা বুঝিয়ে দিয়ে মাদারীপুরে বাড়ি চলে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তার দাবি সঠিক।

এসআই বিলাল আল আজাদ পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ফরহাদ ঢাকা ছাড়ার পর লাল পাদানির ওই লেগুনা চালিয়েছিলেন মঞ্জু নামের এক চালক, তার হেলাপারের নাম আব্দুর রহমান। এই তথ্য পাওয়ার পর ঢাকায় এসে মঞ্জু আর আব্দুর রহমানের সন্ধান শুরু করি। কিন্তু তাদের কোনো ফোন নম্বর না থাকায় সম‌স্যা হচ্ছিল।

পরে আব্দুর রহমানের বাবার ফোন নম্বর পাওয়া যায় জানিয়ের আজাদ বলেন, তার কাছে গিয়ে আমরা নিজেদের লেগুনার চালক ও মালিক হিসেবে পরিচয় দিই। তাকে বলি, তার ছেলে লেগুনার চাকা আর তেল বিক্রি করে দিয়েছে। পরে তার ছেলের সন্ধান জানতে চাওয়া হয়।

রহমান এটা করতে পারে তা তার বাবা বিশ্বাস করতে চাননি। তবে তিনি ছেলেকে ডেকে আনেন। রহমানকে বুঝতে না দিয়ে আমরা তাকে ধরে ফেলি এবং মঞ্জুকে কোথায় পাওয়া যাবে জানতে চাই। পরে সে বলে, শান্ত নামের একজনের মাধ্যমে তাকে পাওয়া যাবে। পরে শান্তকে নিয়েই অভিযানে যায় পুলিশ। কিন্তু প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে আরেকবার চেষ্টা করে ধরা হয় মঞ্জুকে।

২৬ জানুয়ারি তাদের গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মঞ্জু আর রহমান জানান, সেই রাতে তাদের সাথে রুবেল ও রিপন নামে আরো দুজন ছিল। পরে কদমতলী থেকে তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগে বেশি সিজিপিএ পাওয়া প্রার্থীকে বাদ দেয়ার অভিযোগ

ঘাতক মো. রুবেলের স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেন, লেগুনার যাত্রী সেজে ছুরির ভয় দেখিয়ে চারজনে মিলে মহির উদ্দিনকে হত্যা করি। যাত্রাবাড়ী থানার বিপরীত পাশে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর লাশ ফেলে দিই। ভিকটিম মহিরের কাছে আমরা পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা পাই। সেখান থেকে পাঁচ হাজার টাকা আমি নিই। পরে কাজলা গিয়ে লেগুনাতে এক হাজার টাকার গ্যাস তুলি। সেখান থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের চনপাড়া যাই। সেখান থেকে দুই হাজার টাকার ইয়াবা কিনি। যে বাসা থেকে ইয়াবা কিনেছি, সেই বাসাতেই ইয়াবা সেবন করি। সকালে চারজনে মিলে এক হাজার টাকার নাস্তা করি। বাকি দুই হাজার টাকা আমার কাছে ছিল। পরে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। আমার কাছ থেকে সেই টাকা উদ্ধার করে আমাদের কাছে যে ছুরি ছিল সেটি রিপন ফেলে দিয়েছে। আমি ভুল করেছি। যা সত্য তাই প্রকাশ করে দিলাম। এখন আমার যা হয় হোক।

জবানবন্দিতে আসামী রুবেল আরো বলেন, আমরা লেগুনা নিয়ে যাত্রীর জন্য সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় যাই। সেখান থেকে একজনকে (মহির) গাড়িতে তুলি। তার হাতে পাতিল থাকায় বুঝতে পারি সে মাছ ব্যবসায়ী। তাই তার কাছে টাকা থাকতে পারে। ওই যাত্রী যাত্রাবাড়ী মাছের আড়তের সামনে নামতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা তাকে সেখানে না নামিয়ে গাড়ি ফ্লাইওভারের ওপর তুলে দিই। সেখানে রিপনের কাছ থেকে ছুরি নিয়ে ওই যাত্রীকে ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা পাঁচ হাজার ৯০০ টাকা ছিনিয়ে নিই। পরে লোকটিকে গাড়ি থেকে ফেলে দিই। এরপর আমরা গুলিস্তানের দিকে চলে যাই। সেখান থেকে ধোলাইপাড় হয়ে কাজলা যাই। এরপর যাই চনপাড়া স্টাফ কোয়ার্টারে।

পুলিশ জানায়, ২২ জানুয়ারি ভোরে মহির উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। পরদিন অজ্ঞাতদের আসামি করে মহিরের ছেলে খাইরুল ইসলাম যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলাটি ছিল ক্লুলেস। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে একটি লেগুনার পেছনে লাল রঙের চিহ্ন দেখে ক্লু পায় পুলিশ। পরে লেগুনার হেলপার হিসেবে কয়েকদিন কাজ করার পর রহস্য উদ্ঘাটন করে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই বিলাল আল আজাদ।

আরও পড়ুন: কঙ্গোতে জাতিসংঘের দুই বিশেষজ্ঞ হত্যায় ৫১ জনের মৃত্যুদণ্ড

নিহত মহির উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে। তিনি যাত্রাবাড়ীর আড়ত থেকে মাছ কিনে তা ফেরি করে বিক্রি করতেন। ভোরে মাছ কিনতে এসে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

যাত্রাবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই বিলাল জানান, এ ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে টানা পাঁচ দিন হেলপারি করে দিনে তিনশ টাকা আয় হয়েছে তার। শেষ পর্যন্ত ২৬ জানুয়ারি সফলতা আসে।

তিনি আরো জানান, তদন্ত করতে গিয়ে এমন অভিজ্ঞতা তার এবারই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৭ সালে ফেরিওয়ালা সেজে তিনি এক হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence