দেড় যুগেও হয়নি বুয়েট ছাত্রী সনি হত্যাকাণ্ডের বিচার

  © ফাইল ফটো

আজ ৮ জুন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যাকাণ্ডের ১৮তম মৃত্যুদিবস আজ। ২০০২ সালের এই দিনে টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের (৯৯ ব্যাচ) লেভেল ২, টার্ম ২–এর মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। তার মৃত্যুতে সেদিন জ্বলে উঠেছিল গোটা দেশ। শোকে, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। এ দেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে এমন কলঙ্কজনক ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।

১৮তম মৃত্যুদিবস উপলক্ষ্যে আজ সোমবার (৮ জুন) সকালে বুয়েট ক্যাম্পাসস্থ সনি স্মৃতি ফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্রলীগ, ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ দেড় যুগেও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, ২০০২ সালে সনি হত্যার বিচারের দাবিতে এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। দেশের সচেতন মানুষ এই আন্দোলনে সমর্থন জানান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ ও আন্দোলনের একপর্যায়ে গঠিত হয় ‘সন্ত্রাস বিরোধী বুয়েট ছাত্র ঐক্য’।

৬৩ দিন বন্ধ থেকে বুয়েট খোলার পরে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। একদিকে ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। অন্যদিকে আন্দোলনে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিপেটা, ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে আন্দোলন না করার জন্য শিক্ষকদের হুমকি, কিছু শিক্ষার্থীর আন্দোলনের বিরোধিতা ছিল প্রকাশ্যে। এতকিছুর পরও সনির হত্যাকারীদের শাস্তি আজও হয়নি। হাইকোর্টে দন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। 

সে সময় টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপ। দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে বুয়েটের আহসান উল্লাহ হলের সামনে সাবেকুন নাহার সনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিম্ন আদালতে মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়।

২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাইকোর্ট মুকিত, টগর ও সাগরের মৃত্যুদন্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ প্রাপ্ত মোকাম্মেল হায়াত খান মুকিত পালিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। পলাতক রয়েছেন নুরুল ইসলাম সাগর ওরফে শুটার নুরু। জেলে রয়েছেন টগর।

সনি হত্যার দিনটিকে প্রতিবছর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করছে। এছাড়া সনি মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন ৮ জুন ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন’ দিবস হিসেবে পালন করছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ, ৯৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইমরান হাবিব রুমন বলেন,  ক্রমাগত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সনি হত্যাকাণ্ড মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি করা হয় এবং মামলার রায়ে সন্ত্রাসী মুকি, টগরসহ তিনজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই মামলার রায় ছিল বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডের প্রথম বিচার।

তিনি বলেন, তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সাকা চৌধুরীর নিকটাত্মীয় মুকিত পালিয়ে যায় রাতের অন্ধকারে। টগরসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে উচ্চ আদালত ফাঁসির রায় কমিয়ে যাবজ্জীবন করেন। ধারাবাহিক এই আন্দোলন না থাকলে বিএনপি সরকারের সময়ে দ্রুত বিচারে ছাত্রদলের সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে বিচার হওয়াটা ছিল অলীক কল্পনা। এই বিচারটুকু অর্জিত হয়েছিল সবার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টায়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মাধ্যমে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence