মাংস চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন ও চুল কর্তন, গ্রেপ্তার ৩

ভুক্তভোগী রিনা খাতুন
ভুক্তভোগী রিনা খাতুন  © সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে রিনা খাতুন (৪০) নামের এক নারীকে গাছে বেঁধে মারধর ও মাথার চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ওই নারীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় বুধবার (১১ জুন) ৩ নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

এর আগে, সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার (১০ জুন) কুমারখালী থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী নারী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ। 

ভুক্তভোগী রিনা খাতুন কুমারখালীর মির্জাপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী। অন্যদিকে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, পজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভিন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।

স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকেলে রিনা খাতুন প্রতিবেশী রিপন আলীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। মাংস চুরির অভিযোগে রিপন ও তার স্ত্রী বাড়ির উঠানে পেয়ারাগাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে। এরপর রিনার স্বামী জাহাঙ্গীর তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এরপর স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনসহ কয়েক শ নারী-পুরুষ রাত ৮টার দিকে রিনার বাড়িতে ভাঙচুর করে। তাকে তুলে নিয়ে ফের রিপনের বাড়িতে নিয়ে আসে। তাকে মারপিট করে মাথার চুল কেটে দেয়। পরে সেখানে রিনার স্বজন ও এলাকাবাসীদের নিয়ে সালিশ বসান শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম। সালিশে রিনার দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী রিনা খাতুন বলেন, সোমবার বিকেলে প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপনের বাড়িতে তাকে ডাকতে যাই। এ সময় তার স্ত্রী মুক্তি খাতুন মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেন। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাকে আবার বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করেন। মুক্তি ও পারভিন নামে আরেকজন মিলে মাথার চুল কেটে দেন। এ ছাড়া আমার বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করেন। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছেন। আমি এর সঠিক বিচার চাই। জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

অভিযুক্ত রিপন বলেন, রিনা ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়েছিল। রিনা এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নয়।

আরেক অভিযুক্ত কাশেম আলী বলেন, রিনা বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাতে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

শিলাইদহ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. শাহ আলম বলেন, আমি শুধু ওই নারীকে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কী ঘটেছে তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার ওসি মো. সোলাইমান শেখ বলেন, চুরির অভিযোগে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় গতকাল মামলা হয়েছে। মামলার তিন আসামিকে আজ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, অনেক মানুষ তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার তার মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। কেউ মারতে যাচ্ছে। কেউ হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। তাকে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করছেন তারা। কেউ কেউ আবার এসব দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ