ছেলের চুরির অভিযোগে মাকে নাকে খত, সেই বিএনপি নেতাসহ ২৫ জনের নামে মামলা

দেলোয়ার হোসেন দেলু
দেলোয়ার হোসেন দেলু  © সংগৃহীত

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামে ছেলের চুরির অভিযোগে মাকে নাকে খত দেয়ার ঘটনায় নারীকে প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে ফেনী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী সাজেদা বেগম। আজ বুধবার (৭ মে) রাতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান।

মামলায় সাবেক পাঁচগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদী সাজেদা বেগম সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুকে প্রধান আসামী করে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ রিসাল, মাইনুদ্দিন বেনু, গিয়াস উদ্দিন, মাইনুদ্দিন সোহাগ ওরফে পচা সোহাগ, মোহাম্মদ আজাদ ওরফে ডাকাত আজাদ, অনিক, সামসুর রহমান লাভু, ইব্রাহিম খলিল, বাইট্টা নেজাম, মাইনুদ্দিন জসিম, সোহেল সহ মোট ১৩ জনের নাম উল্লেখ করেছেন।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১ মে রাতে মধ্যম মাথিয়ারা গ্রামে সালিশি বৈঠকের নামে সাজেদা বেগম ও অপর এক নারী জোহরা বেগমকে ছেলেদের চুরির অভিযোগে নাকে খত দিতে বাধ্য করা হয়। প্রতিবাদ করলে দেলোয়ার হোসেন লাঠি দিয়ে সাজেদা বেগমের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করেন এবং প্রকাশ্যে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। 

এজাহারে সূত্রে আরও জানা যায় , ঘটনার আগে গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় ফেনী সদর উপজেলার শুভং ব্রিক ফিল্ড ত্রিমোড় এলাকা থেকে বাদীর ছেলে রাকিব হোসেনকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যায় আসামিরা এবং চুরির মিথ্যা অভিযোগে মারধর করে। পরে ১ মে রাতে মাথিয়ারা গ্রামের একটি খোলা জায়গায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি সালিশ বৈঠকের নামে তাকে এবং অপর এক নারী জোহরা বেগমকে ছেলেদের চুরির অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে 'নাকে খত' দিতে বাধ্য করে। এসময় প্রতিবাদ করলে শারীরিক লাঞ্ছনা করার অভিযোগ করেন সাজেদা বেগম।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১ মে) রাতে ইউনিয়নের মধ্যম মাথিয়ারা এলাকায় খালুর দোকান সংলগ্ন স্থানে এ ঘটনা ঘটে। রোববার (৪ মে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই নারীকে নাকে খত দেওয়ানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আশপাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে আছেন। মাঝখানে সাজেদা বেগম ও জোহরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ছেলের অপরাধে দুইজন মায়ের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়। তারা অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলু হাতে লাঠি নিয়ে অশ্রাব্য বাক্য উচ্চারণ করে দুজনকে নাকে খত দেওয়ান। একইদিন এ ঘটনায় অভিযুক্ত সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দেলুকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন ফেনী জেলা বিএনপি।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় দল নেবে না। অভিযুক্ত এমন কাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমে তার পদ স্থগিত করা হয়। পরে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দলের সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তার সঙ্গে দলের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই।

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী এক নারী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ