কর্মীকে গুলি করে পিস্তল কোমরে গুঁজে চলে যান ছাত্রলীগ নেতা জয়

কর্মীকে গুলি করে হত্যার পর আটক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির হাসান আল ফারাবি জয়
কর্মীকে গুলি করে হত্যার পর আটক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির হাসান আল ফারাবি জয়  © সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির হাসান আল ফারাবি জয়ের গুলিতে আয়াশ রহমান ইজাজ (২৩) নামে এক কর্মী নিহতের ঘটনা ঘটেছে। ইজাজ ওই এলাকার আমিনুর রহমানের ছেলে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিভাগের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঘটনার পর পরই এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা জয়ের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে ইজাজকে গুলি করে কোমরে পিস্তল গুঁজে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান তিনি। 

শুক্রবার (৭ জুন) ভোরে নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে ফারাবিকে গ্রেপ্তার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ফারাবি গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য স্বীকার করেছে। এরপর তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে যায়। পরে ফারাবির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের সেতু সংলগ্ন একটি ঝোপ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার (৮ জুন) পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জানান, সদর উপজেলা নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে ইজাজসহ অন্যরা আগে আগে আনন্দ মিছিল বের করায় একই প্রার্থীর সমর্থক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফারাবি মনক্ষুণ্ন হয়। তার অনুমতি ছাড়া মিছিল বের করার ক্ষোভে সে মিছিলে গুলি চালায়। মিছিল বের করার বিষয়টি অজুহাত হিসেবে দেখালেও মূলত ফারাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজের পূর্ব বিরোধ ছিল। বুধবার সকালে ভোটকেন্দ্রে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছিল। সন্ধ্যায় ইজাজসহ অন্যরা বিজয় মিছিল বের করলে ফারাবি ওই মিছিলে গুলি চালায়। 

ফারাবির জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসপি জানান, কলেজপাড়ার আরেক বাসিন্দা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জালাল হোসেন খোকা এবং ছাত্রলীগ নেতা জয় একে অপরের ঘনিষ্ঠ। নিহত ইজাজও তাদের সঙ্গে চলাফেরা করতেন। তারা একই পাড়ার বাসিন্দা। কলেজপাড়া এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতেন খোকা ও ফারাবি। তাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারতেন না ইজাজসহ কলেজপাড়ার দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকজন যুবক। 

তিনি আরও জানান এ কারণেই ইজাজ ও তার কয়েকজন বন্ধুর প্রতি ক্ষিপ্ত ছিলেন খোকা ও ফারাবি। এ বিরোধ ধীরে ধীরে চরম আকার ধারণ করে। গত ৫ জুন ভোটের দিন ভিপি খোকা একটি অস্ত্র সংগ্রহ করে ফারাবির হাতে তুলে দেন। এই অস্ত্র পেয়ে সন্ধ্যায় কলেজপাড়ার জামাল মিয়ার বাড়ির মোড়ে ইজাজকে গুলি করেন ফারাবি। ফারাবি গুলি করার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।

ফারাবি পুলিশকে জানায়, এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিস্তল সংগ্রহ করে ইজাজকে গুলি করেন তিনি। মামলার প্রধান আসামি সাবেক ভিপি খোকাসহ আরও অনেকেই এ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত।

এর আগে বুধবার (৫ জুন) জেলা শহরের কলেজ পাড়া এলাকায় প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয় গুলি করে হত্যা করে আয়াশ রহমান ইজাজকে। 

আরও পড়ুন: এক পুলিশ আরেক পুলিশকে গুলি করল কেন? যা জানা যাচ্ছে

বৃহস্পতিবার (৬ জুন) রাতে নিহতের পিতা আমিনুর রহমান বাদি হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ্য করে এই হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন খোকাকে এবং দ্বিতীয় আসামি করা হয়েছে গুলি করা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হাসান আল ফারাবী জয়কে। 

 

সর্বশেষ সংবাদ