বিদ্যালয় পরিচালকের বিরুদ্ধে তিন ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ

জেলা ও দায়রা জজ আদালত
জেলা ও দায়রা জজ আদালত  © ফাইল ছবি

নেত্রকোনার পূর্বধলায় তিন স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় পরিচালক এ কে এম আনিছুর রহমান কালামের (৪৫) বিরুদ্ধে। সোমবার (৫ জুন) দুপুরে উপজেলার ফাজিলপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও এসব শিশু শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ ও নানা সময়ে ধর্ষণ চেষ্টা করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ওই পরিচালক পলাতক রয়েছে। 

এর আগে পূর্বধলা উপজেলার ফাজিলপুর বাজারে অবস্থিত রাবিয়া মাহমুদ মডেল স্কুলের পরিচালক এ কে এম আনিছুর রহমান কালাম (৪৫) তার স্কুলের ২য়, ৩য় ও ৫ম শ্রেণির তিন ছাত্রীকে দীর্ঘ দিন ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে আসছিলেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী (১০) পরিচালক কালাম এর বউয়ের আপন বড় ভাইয়ের মেয়ে। সে তার বাসায় থাকাতে রাতের বেলাতেও বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতনের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত এ কে এম আনিছুর রহমান কালাম উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের হাঁপানিয়া গ্রামের মৃত শুক্কুর আলীর ছেলে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশু ও শিশুটির নানা-নানী জানিয়েছেন, স্কুল চলাকালীন সকালে ও বিকালে স্কুল ছুটির পর কৌশলে ডেকে নিয়ে স্কুলের বাথরুমে এবং তার কক্ষে এ ঘটনা ঘটান অভিযুক্ত। এরপর থেকে শিক্ষার্থীরা আর স্কুলে যেতে চান না এবং অভিভাবকরা স্কুলে যাওয়ার কথা বললে কান্নাকাটি শুরু করতেন। কেন কান্নাকাটি করছে জানতে চাইলে বিভিন্ন সময় যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বর্ণনা জানায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

ঘটনাটি জানাজানির পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে জনতার হাতে আটক হন অভিযুক্ত পরিচালক কালাম। পরে গড়োয়াকান্দা গ্রামের জুলহাস ও স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন বিচার সালিশের মাধ্যমে মীমাংসার কথা বলে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এরপর ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান ও কুদরত আলী এবং খলিশাউড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার পর্যন্ত গড়ালে সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে‘ আসি’ ‘আসছি’ বলে কালক্ষেপণ করে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত হননি অভিযুক্ত।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশুরা প্রথমে ভয়ে মুখ না খোলায় কালাম এমন অপকর্মে চালিয়ে গেছে। পরে সোমবার ৫ জুন ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তিন শিশু শিক্ষার্থীর বয়স ১০ বছরের কাছাকাছি। পরিচালকের বউয়ের বড় ভাই মারা যাওয়ায় তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হলে সে তার ফুফুর বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে থেকে পড়াশোনা থেকে বিদ্যালয়ে যেত।

ঘটনার পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এতিম শিশুটিকে উদ্ধার করে তার দাদি মেয়েটির বাবার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত এ কে এম আনিছুর রহমান কালাম এর মোবাইল নাম্বার এ বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। কালাম পলাতক থাকায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, ঘটনাটি শোনার পর শিশুদের পরিবার, কালাম এবং তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। স্কুলের পরিচালক কালাম আসছি-আসবো বলে সময় নষ্ট করে পরে আর আসেনি। ঘটনাটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।

পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনা কেউ জানায়নি। ঘটনাটি শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। শিশুদের পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুদের পরিবারকে নিরাপত্তা ও আইনগত সহায়তা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ