আবুজর গিফারী কলেজ
আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পারলেন না ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ অধ্যক্ষ
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০৭:৩৩ PM , আপডেট: ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:৪০ PM
নানা অনিয়মে অভিযুক্ত রাজধানীর মালিবাগে অবস্থিত আবুজর গিফারী কলেজের অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদকে গত ৯ মার্চ সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটি। এই অব্যাহতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে গেলেও আইনের কাছে হোঁচট খেয়েছেন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ এই অধ্যক্ষ। ফলে তিনি আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আগের পদে ফিরতে পারছেন না।
জানা গেছে, অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদ গত ২০ মে এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করে ‘স্টে অ্যান্ড রোল অর্ডার’ লাভ করেন। এই ‘স্টে অ্যান্ড রোল অর্ডার’ এর বিরুদ্ধে গত ২৫ মে চেম্বার জজ আদালতে প্রতিষ্ঠানের (আবুজর গিফারী কলেজ) পক্ষ থেকে আপিল পিটিশন দায়ের করা হয়। এর প্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) চেম্বার জজ আদালত সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদের ‘স্টে অ্যান্ড রোল অর্ডার’ স্থগিত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদের বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন অনিয়ম, নামে-বেনামে বিভিন্ন বিল-ভাউচার করে অর্থ আত্মসাৎ, এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ছলে বলে কৌশলে কালক্ষেপণ করা, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, বেপরোয়া আচরণ, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিঘ্নিত করে কলেজে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরির অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পন্ন না করা, এডহক কমিটিকে একর পর এক ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা, গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদক নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার তালিকা তৈরি করে বিধির বাইরে প্রভাব খাটিয়েছিলেন।
তার পছন্দের বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনয়নে এডহক কমিটি সভাপতিকে বলপ্রয়োগ এবং হিতৈষী প্রতিনিধি নির্বাচনে পেশিশক্তির মাধ্যমে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ছিল। নিয়ম বহির্ভূত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ভোটার করে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করেছেন। কলেজে নবীনবরণ করতে না দেওয়া, বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষকদের ভয়ভীতি, হুমকি ও কলেজে একাধিকবার মব সৃষ্টি করে দখল করার নেপথ্যেও ছিলেন বশীর আহম্মদ।
কলেজের বর্তমান প্রশাসনের বক্তব্য, কিছুদিন আগে বশীর আহম্মদের মদদে কয়েকজন নীতি নৈতিকতা বিহীন শিক্ষক, ভাগবাঁটোয়ারা, ভোগ ও অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী কিছু বহিরাগত, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের বাইরে নিয়োগ প্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক এবং অছাত্ররা গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরীর নামে মিথ্যা-বানোয়াট প্রোপাগান্ডা করে কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। যার প্রতিবাদে গত ১০ মে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের করে কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, অব্যাহতি পাওয়া অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদের পরিকল্পনায় বহিরাগত ও অসৎ চিন্তার সুবিধাভোগী শিক্ষকদের দিয়ে মব সৃষ্টির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। একাডেমিক কার্যক্রমের স্বাভাবিক পরিবেশকে ব্যাহত করে চর দখলের মতো আবুজর গিফারী কলেজ দখলের অপচেষ্টা চলছে। কলেজকে অস্থিতিশীল করার পেছনে বশীর আহম্মদের অন্যতম সহযোগী অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদ এবং শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেটবিহীন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিরিন আক্তার মজুমদার।
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার এ দুইজন শিক্ষকের টিআইএমএস (TMIS) আইডি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিক্ষক নিবন্ধন সার্টিফিকেটবিহীন, বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিরিন আক্তার মজুমদার এবং অধিভুক্তিবিহীন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক দেওয়ান মো. যুবরাজ আল ফাহাদের নিয়োগে অনিয়ম পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ বশীর আহম্মদ দুর্নীতি পরায়ণ ছিলেন। এছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের একজন দোসর। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর কলেজে অচল অবস্থা করে রেখেছিলেন তিনি। এমনকি কলেজে গভর্নিং বডির সভাও করতে দিচ্ছিল না। তাই সেই সময় তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এরপর তিনি আদালতে গেলেও আইনের কাছে হেরে গেছেন।