ভিতরে ঠান্ডা, বাইরে উত্তাপ

যশোরে তরমুজের বাজার
যশোরে তরমুজের বাজার  © ফাইল ফটো

গরমের তীব্র দাবদাহে শরীর যখন হাঁপিয়ে ওঠে, তখন প্রশান্তির বার্তা নিয়ে আসে এক টুকরো ঠান্ডা তরমুজ। কিন্তু এ বছর রমজান মাসে যশোরের বাজারে তরমুজের দাম দেখে সাধারণ ক্রেতাদের মনে যেন আগুন জ্বলছে। এর আগে যেখানে পুরো একটি তরমুজ কেনার জন্য দাম ধরা হতো, এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে। ফলে তরমুজের দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। রমজান মাসে সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমতো অধরাই থেকে যাচ্ছে তরমুজ। রমজানের দুদিন আগেও একপিছ তরমুজ ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। রমজানের প্রথমদিন থেকে বিক্রি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে।

যশোর শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তরমুজের বাজার আগুন হয়ে উঠেছে। বড় আকারের প্রতিটি তরমুজের ওজন ছয় থেকে আট কেজির মতো। প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে দাম রাখছেন বিক্রেতারা। ফলে একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

কৃষকরা মাঠ থেকে যে দামে তরমুজ বিক্রি করেন, তার চেয়ে অন্তত দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি দামে এটি শহরের বাজারে পৌঁছাচ্ছে। পরিবহন খরচ, দালালদের মুনাফা এবং কেজি দরে বিক্রির নতুন প্রবণতা এর পেছনের মূল কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। রমজানে তরমুজের দাম বেড়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণের বেশি হয়েছে।

তরমুজ কিনতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন অনেক ক্রেতা। রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তার বাড়ি শহরের ঘোপ জেল রোডে। দড়াটানা মোড়ে তিনি তরমুজ কিনতে এসছিলেন। আগে ১৫০ টাকার মধ্যে ভালো একটা তরমুজ পাওয়া যেত, এখন সেটা ৩০০-৫০০ টাকার নিচে মিলছে না। এত দাম দিয়ে তরমুজ খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। রমজান মাসে ইফতারিতে তরমুজ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অতিরিক্ত দাম বেড়ে যাওয়ায় তার পক্ষে তরমুজ কেনা সম্ভব হচ্ছে না’।

আরেক ক্রেতা মোহসিনা বেগম বলেন, তার বাড়ি শহরের এম এম কলেজের সামনে। রমজান মাস চলছে, এরই মধ্যে গরম পড়ছে। সেইজন্য তিনি বড় বাজারের মধ্যে তরমুজ কিনতে এসেছিলেন। গরমের সময় ও ইফতারি খাওয়া শরীরের জন্য ভাল। কিন্তু এত দাম দেখে আর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ১৫০ টাকার তরমুজ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে তরমুজ ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন জানান, ‘ বেশি দামে কিনছি, তাই কম দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপর কেজি দরে বিক্রি করার কারণে দাম বেড়ে গেছে’। আগে ৫০ টাকাও একপিছ তরমুজ বিক্রি করা সম্ভব হতো। কিন্তু এখন এক কেজি তরমুজ মাত্রভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।

যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর ও শার্শা অঞ্চলে তরমুজ চাষ হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা প্রতি কেজি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি করলেও, শহরে এসে সেটি দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে পৌঁছে যায়। তাদের কিছু করার নেই’।

এক কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘আমরা যদি এত লাভ করতাম, তাহলে চাষ করে এত কষ্ট করতে হতো না। প্রকৃতপক্ষে পাইকার, পরিবহন ও খুচরা বিক্রেতারা লাভের বড় অংশ নিয়ে যাচ্ছে’।যশোরের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ‘তরমুজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে, তাহলে ক্রেতারা উপকৃত হবেন। পাশাপাশি, তরমুজ কেজি দরে বিক্রির পরিবর্তে আগের মতো পিস হিসেবে বিক্রির নিয়ম চালু করলে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে গ্রীষ্মের এই জনপ্রিয় ফল শুধু ধনী মানুষের খাবার হয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে, যা মোটেও কাম্য নয়। তরমুজ তো সকলের জন্য, শুধু বিত্তবানদের জন্য নয়’।

এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘বাজার মনিটরিং করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কোন ব্যবসায়ীকে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের সুযোগ দেয়া হবে না। কৃত্রিমভাবে দাম বাড়ানো হলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।


সর্বশেষ সংবাদ