হিমাগার নেই, কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন গলাচিপার চাষিরা
- গলাচিপা প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ০১:১৩ PM , আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৫, ০১:১৩ PM

পটুয়াখালীর গলাচিপায় আলুর বাম্পার ফলন হওয়ায় হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষিরা। সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ক্ষেতেই পাইকারদের কাছে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার আলু জমাট করে রাখতে টাল তৈরি করেছেন, কেউবা গাছ কেটে মাটির নিচে সংরক্ষণ করছেন। কিন্তু তাতেও ভয় কাটছে না। আবহাওয়া প্রতিকূল হলে ক্ষেতেই আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় আলু চাষের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯০ সালের দিকে। প্রথম দিকে ভালো ফলন ও লাভজনক হওয়ায় চাষিরা এতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গলাচিপার মুরাদনগর, বোয়ালিয়া ও চরখালী গ্রামে সবচেয়ে বেশি আলুর চাষ হয়। এ বছর উপজেলায় ৩৭০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার (৩৬৫ হেক্টর) চেয়ে বেশি। প্রতিটি হেক্টর জমিতে ২৮ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চাষিরা এখন বিপাকে। ক্রেতা নেই, সংরক্ষণের হিমাগার নেই, পাইকাররা সুযোগ নিচ্ছে—ফলে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না তারা।
সেলিম নামের এক কৃষক সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসকের কাছে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘যদি হিমাগার থাকত, তাহলে আমাদের এই দুঃসময় দেখতে হতো না। আলু সেখানে সংরক্ষণ করে ভালো দামে বিক্রি করতে পারতাম।’
আরও পড়ুন: গণজাগরণ মঞ্চ-২ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ, হাসনাত আব্দুল্লাহর সতর্ক বার্তা
মুরাদনগর গ্রামের আবু সালেহ (৫০) এ বছর ৪০ কড়া (১ একক) জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার ভাষ্য, প্রতি কড়ায় ৫ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হলেও ফলন হয়েছে ৮-১০ মণ। প্রথম দিকে পাইকাররা ৬৯০ টাকা মণ দরে কিনলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম নেমে এসেছে ৬০০ টাকায়।
একই গ্রামের রেজাউল করিম, শামীম হাং, রহমান হাং ও মিলন মিয়া জানান, দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই আলু রেখে দিয়েছেন। তাদের আশঙ্কা, ন্যায্য মূল্য না পেলে পরের মৌসুমে কেউ আর আলু চাষে আগ্রহী হবে না।
উত্তর চরখালী গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন ৮০ কড়া জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘লাভ তো দূরের কথা, সমান থাকাই দায়। এখনো ক্ষেত থেকেই আলু তুলতে পারিনি।’
এদিকে গলাচিপার আলুক্ষেতে শ্রমিকের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। মিতু বেগম, লিজা আক্তার, শাহিনুর বেগম ও রিনা বেগম প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কষ্ট করে কাজ করেন। কিন্তু পুরুষদের সমান পরিশ্রম করেও তারা অর্ধেক মজুরি পান। পুরুষ শ্রমিকরা যেখানে ৬০০ টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন, সেখানে নারীরা পাচ্ছেন মাত্র ৩০০ টাকা।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞান শিক্ষায় পিছিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা, জনবল সংকটকে দায়ী বোর্ডের
গলাচিপার কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার বলেন, আলু একটি সবজি, যা আগাম চাষ করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বোয়ালিয়ার কৃষক মোশারেফ চকিদার পাশের উপজেলায় ১০০ মণ আলু বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা লাভ করেছেন বলে জানান। এই কৃষি কর্মকর্তার মতে, যদি কৃষকরা ধৈর্য ধরে সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে তারা লাভের মুখ দেখবেন।
তবে কৃষকদের একটাই দাবি, হিমাগার চাই। তাহলে ভবিষ্যতে তারা লোকসানের শিকার না হয়ে লাভবান হতে পারবেন। গলাচিপার হাজারো কৃষক এখন একটাই দাবি তুলেছেন, আলুর ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করতে হবে। যদি এসব ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে আগামীতে অনেকেই আলু চাষ থেকে সরে আসতে বাধ্য হবেন কৃষক।