ওমেগা পয়েন্টে শিক্ষক ছিলেন রফিক, পড়াশুনায় অমনোযোগী শেফা

ওমেগা পয়েন্ট
ওমেগা পয়েন্ট  © টিডিসি ফটো

হুমায়ূন আহমেদের লেখা যত বই আমি পড়েছি, তার মধ্যে ‘ওমেগা পয়েন্ট’-এর কনসেপ্টা আমার কাছে ব্যতিক্রম ও অসাধারণ লেগেছে। অবশ্য বইটার নাম ও ‘বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী’ শব্দগুচ্ছ দেখে কৌতূহল বশত পড়তে শুরু করা। যদিও শুরুর দিকে সাদামাটা একটা কাহিনী মনে হয়ে একঘেয়েমি লাগছিল। কিন্তু যখন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অংশ শুরু হলো তখন মনে হলো যে, না এটা সাদামাটা কাহিনী না।

এ বইটি ভালো লাগার কারণ হচ্ছে, এতে দুই জগতের বর্ণনা অতি শৃঙ্খলভাবে তালমিলিয়ে একইসাথে লেখা হয়েছে। যখন যে জগতের কথা পড়ছিলাম তখন সে জগৎকে আমি কল্পনা করতে পারছিলাম।

এই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন রফিক, শেফা, এমরান টি, সিডিসি। রফিক হলো একজন এতিম ছেলে। বিএসসি পাশ করে গ্রামের একটি হাই-স্কুলে পার্ট টাইম গণিতের শিক্ষক হিসেবে আছেন। তিনি তীক্ষ্ণ মেধা সম্পন্ন একজন ছেলে। যেকোনো অংক একবার দেখে মুখে মুখে হিসাব করে উত্তর বলে দিতে পারতেন। রফিকই হলো লেখকের সৃষ্টি করা অন্য জগতের ‘রেফ’ নামের ব্যক্তি, যাকে ঘিরেই সব ঘটনা।

শেফা হলো যার বাড়িতে রফিক গৃহ শিক্ষক হিসেবে রয়েছে, যে তার গৃহ শিক্ষকের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এ কাহিনীতে শেফা মূলত পড়াশুনায় অমনোযোগী, হাস্যরশাত্নক চরিত্র। কিন্তু রফিককে বিয়ে করার ক্ষেত্রে অনড়। শেফা হলো অন্য জগতের ‘শেফ’ নামক ৮ম পর্যায়ের একটি রোবটের প্রতিচ্ছবি।

এমরানটি হলেন অন্যজগতের বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান। আর সিডিসি হলো অন্য জগতের পৃথিবী নিয়ন্ত্রক প্রধান কম্পিউটার।

আরও পড়ুন: গাভী বিত্তান্ত: যেন বর্তমান সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরই প্রতিচ্ছবি

কয়েকজন বিজ্ঞানী যেমন ধারণা করেন ‘Parallel Universe’ রয়েছে, এই কল্পকাহিনীটিও আমার কাছে ওই কনসেপ্টের মতই লেগেছে। অর্থাৎ লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী রফিক ঘুমের মাধ্যমে দুটি ভিন্ন জগতে অবস্থান করছে। এই কাহিনীটি শুরু হয় রফিকের সাদামাটা জীবন দিয়ে।

অপরদিকে রোবট ও মানুষের সমন্বয়ে একটি জগৎ রয়েছে। যেখানে রোবটরা চাইলেই মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ জগৎ মূলত ভবিষ্যৎ (২১০০ শতকের মত) এর পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে ব্যক্ত। এ জগতে ‘রেফ’ ৪ বছর ধরে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান পরিষদ নিয়ন্ত্রিত মেন্টাল হসপিটালে আটকা আছে। 

এখানে ‘রেফ’-এর দেখাশুনার জন্য রাখা হয়েছে মানুষের আদলে তৈরি ‘শেফ’ নামক রোবটকে, যার মানুষের মতো আবেগ রয়েছে। এই ৪ বছরে ‘শেফ’-এর মায়া জন্মেছিল ‘রেফ’-এর প্রতি। যার ফলশ্রুতিতে যখন বিজ্ঞান কাউন্সিলের সদস্যরা ‘রেফ’-কে ধ্বংস করতে উদ্বুদ্ধ হয় তখন ‘শেফ’, ‘রেফ’-কে পালাতে সাহায্য করে।

পালানোর পরে ‘ওমেগা পয়েন্ট’ নামের এক বিশেষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সির দল ‘রেফ’-কে সাহায্য করছিল তার মস্তিষ্কে অবস্থান করে। কিন্তু তার পেছনের স্বার্থটি যদিও আমার কাছে ভালো লাগেনি।

পরবর্তীতে কীভাবে সিডিসি সকলকে জব্দ করে সব রহস্য ভেদ করে সেটিই হলো মূল আকর্ষণ। এছাড়াও এ কল্পকাহিনীতে মুগ্ধ করার বিষয়টি হচ্ছে ‘এমরানটি’-এর সাথে ‘রেফ’-এর যে যোগসূত্র সেটা।

‘হুমায়ূন আহমেদ’-এর বেশিরভাগ বইয়ের ই শেষ পরিণতি বুঝা যায় না, এটিও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘এই যা হারিকেন নিভে গেছে’- এরকম কোনো লাইন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর শেষ লাইন হতে পারে আমার জানা ছিল না। যদিও এটিই ছিল ‘ওমেগা পয়েন্ট’-এর শেষ লাইন। অবশ্য সম্পূর্ণ বইটি পড়লে শেষ লাইনটির স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

লেখক: শিক্ষার্থী, চাঁদপুর সরকারি কলেজ


সর্বশেষ সংবাদ