গুচ্ছ থেকে বের হতে চান জবি শিক্ষকরা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতিতে ফিরতে চান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। ইতোমধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্য বরাবর এই দাবি জানানো হয়েছে৷ একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি অনুষদ থেকেও স্বতন্ত্র ভর্তি পদ্ধতির পক্ষে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

শিক্ষকরা বলছেন, সমন্বয়হীনতা, ভর্তি কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রীতা, মানসম্মত শিক্ষার্থী না পাওয়া সহ বেশ কিছু কারণে গুচ্ছ পদ্ধতি তার মৌলিক উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। একইসাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট না থাকায় আসন সহসায় পূরণ করা যাচ্ছে না। আর এসব কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার জৌলুস হারিয়েছে বলেও দাবি তাদের। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকবে নাকি বেরিয়ে যাবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ একাডেমিক সভায়।

আরও পড়ুন: গুচ্ছে জবি ভর্তিতে থাকবে কিনা, সিদ্ধান্ত ২২ ফেব্রুয়ারি

জানা যায়, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়বারের মত দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে অংশ নেয়। কিন্তু সার্বিক প্রক্রিয়া সহজতর করতে গিয়ে এবারও বিড়ম্বনায় পড়েছে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বার বার মেধাতালিকা ও গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েও আসন পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এমতাবস্থায় গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে দেড়শতাধিক আসন ফাঁকা রেখেই প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভর্তি কার্যক্রমে অধিক কালক্ষেপণের জন্য ফল প্রকাশের পর প্রায় ৬মাস কেটে যায় ক্লাস শুরু করতেই। এতে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পিছিয়ে পড়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সেশনের (২০২১-২২) শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ শেষের দিকে। অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন : গুচ্ছে থাকছে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়, ভর্তি শেষ জুলাইয়ের মধ্যে

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দাবি, অতি অল্পসময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যতটা এগিয়ে গিয়েছিল, দুইবার গুচ্ছে যাওয়ায় তা অনেকটা পিছিয়ে গেছে। গুচ্ছ পদ্ধতির অসঙ্গতির ফলেই এবার শিক্ষার্থী সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বারবার গণ সাক্ষাৎকার দেওয়ায় এখানে মেধার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। শুণ্য আসন পূরণে ন্যুনতম পাস নাম্বার পেয়েই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক পেয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমন্বয়হীনতা, মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী না পাওয়া, ভর্তি কার্যক্রমে অনেক সময়ক্ষেপণ সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরাও বিড়ম্বনায় পড়েছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছি এবছর থেকে আবারও স্বতন্ত্র পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতে।

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ.কে.এম লুৎফর রহমান বলেন, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যে মানের দরকার ছিল সেটা নেই। এর ফলে উল্টো শিক্ষার্থীরাই এক প্রকার হয়রানির স্বীকার হচ্ছে, সেশনজটও বাড়ছে। আমরা গতবারও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলাম কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্ত সেই দাবিগুলো মানা হয়নি। এবছর আমরা আবারও দাবি জানিয়েছি নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতিতে ফেরার জন্য। বুধবার বিশেষ একাডেমিক সভাতেই হয়ত এটার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে৷

আরও পড়ুন : সমস্যায় জর্জরিত জবির ছাত্রী হলে শুধু নেই আর নেই

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সম্মিলিত (ঘ) ইউনিট নেই। ফলে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ইউনিটে পরীক্ষা দিয়েও যারা সিরিয়ালে পেছনের দিকে আছে তারা কলা অনুষদের বিষয় বরাদ্দ পাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চায়না৷ ফলে তাদেরকে চাইলেই জোর করে ভর্তি করানো সম্ভব না৷

তিনি বলেন, যদি ঘ ইউনিট থাকে তাহলে সেখানে তারাই পরীক্ষা দিবে যারা কলা অনুষদের বিষয় পড়তে চান৷ আর যারা বিজ্ঞানের বিষয় পড়তে চাইবে তারা বিজ্ঞানের নিজস্ব ইউনিটে পরীক্ষা দিবে। এর ফলে আসন পরিপূর্ণ হতে তেমন জটিলতা বা সময়ক্ষেপণ হবেনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, আমরা এবছর গুচ্ছে থাকবো কিনা এটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ২২ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সভায় এটির সিদ্ধান্ত হবে।


সর্বশেষ সংবাদ