ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নিপীড়নের ঘটনা আড়ালের চেষ্টা করেন ছাত্রলীগ সভাপতি

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা
গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা  © ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়নের শিকার সেই ছাত্রী ঘটনাটি শুরুতে জানিয়েছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে। রাতেই নিপীড়নকারীদের একজন আজিম হোসেনের (বহিষ্কৃত) ছবি দেখে নিশ্চিতও হন ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। ইতিহাস বিভাগের ওই ছাত্র তার অনুসারী।  এরপরই ঘটনা আড়াল করতে নানা চেষ্টা শুরু করেন তিনি।

গত ১৭ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। একইসঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও দেখিয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেনে এ ঘটনা ঘটে। পরে ২৩ জুলাই র‌্যাব জানায়, ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনার মূলহোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে মোট ছয়জন জড়িত ছিল।

রোববার (২৮ আগস্ট) নিপীড়নের শিকার ওই ছাত্রী গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগ সভাপতির বিষয়টি জানান। তিনি বলেন, ১৭ জুলাই রাত ১০টার দিকে পাঁচ তরুণ তাঁকে শারীরিকভাবে নিপীড়ন করেন। ক্যাম্পাসের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় তাঁর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হককে ফোন করেন। তখন তিনি গোলচত্বর এলাকায় ছিলেন। রাত ৩টার দিকে এসে রেজাউলও পুরো বিবরণ শোনেন। অভিযুক্ত আজিমসহ কয়েকজনের ছবি দেখান। পরে আজিমকে শনাক্ত করে শেষে যান হলে।

পরদিন ১৮ জুলাই সকালে রেজাউলের অনুসারী ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাসির উদ্দিন ছাত্রীর হলের সামনে আসেন। ছাত্রীর ভাষ্য, তিনি এসে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আগে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। বিচার হয়নি। তোমার সঙ্গে যা হয়েছে, তার বিচারও হবে না।’ দুপুর ১২টার দিকে তিনি অভিযোগ দিতে প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়ার কার্যালয়ে যান। তবে কেউ ছিলেন না। বেলা ৩টার দিকে প্রক্টর আসেন। তখন রেজাউল হকও আসেন।

ওই ছাত্রী বলেন, রেজাউল তাঁকে ডেকে বাইরে নিয়ে যান। তারপর অভিযোগ থেকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের বিষয়টি বাদ দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করতে বলেন। রেজাউল বলেছিলেন, ‘এসব কথা লিখলে নাম খারাপ হবে। বিয়ে হবে না। আমার হাতে ছেড়ে দাও এসব। আমি দেখব।’

আরো পড়ুন: চবি ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী রিমান্ডে

ছাত্রীর আরও বলেন, ওইদিন তাঁর অভিযোগ দেওয়া হয়নি। এরপর ক্যাম্পাসের পরিচিত ব্যক্তির বাসায় যান। সেদিনের পর থেকে রেজাউল তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ১৯ জুলাই বেলা ১১টার দিকে গোপনেই লিখিত অভিযোগ দেন প্রক্টরের কাছে। ২০ জুলাই দুপুরে হাটহাজারী থানায় মামলা করেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।

এর পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায় র‍্যাব। এর মধ্যে আজিম ও নুরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পরে আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের পর দুই ছাত্রকে স্থায়ী বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঘটনার একপর্যায়ে ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারলেও মামলা হওয়ার পর তার বাবাকে অন্তত পাঁচবার ফোন করেন রেজাউল। তিনি বলতেন, তারা যে লিখিত অভিযোগ দিতে নিষেধ করেছেন, বিষয়টি যেন কাউকে না জানায়।

এ বিষয়ে রেজাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছাত্রীকে আজিমসহ কয়েকজনের ছবি তিনি দেখিয়েছিলেন। তবে কাউকে চিনতে পারেননি। তিনি কাউকে ফোন কিংবা অভিযোগ দিতে বাধা দেননি বলেও দাবি করেন।

ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ক্লাসে ফিরবেন। এক মাস ধরে বাড়িতে আছেন। প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রীকে নিরাপদ রাখতে যা যা করা প্রয়োজন, সব করবেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence