মা মারা যাওয়ার পর চাকরি হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছিল মেহেদীর

  © সংগৃহীত

নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে জীবনে যখন সাফল্য ধরা দিতে শুরু করল, ততোদিনে মা আর পৃথিবীতে নেই; সেই বেদনা চেপে বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের বুকে।

রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পান্থপথের বাসা থেকে যখন তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হল, ওই কক্ষে একটি চিরকুট পাওয়া গেল; তাতে লেখা- ‘নিদ্রাহীনতা আর সহ্য করতে পারতেছি না’।

পরিবারের সদস্য আর সহকর্মীরা বলছেন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দশায় পৌঁছে গিয়েছিলেন মেহেদী, হতাশা থেকে জন্ম নিচ্ছিল নানা জটিলতা, তাতে টুটে গিয়েছিল ঘুম। হয়ত সে কারণেই তিনি বেছে নেন আত্মহননের পথ।

তিন ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী ছিলেন সবার ছোট। মেজ ভাই মনোয়ার হোসেন ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে মাস্টার্স করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, গত বছর মার্চ মাসে মারা যান তাদের মা। এরপর থেকে ঘুমাতে পারতেন না মেহেদী।

“ঘুমের জন্য ওকে অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখানো হয়েছে। অনেক কাউন্সেলিং করা হয়েছে। কোনো লাভ হচ্ছিল না। ঘুমের ওষুধ দিলেও একসময় কোনো কাজ হচ্ছিল না। ঘুম না হওয়ার কারণে অনেক ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। এই মে মাসে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ঘুম হয়েছে।”

মনোয়ারের ধারণা, ঘুমের ওই সমস্যার পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে জমা হতাশাই তার ভাইয়ের জন্য কাল হয়েছে।

শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মতিউর রহমান বলেন, স্বজন আর সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তারাও মেহেদীর তীব্র হতাশার ভোগার কথাই জেনেছেন।

“বেশ সংগ্রাম করে পড়ালেখা শেষ করে সম্প্রতি তিনি চাকরিতে ঢুকেছিলেন। বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। মা মারা গেছেন কিছুদিন হল। মা মারা যাওয়ার পর চাকরি হওয়ায় তার মধ্যে হতাশা আরও বেড়েছিল। সে নাকি বলত, চাকরি পেলে মাকে ভালো রাখবে। কিন্তু সেটা না পেরে হতাশা আরও গভীর হয়।”

বিএসইসির একজন সহকর্মী বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সহকারী পরিচালক পদেও মনোনীত হয়েছিলেন মেহেদী। আরও দুয়েক জায়গায় তার চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছিল।

“মেহেদী খুব মেধাবী ছেলে ছিল। মাকে দেখভাল না করতে পারায় তার মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়। তার মনে হত, পারিবারিক নানা সমস্যার কারণে মায়ের সঙ্গে হয়ত অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে, সেসব নিয়ে কষ্ট পেত। আমাদের কাছে জানতে চাইত, মা তাকে ক্ষমা করবে কি না। আমরা তাকে বলেছি, মা কখনোই সন্তানের প্রতি রাগ করে থাকেন না।”

মেহেদীর বয়স যখন দেড় বছর, তখন বাবাকে হারান। বাবা কিছু রেখে না যাওয়ায় তিন সন্তানকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়েন মা।

তবে ছোট দুই ছেলের লেখাপড়া তিনি বন্ধ হতে দেননি জানিয়ে মেজভাই মনোয়ার হোসেন বলেন, মোহাম্মদপুরে তাদের বড় ভাইয়ের একটি লন্ড্রির দোকান ছিল পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। ওই টাকাতেই তাদের লেখাপড়া চলেছে।

“লন্ড্রির পাশেই ছিল আমাদের ভাড়া বাসা। আমি আর মেহেদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে থাকতাম। ওর মেধা ছিল আমাদের সবার চেয়ে অন্যরকম। মা  চলে যাওয়ার পর ওর একটা পর একটা চাকরি হতে থাকল, বিএসইসিতে চাকরির আগে বেপজাতেও চাকরি করেছে। দুদকে মনোনীত হয়েছে। সব মিলিয়ে নয়টা চাকরির অফার ছিল ওর হাতে।”

জীবনে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে জানিয়ে মনোয়ার বলেন, এখন সাফল্যর মুখ দেখলো ও। কিন্তু মা তো এসব দেখবে না। তাই নিয়ে মেহেদীর মধ্যে একটা হতাশা কাজ করছিল।

সোমবার বিকালে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায় মেহেদীকে দাফন করা হয়েছে বলে জানান মনোয়ার।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence