পড়াশোনা বয়স মানে না, ৩৮ বছর বয়সে রাবিতে ভর্তি হলেন শফিক

শেখ মোহাম্মদ শফিক
শেখ মোহাম্মদ শফিক  © সংগৃহীত

শেখ মোহাম্মদ শফিক। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের এই যুবকের বয়স ৩৮ বছর। রয়েছে দুই কন্যা সন্তান। দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি। বুঝিয়ে দিলেন পড়াশোনার কোনও বয়স হয় না। এই বয়সে দেশের দেশের সরকারি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হয়ে অনন্য রেকর্ড গড়লেন শফিক। 

আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ২০০৪ সালে এসএসসির পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায় তার। তবুও হাল ছাড়েননি। ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমে ২০২০-২১ সেশনে ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে।

জানা যায়, ২০০৪ সালে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সোনাতলা পাইলট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন শফিক। পরে এইচএসসির জন্য ভর্তি হন বগুড়ার শাহ্ সুলতান কলেজে। কলেজে ক্লাস শুরু হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে এলাকার তিন বন্ধু মিলে চালু করেন কোচিং সেন্টার। পড়ালেখা বেশিদূর পর্যন্ত না করায় এলাকার মানুষের নানা বিদ্রুপ ও সমালচনামূলক কথায় বাধ্য হয়ে বন্ধ করেন কোচিং সেন্টারটি।

শফিক বলেন, কোচিং সেন্টার বন্ধের কয়েক বছর পর ২০০৮ সালে একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। বিয়ের ১৭ মাস পরেই বিচ্ছেদ হয়। এ কারণে আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। তবে বন্ধুরা আমার অবস্থা দেখে বললেন তোর মেধাশক্তি অনেক ভালো। অন্তত ইন্টারমেডিয়েটটা পাশ কর।

“পরে ২০১১ সালে এলাকার এক বন্ধু আমাকে জোর করে কারিগরিতে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি করে দেয়। পাশাপাশি প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম। ২০১৩ সালে ৪.৪২ জিপিএ নিয়ে ইন্টারমেডিয়েট পাশ করলাম। সেখান থেকে ডিগ্রিতে ভর্তি হতে গেলাম বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে।”

তিনি বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার পাশের বছরের পার্থক্যের কারণে ডিগ্রিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে ভর্তি নিলেন না। তাই আর ডিগ্রিতে ভর্তি না হয়ে শুধু প্রাইভেট পড়াতেই থাকলাম। মোটামুটি ভালোই চলছিল। তাই ২০১৩ সালে আবার বিয়ে করি। এখন আমার দুটা মেয়ে আছে। বড় মেয়ের বয়স ৮ বছর এবং ছোট মেয়ের বয়স ৪ বছর।

শফিক বলেন, মোনারুল ইসলাম নামে এলাকার এক ভাই যিনি ২০০১ সালে একবার এসএসসি পাশ করেন এবং পড়ালেখা বন্ধ করে দেন। পরে আবার ২০০৯ সালে তিনি ইন্টারমেডিয়েট পাশ করেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হলাম এবং তাকে অনুসরণ করে ২০১৬ সালে আবার এসএসসিতে কারিগরিতে ভর্তি হই। সেখানে ৪.৬৮ রেজাল্ট নিয়ে ২০১৮ সালে পাশ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আশায় জেনারেল লাইনে ড. এনামুল হক কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হই। সেখান থেকে ২০২০ সালে ৪.৮৩ জিপিএ নিয়ে পাশ করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন এলাকার নূর নবী নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভাই। একদিন তিনি বলেন, জেনারেল লাইনে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হন। কারণ জেনারেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সহজ। তাই কারিগরিতে এসএসসি দেয়ার পর জেনারেলে ইন্টারমেডিয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম।

“বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য কোনো কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইনি। বাড়িতে একাই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। ২০২১ সালে পরীক্ষা দেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিজ্ঞতা না থাকায় লিখিত পরীক্ষায় ০.৫ নম্বরের জন্য পাশ করতে পারিনি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা হারিয়ে যায়। আমার এক ছাত্র বলেছিল, স্যার অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেন অন্তত অভিজ্ঞতা হবে। তাই সে বছরেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। সিরিয়াল এসেছে ২৬১তম।”

সংসার চালানোর ব্যয়ভারের বিষয়ে শফিক বলেন, বাসায় থাকতে প্রাইভেট পড়াতাম। মাসে প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম হতো। ওই টাকা দিয়েই সংসার চালাতাম। এখনো এভাবেই চালাচ্ছি। তবে আগের মতো টাকা ইনকাম করতে পারছি না। নিজে চলছি আর কিছু টাকা বাড়িতে পাঠাচ্ছি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ আমাকে মানুষকে শেখানোর একটি বিশেষ গুণ দিয়েছে। এখানে আমার বয়স একটি বড় বাধা। আমি চাইলেও এখন আর সরকারি কোন চাকরিতে প্রবেশ করতে পারব না। তবে আমি উচ্চশিক্ষা অর্জন করবই। ভবিষ্যতে একটি বেসরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ আমি প্রতিষ্ঠা করব। এটা আমার স্বপ্ন। যেখানে শিক্ষার্থীদের আমি বেসিক শিক্ষার মাধ্যমে গড়ে তুলব। ওদের মধ্যে কেউ যদি চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস ক্যাডার হয় তাহলে আমি মনে করব আমি সেটা অর্জন করেছি। ওদের মাঝেই আমি আছি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence