রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

‌‘নামাজ না পড়ায়’ ছাত্রকে ছুরিকাঘাত, প্রতিবাদে ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান

  © টিডিসি ফটো

কথা কাটাকাটির জেরে নিজ মেসে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থা করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার পর এ অবস্থান নেন তারা।

এসময় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগানের প্রশাসনের কাছে তাদের দাবি জানান, 'আমার ভাই আহত কেন? প্রশাসন জবাব চাই', 'সন্ত্রাসীদের কালো হাত ভেঙে দাও মুচরে দাও', 'আমার ভাই রক্ত ঝরে, প্রশাসন জবাব চাই?, 'WE WANT JUSTICE',

এসময় আহত শিক্ষার্থীর বন্ধু ইবরাহীম বলেন, হিমেল ভাইয়ের রক্তের দাগ না শুকাইতেই আমার বন্ধুকে ছুরিকাঘাতে আহত করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রক্তাক্ত অবস্থায় আমার বন্ধু ভর্তি আছে। এভাবে আর কত রক্ত আমাদের দিতে হবে। আমাদেরকে দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক মনে করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপদ আইন করা সময়ের দাবি'।

এছাড়া আহত শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা ও যাবতীয় খরচ পরিবহনসহ দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধের গ্রেফতারের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলন চলাকালে সেখানে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ আহমেদ নকীবসহ প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

আন্দোলন এক পর্যায়ে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থী আশ্বস্ত করে বলেন, গতকাল বিনোদপুর একালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপরে যে অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা গতকাল রাতে খবর পাওয়ার পর থেকেই তার সুচিকিৎসার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। আহত এই শিক্ষার্থীর যাবতীয় ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া তার সুচিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।

অপরাধীদের গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ছাত্রাবাসের মালিককে পুলিশ কাস্টডিতে নেয়া হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীরা আটক হবে বলে আশ্বস্ত করলে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, ছুরিকাঘাতে সাফফাত নাঈম নাফি নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন ধরমপুরের ‘এন.আর ছাত্রাবাসে’ ঘটনাটি ঘটে। আহত শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আহত নাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষ পড়াশোনা করছেন। মতিহার হলের আবাসিক এই শিক্ষার্থীর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে তাকে নিয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া হয়।

সকালে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে আহত শিক্ষার্থীকে দেখতে যান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা ড. তারেক নূর।

ঘটনার বিষয়ে প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, নামাজ না পড়াকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে মেসের কয়েকজন জুনিয়রের ঝামেলা হয় বলে জেনেছি। এ নিয়ে রাতে মেসে মীমাংসা বৈঠকও হয়। মীমাংসায় মেস মালিকও ছিলেন। মেসটিতে থাকলে নামাজ বাধ্যতামূলক। নাফি মসজিদে গিয়ে নামাজ না পড়া থেকে ঝামেলার সূত্রপাত হয়। রাতে বৈঠকের পর তাকে বহিরাগত কয়েকজন মেসে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে আহত করে। তবে আহত শিক্ষার্থী অবস্থা জটিল হওয়ায় তার কাছ থেকে ঘটনার সঠিক ব্যাখ্যা জানা যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ