ঢাবিতে রুম নিয়ে দুই অনুষদের দ্বন্দ্ব, ভোগান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
- মো. জাফর আলী, ঢাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৬:২৮ PM , আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:২৯ PM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনে পর্যাপ্ত রুম না থাকায় বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কলা অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সব বিভাগের কার্যক্রম নিজস্ব ভবনে শিফট না করায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে বিনা নোটিশে রুম সিলগালা, পরিত্যক্ত রুমের তালা ভেঙ্গে দখলের ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।
সর্বশেষ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের কলাভবনে অবস্থিত একটি ল্যাবের তিনটি রুম কোনো নোটিশ ছাড়াই তালাবদ্ধ করে সিলগালা করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা আজ রবিবার (৫ ডিসেম্বর) উপাচার্য কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এ পর্যন্ত কলা ভবন থেকে ৮০টিরও বেশি রুম খালি করা হয়েছে। বাকিগুলোর নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং নোটিশ দিয়ে পর্যায়ক্রমে খালি করা হবে। আমরা নিয়মের বাইরে কোন কিছু করতে পছন্দ করি না।
যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের যে তিনটি রুম নিয়ে সমস্যা হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে তিনি বলেন, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগ কলা ভবনে তাদের ৩টি রুমে ৫০ লাখ টাকার জিনিসপত্র থাকার কথা বলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি সেখানে গিয়ে দেখবে আসলে তা সত্যি কিনা। তারপর নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো এক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে আমরা একটি মিটিং করবো এবং সেখানে সমস্যাগুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে অনেক আগে থেকেই অন্যান্য অনুষদভূক্ত বিভাগগুলির শিক্ষা ও পাঠদানসহ সকল অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছিল। এর মধ্যে জীববিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান ও এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি, স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ১৬টি বিভাগের অধিকাংশই উল্লেখযোগ্য। যার কারণে, কলা অনুষদভুক্ত বিভাগসহ এখানে যে বিভাগগুলোর কার্যক্রম পরিচালিত হতো তাদের সবাইকেই ক্লাসরুম বা প্রয়োজনীয় রুম সংকটের মুখোমুখি হতে হতো বরাবরই।
আরও পড়ুন: ঢাবির যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ল্যাব-ক্লিনিকে তালা, বিক্ষোভ
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হলে অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন, উন্নয়ন অধ্যয়ন, অপরাধ বিজ্ঞান, যোগাযোগ বৈকল্য, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন ও জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগসহ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পপুলেশন সায়েন্সেস এবং উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বাদে অধিকাংশ বিভাগই নবনির্মিত এই ভবনে স্থানান্তরিত হয়। এ বিভাগগুলো স্থানান্তরিত হওয়া স্বত্ত্বেও কলা ভবনে যেন কাটছেই না রুম সংকট।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকাংশ বিভাগের অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নতুন ভবনে তাদের ক্লাসরুম থাকলেও শিক্ষকদের রুম, ল্যাব এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহারের রুম ব্যবস্থা হয়ে উঠছে না।
সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ কয়েকটি বিভাগের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বিভাগে ২০ জনেরও অধিক করে শিক্ষক রয়েছেন, আর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে প্রতি বিভাগের শিক্ষকদের জন্য রুম আছে ৮/১০টি করে। এজন্য বাধ্য হয়েই কলা ভবনের রুমই অনেক শিক্ষকদের ব্যবহার করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, কলা অনুষদ বা এর অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো চাচ্ছে যে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে স্থানান্তরিত বিভাগগুলো কলা ভবনে না এসে ওখানেই তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করুক।
এ অবস্থায় দুই অনুষদেরই চাহিদা দুইরকম হওয়াতে চলছে আলোচনা-সমালোচনা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। সম্প্রতি কলা ভবনে অবস্থিত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের অডিও ও স্পিচ ল্যাবে (২০৮৮, ২০৮৯ ও ২০৯১নং রুম) কলা অনুষদ কর্তৃপক্ষের বিনা নোটিশে সিলগালা করার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে তা পরবর্তীতে খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর জীব বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম সংকটের কারণ দেখিয়ে কলা ভবনের তালাবদ্ধ ৩০৭২ নম্বর রুমটি দখলে নেন।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ক্লাসরুম সংকট: তালা ভেঙে পরিত্যক্ত রুম দখলে নিলেন শিক্ষার্থীরা
তখন ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছিলেন, তাদের ক্লাসরুম সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এজন্য সময়মতো অনেক শিডিউল ক্লাসও করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোন সুরাহা দিতে পারেননি। এজন্য নিজেরাই পরিত্যক্ত রুমটি দখলে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকাংশ বিভাগগুলোর শিক্ষকদের রুম আমরা ম্যানেজ করতে পেরেছি। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের জন্য কিছু রুম লাগবে, এজন্য এ ব্যাপারটা স্পেস বরাদ্দ অফিসকে অবহিত করেছি যাতে তারা এর ব্যবস্থা করেন। আর পপুলেশন সাইন্স, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ ও নৃবিজ্ঞান আমাদের এই তিনটি বিভাগ একদমই স্থানান্তর করতে পারছেনা। কারণ, সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের ১১ তলায় অলরেডি ১৩টি বিভাগ আছে। আর জায়গা নেই।
তিনি আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর ছয়তলা থেকে কনস্ট্রাকশন করেছি এবং এক একেকটি ফ্লোরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ছোট ছোট বিভাগগুলোকে রেখেছি। শুধুমাত্র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগই একটা ফ্লোর পেয়েছে। আমি ডিন হিসেবে প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মাননীয় উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করছি।
কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ধারণা ছিল, সামাজিক বিজ্ঞান ভবন হওয়ার পর এই অনুষদের সবগুলো বিভাগ ওখানে চলে যাবে। কিন্তু তাদের চারটা বিভাগ এখনও কলা ভবনেই রয়ে যায়। এর মধ্যে অনেকগুলো বিভাগের ৪/৫ জন করে শিক্ষকের রুমের ব্যবস্থা হয়নি বলে এখানেই থেকে যায়। এ সমস্যা সমাধানে আমরা একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছি, যে রুমগুলো ফাঁকা হয়েছে সেগুলো আমরা এখন পর্যন্ত বুঝে পাইনি।
তিনি বলেন, এ নিয়ে কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় বন্টন কমিটির একটা মিটিং ছিলো আমাদের। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে রুমগুলো ফাঁকা রয়েছে সেগুলো কেন্দ্রীয় বন্টন কমিটি পর্যায়ক্রমে নিয়ন্ত্রণে নিবে এবং পরবর্তীতে আরেকটি কমিটি করে সেগুলো কলা অনুষদে বন্টন করা হবে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের শিক্ষকদের বসার সমস্যা এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম জটিলতা থাকার পরও আমরা দীর্ঘদিন ধরে সবাইকে শুধু আশ্রয় দিয়েছি, কিন্তু আশ্রয় পাইনি। আশা করছি অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।