জাবিতে আবারও ঈদ সালামি দেওয়ার গুঞ্জন
- জাবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫০ PM , আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৭:৫০ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আবারও ঈদ সালামি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে এবার উপাচার্য নয়, বরং অভিযোগের তীর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের গুঞ্জনও চলছে।
ঈদের পর থেকে টাকা ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ক্যাম্পাসে গুঞ্জন চলছিলো। সম্প্রতি একটি চিঠির মাধ্যমে এ ঘটনার বিচার দাবি করে ‘দুর্নীতি বিরোধী ঐক্য মঞ্চ’ নামের একটি প্লাটফর্ম। এরপর থেকে ঘটনাটি ক্যাম্পাসের সর্বমহলে আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানায়, গেল ঈদুল আযহার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ছয়টি হলের ঠিকাদারদের কাছ থেকে ঈদ সালামি বাবদ এক কোটি টাকা নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। এদের মধ্যে তিন জন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ এবং একজন সহকারি প্রক্টর। পরে সেখান থেকে ৫০ লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তিন নেতাকে ডেকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে একজন ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা, একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং একজন সাংগঠনিক সম্পাদক। আর বাকি ৫০ লাখ টাকা চার শিক্ষক ও এক কর্মকর্তা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্রলীগ নেতা জানান, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পাওয়া ৫০ লাখ টাকা গুটিকয়েক ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে বন্টন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৯তম ব্যাচের একজন, ৪১তম ব্যাচের ১০ জন ও ৪২তম ব্যাচের তিনজন ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। মূলত টাকা পাওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতেই এতো কম সংখ্যক লোকের মাঝে এ টাকা বণ্টন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে ক্যাম্পাসে ঈদ সালামির গুঞ্জন শুরু হলে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দেয়। টাকার বিষয়ে ছাত্রলীগের সিনিয়রদের জিজ্ঞেস করলে তারা বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যায় বলে অভিযোগ জুনিয়র নেতাকর্মীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক সম্পাদক বলেন, ‘টাকা প্রদানের গুঞ্জন শুরু হওয়ার পর থেকে ভাইদের সাথে যোগাযোগ করছি। তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। বলেছে যে, “আমরা টাকা পেলে তোরাও পাবি।”
কিন্তু তারা জুনিয়রদের টাকার ভাগ না দিয়ে নিজেরাই সব টাকা মেরে দিয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ নতুন নয়। এই অভিযোগে গত মে মাসে প্রকল্প পরিচালককে নির্মাণাধীন ১৮ নম্বর হলে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মূলত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্রলীগসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে এই টাকা প্রদান করতে পারেন।’
টাকা ভাগবাটোয়ারার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা ঘটনা অস্বীকার করেন। তবে এক নেতা জানান, ‘সামনে উন্নয়ন প্রকল্পের ৫০০ কোটি টাকার টেন্ডার আসছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও ছাত্রলীগেরই একটি অংশ আমাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এই চক্রান্তের অংশ হিসেবেই তারা এসব গুঞ্জন ছড়াচ্ছে।’
আপনাদেরকে ক্যাম্পাস থেকে কেন বিতাড়িত করতে চাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সেই ছাত্রলীগে নেতা বলেন, ‘আমরা নতুন টেন্ডারের টাকার জন্য চাপ দিতে পারি। এই ভয়ে তারা এসব চক্রান্ত করছে।’
এদিকে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা নেওয়া ও ভাগ বাটোয়ারার অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষকরা। তারা বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা নেয়া বা ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ পুরোপুরি আজগুবি, মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ বিষয় বলার কিছুই নেই। এটি একদম হাস্যকর।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের একজন ১৮ নম্বর হলের ঘটনা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি ১৮ নম্বর হলের নির্মাণ কমিটির সদস্য। ওই দিন পিডি’কে (প্রকল্প পরিচালক) আটকে রাখার বিষয়টি আমিই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলাম। আমিও চাই এ ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। পাশাপাশি দুদকে দেওয়া চিঠিতে তার নাম যুক্ত করার নিন্দাও জানান তিনি।
অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও হল মেরামত বাবদ বরাদ্দকৃত ৪ কোটি টাকা থেকে ছাত্রলীগকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ঈদুল আযহার সালামী প্রদানেরও অভিযোগ রয়েছে। এর আগে গত মে মাসে ঈদুল ফিতরেও হল ভিত্তিক টাকা প্রদানের অভিযোগ উঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক হলের নেতারা জানান, ছেলেদের হলগুলোতে প্রত্যেক গ্রুপকে সালামি বাবদ ৩০ হাজার টাকা প্রদান করেন হল প্রভোস্ট। ছেলেদের আটটি হলের মধ্যে ছয়টি হলে দুইটি করে গ্রুপ আছে। বাকি দুটি হলে একটি করে গ্রুপ। এছাড়া মেয়েদের হলগুলো থেকে মোট ৬০ হাজার টাকা নিয়ে নেত্রীদের মাঝে বণ্টন করা হয়।