অক্সিজেন সিলিন্ডার পরিবর্তনের সময় দেননি ঢাবি ছাত্র
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০৬:৩০ PM , আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২১, ০৬:৩০ PM
অকালে ঝরে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরেকটি মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাণ। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা শিক্ষার্থী ধনঞ্জয় মণ্ডল।
বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে যেন আশার আলো হয়ে উঠেছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামের দারিদ্র পরিবারের এই সন্তান। তবে তার আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারের সবাই স্তম্ভিত। এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না খুলনার কয়রা উপজেলার গড়িয়াবাড়ি গ্রামের কেউই।
খুলনা শহর থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরের গ্রাম গড়িয়াবাড়ি। এই গ্রামের বাসিন্দা অর্জুন মণ্ডলের ছেলে ধনঞ্জয়। অর্জুনের তিন ছেলে। ছোট ছেলে বিজন মণ্ডল খুলনা বি এল কলেজে পড়াশোনা করেন। মেজ ছেলে মানিক মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া ধরেন অর্জুন। দুজনে মিলে যা আয় করেন, তা দিয়ে চলে সংসার। টাকা বাঁচিয়ে বহু কষ্টে তাঁরা বড় ছেলে ধনঞ্জয় ও ছোট ছেলে বিজনকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন।
লেখাপড়া শেষ করেছেন বড় ছেলে ধনঞ্জয়। বাবা-মার স্বপ্ন চাকরি করবে বড় ছেলে ধনঞ্জয়। সব স্বপ্ন শেষ মহামারী কোরানার এক ছোবলে। জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৪ আগস্ট মারা যান ধনঞ্জয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা ধনঞ্জয় পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচাতে ছিলেন সংকল্পবদ্ধ। সে জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার পথে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন।
৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত যান। এরপর নিজেকে আরও বেশি প্রস্তুত করে নেন। ৪০তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় টিকেছেন। ভাইভার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জোরেশোরেই। করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনায় মগ্ন ছিলেন তিনি। সেই ধনঞ্জয় সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে।
একই গ্রামের মেয়ে সাগরিকা। ২০১৯ সালে তাঁকে বিয়ে করেন ধনঞ্জয়। পাঁচ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে যেন অকুল পাথারে পড়েছেন সাগরিকা। তিনি স্নাতক পাস। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সাগরিকা। এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা চাইছেন, সাগরিকার জন্য একটা চাকরি। সেটি হলে বেঁচে যাবে পরিবারটি। মানুষ হতে পারবে ধনঞ্জয়ে ছোট্ট শিশুটি।
মেজ ভাই মানিক মণ্ডল বলেন, কয়েক দিন আগে হালকা জ্বর আসে ধনঞ্জয়ের। গ্রাম্য এক চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে খাচ্ছিলেন। ২৩ আগস্ট রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তবে পরদিন ভোরের দিকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সকালে ভাত খেয়ে ঘরের বাইরে যান। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসেন।
“ততক্ষণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। চিকিৎসক এসে পরীক্ষা করে দেখেন, শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা খুব কম। দ্রুত বাড়তি অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাশের এক জায়গা থেকে সিলিন্ডার অক্সিজেন আনা হয়। সেই সিলিন্ডারের অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে আরেকটি আনার চেষ্টা চলছিল। এর ফাঁকে বেলা একটার দিকে মারা যান ধনঞ্জয়। তাঁর আর কোনো অসুখ ছিল, এমনটা জানা নেই পরিবারের কারও।”