চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

খাবারের ‘নোংরা’ ডাইনিং-ক্যান্টিনে বসতেও ইচ্ছে করে না শিক্ষার্থীদের, দামও চড়া

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিন-ডাইনিংয়ে শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পরিবেশে খাবার পরিবেশন যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হোটেল, ক্যান্টিন এবং ডাইনিংগুলোর নিয়মে পরিণত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো মেন্যু ও মূল্যমান না থাকায় চড়া দামেই এসব যা-তা রান্না খাচ্ছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তবে কিছু শিক্ষার্থী হলে নিজেদের মতো করে রান্না করে খাওয়ার চেষ্টা করলেও ‘বিদ্যুৎ অপচয়ের’ অজুহাতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলে খাবার রান্নায় সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ অপচয় করে রান্না করা যাবে না। এ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংগুলোর পরিবেশ ও খাবারের মান ঠিক করতে হবে। এটা বাস্তবায়ন করা না গেলে রান্নার বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। সুশাসন নিশ্চিত হলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। খাবারের মান অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিগগিরই আমরা এসব বিষয় সমাধান করবো। -রিফাত রহমান, সহকারী প্রক্টর

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সিন্ডিকেটের কারণে হোটেলগুলোর খাবারের দাম কমানো যাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হোটেল মালিক বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমিও চাই খাবারের দাম কমাতে। কিন্তু আমি একা দাম কমিয়ে বেশিদিন শিক্ষার্থীদের খাওয়াতে পারব না। এখানে দোকান-মালিক সমিতি আছে। যদি খাবারের দাম আমি একা কম করি তাহলে অন্যান্য হোটেল-মালিক, দোকান মালিক-সমিতির কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ দেবে। তখন আমি আবার দাম বাড়াতে বাধ্য হব।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে খাবারের দাম ও মানোন্নয়ন সম্ভব বলে মনে করেন এ দোকান-মালিক। তিনি বলেন, প্রক্টরের হস্তক্ষেপে দাম কমানো সম্ভব। এখন আমি মাছ-মাংস ৬০ টাকা বিক্রি করি। প্রক্টর চাইলে আমি তা ৪৫-৫০ টাকায়ও বিক্রি করতে পারবো। কিন্তু এই নীতিমালা সবার জন্য প্রযোজ্য করতে হবে।

বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডাইনিংয়ের খাবারের মান একদমই ভালো না। নিম্নমানের এ খাবার খেয়ে দৈনন্দিন পুষ্টির চাহিদা মেটানো অসম্ভব। এছাড়া যে দু’একটা ক্যান্টিন রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও একই। এসব ক্যান্টিনগুলোতেও খাবারের মান নিম্নমানের এবং পরিবেশন করা হয় নোংরা পরিবেশে।

এছাড়া ডাইনিং ও ক্যান্টিনের মাছ ও মাংসের পিছগুলোও খুব ছোট থাকে। দোকান-মালিকরা কোনোমতে এ খাবার শিক্ষার্থীদের প্লেটে তুলে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ হলে রান্না করে খাবার খাওয়া শুরু করেন। এখানেও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়েন তারা।

খাবারের দোকানগুলোতে গিয়ে খাওয়া তো দূরের কথা, বসতেও ইচ্ছে হয় না। কোনো একটা দোকান নেই যে, পেটভরে একটু খাবো। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কি করা উচিৎ? -মাজহারুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, এএফ রহমান হল

হলে রান্নায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া এএফ রহমান হলের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, হলে বৈদ্যুতিক লাইনগুলো দুর্বল হওয়ায় হলের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক হিটার, রাইস কুকারসহ যাবতীয় রান্নার কাজ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হল। প্রকৌশল দপ্তরের বিদ্যুৎ মিস্ত্রির অভিযোগ, অবৈধভাবে হিটার ও রাইস কুকার জ্বালানোর ফলে হলের বৈদ্যুতিক তার, প্যানেল বোর্ডের সুইচ ও সার্কিট ব্রেকার বারবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ছাত্ররা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

তবে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন হোটেল, ডাইনিং ও ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের মান, মূল্য তালিকা ঠিক না করে আমাদের দমনের চেষ্টা করছেন। ডাইনিং এবং ক্যান্টিনের খাবার গলা দিয়ে নামে না, হোটেলগুলোতে খাবারের দাম আকাশচুম্বী। বেঁচে থাকার জন্য মাঝেমধ্যে রান্না করতে ইচ্ছে হয়। পড়াশোনা টিউশন সবকিছু সামলে রান্না করাও কষ্টদায়ক। ডাইনিংয়ে মানসম্মত খাবার থাকলে সময় নষ্ট করে রান্না করার কোনো প্রশ্নই উঠে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এএফ রহমান হলের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, খাবারের দোকানগুলোতে গিয়ে খাওয়া তো দূরের কথা, বসতেও ইচ্ছে হয় না। কোনো একটা দোকান নেই যে, পেটভরে একটু খাবো। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কি করা উচিৎ? হলের খাবারেরও মান ঠিক নাই। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়েই হয়তো রান্না করে। এছাড়া ক্যান্টিন এবং হোটেলগুলোর অবস্থাও একই। প্রশাসন সেগুলো ঠিক না করে শিক্ষার্থীদের দমনের চেষ্টা করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাইনিং ম্যানেজার বলেন, আমরা চেষ্টা করি যাতে ছাত্ররা চারটা ভাত খেতে পারে। তবে অনেকসময় খাবারে সমস্যাও হয়। রান্না মাঝে মধ্যে খারাপও হয়। আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিৎ, যারা রান্না করে খেতে চায় তাদের সে সুযোগ করে দেওয়া। হলগুলোর প্রতি ফ্লোরে গ্যাসের চুলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে আমিও চাই খাবারের দাম কমাতে। কিন্তু আমি একা দাম কমিয়ে বেশিদিন শিক্ষার্থীদের খাওয়াতে পারব না। তবে প্রক্টরের হস্তক্ষেপে দাম কমানো সম্ভব। -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকান-মালিক

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে এএফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ যাতে অপচয় না হয়, সেজন্য ওই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া খাবারের মান এবং পরিবেশ নিয়ে আমরা আলাদা কমিটি গঠন করেছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে চাই। সুশাসন নিশ্চিত হলে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে। খাবারের মান অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিগগিরই আমরা এসব বিষয় সমাধান করবো।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence