দেশে ফেরা হয়নি, ঢাবিতেই ঈদের আনন্দ বিদেশি শিক্ষার্থীদের 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল  © টিডিসি ফটো

বছর ঘুরে রমজান এলেই সবার মনে একটাই চিন্তা থাকে, কবে রোজা শেষ হবে। কবে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উদযাপন করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা যেন অপেক্ষায় থাকেন, কবে থেকে ছুটি হবে। কবে তারা বাড়ি গিয়ে পরিবারের সঙ্গে রোজা রাখবে ও ঈদ উদযাপন করবে। সেদিক থেকে ব্যতিক্রম ঢাবিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ফ্লাইটের ভাড়া বেশি হওয়ায় এবং নানা জটিলতায় নিজ দেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করা হয় না তাদের। সে কারণে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পি জে  হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে অন্য বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গেই এবার ঈদ উদযাপন করবে।

বিশ্ববিদ্যালেয়ে পোস্ট ডক্টরেট করছেন ভারতের জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দা রেজা শাফিন। তিনি বলেন, ‘পরিবারকে তো মিস করবই। আমার পরিকল্পনা হলো- যত মুসলমান ছাত্র এখানে থাকবে, সবাইকে নিয়ে ঈদ করা। সবাই একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব। আমার স্ত্রী এখানে আছে। তারপরও আব্বু-আম্মু, ভাই-বোন, সবার থেকে দূরে আছি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে অনেকদিন যাবৎ আছি। বাংলাদেশ আমার কাছে পরিবারের মতো হয়ে গেছে। আমি যখন বর্ডার ক্রস করে এখানে আসি, তখন মনে হয় বাড়িতে এসেছি। আমার পরিবারের অন্যরা ইউরোপ গেছে। তবে আমার মনে হচ্ছে, আমি ভাগ্যবান। আমি বাংলাদেশে এসেছি। কোনো সমস্যা নেই। খরচের দিক থেকেও সুবিধা পাই।’

পি জে হার্টগ হলে ১৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের মধ্যে তিনজন ইদের ছুটিতে দেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক এবং বাকি দু’জন ভুটানি। তারা প্রত্যেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বী। ঈদের দীর্ঘ ছুটি তারা পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন বলে জানিয়েছে হল প্রশাসন। ঢাবির বাকি ১১ জনসহ বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যারা ইন্টারন্যাশনাল হলে থাকেন, তাদের জন্য হলেই ঈদের নামাজ ও খাবারের আয়োজন করা হয়।

ঈদ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দীর্ঘ ছুটি পেয়েছেন। এর আগেই অবশ্য অনেকে পাড়ি জমিয়েছে বাড়িতে। বাকি শিক্ষার্থীরা ছুটির পর ধীরে ধীরে নিজ এলাকায় যাচ্ছেন। বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি হলের ক্যান্টিনও। তবে পি জে হার্টগ হলে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, পি জে হার্টগ হলে ১৪ জন শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের মধ্যে তিনজন ইদের ছুটিতে দেশে গিয়েছেন। এর মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিক এবং বাকি দু’জন ভুটানি। তারা প্রত্যেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বী। ঈদের দীর্ঘ ছুটি তারা পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন বলে জানিয়েছে হল প্রশাসন। ঢাবির বাকি ১১ জনসহ বিভিন্ন মেডিকেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী যারা ইন্টারন্যাশনাল হলে থাকেন, তাদের জন্য হলেই ঈদের নামাজ ও খাবারের আয়োজন করা হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে একা অনুভব না করে, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয় বলে জানিয়েছে হল প্রশাসন।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের সেবা দিতে হলে থেকে যাচ্ছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও। জানা গেছে, হলের ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন করে ঈদে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান। বাকি ১০ জন হলে থেকে এখানেই ঈদ উদযাপন করেন এবং শিক্ষার্থীদের সেবায় নিযুক্ত থাকনে। ঢাবিতে ঈদ উদযাপনে অখুশি নন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। পরিবারের কাছে থাকতে না পারলেও এখানেই তৈরি হয়েছে তাদের নতুন পরিবার। রয়েছে বন্ধু-বান্ধবও।

ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগে পড়ছেন নাইজেরিয়ান শিক্ষার্থী ইব্রাহিম। তার ভাষ্য, ‘পরিবার থেকে বহুদিন যাবৎ দূরে আছি। খারাপ তো একটু লাগছেই, তাদেরকে ছেড়ে  ঈদ পালন করতে। তবে এখানে আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এখানে যে বন্ধুরা আছে, সবার সঙ্গে ঈদ করব।’ ফ্লাইটের অনেক খরচের কারণে দেশে যেতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন: আজ জুমাতুল বিদা, দুই কারণে মর্যাদাপূর্ণ দিনটি

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের নেপালি শিক্ষার্থী ইশ্বর প্রসাদ বলেন, ‘ঈদের দীর্ঘ ছুটি পেয়েছি। এখানেই মুসলিম বন্ধুদের সঙ্গে ঈদ করব। ফ্লাইটের ভাড়া অনেক বেশি, তাই ছুটি পেলেও দেশে যাচ্ছি না।’

এ স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের এখানে আফ্রিকাসহ কয়েকটি দেশের মুসলিম শিক্ষার্থী রয়েছে। ঈদের দিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করা হয়। আমরা হল থেকে সকালে সেমাইয়ের আয়োজন করি। তারপর তারা কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়ে। আমাদের মুসলিম ছাত্র কম। এরমধ্যে কেউ কেউ বাড়ি যায়।’


সর্বশেষ সংবাদ