সাংবাদিককে মারধরে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের ‘মানবিক’ ক্ষমা চবি প্রশাসনের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগো

সাংবাদিকের গায়ে চা ঢেলে মারধর করা ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারাদেশ 'মানবিক' বিবেচনায় প্রত্যাহার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হেল্থ এন্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। 

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত ৪ অক্টোবর বোর্ড অফ রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় নেওয়া হয়। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কারণ হিসেবে 'মানবিকতা'কে প্রাধান্য দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের মতে অভিযুক্ত ২ নেতার বাবা-মা এসে কান্নাকাটি করেছে এবং মুচলেকা দিয়েছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করলে তারা পরীক্ষায় বসতে পারতো না এবং তাদের ছাত্রত্ব চলে যেতো।

গায়ে গরম চা ঢেলে গত ১৯ জুন রাতে ক্যাম্পাসের রেল স্টেশনে ঢাকা স্টেট পত্রিকার সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদকে পিটিয়ে জখম করায় ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে। বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, বহিষ্কার হওয়া কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বা অন্য কোনো অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও অবস্থান করতে পারবেন না। যদিও এসব আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঠিকই হলে অবস্থান করেছে তারা। 

তবে মেয়াদোত্তীর্ণের আগেই 'পরীক্ষায়' অংশ নিতে বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়েছে।  বহিষ্কৃতরা হলেন চবি ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হান। তারা চবি ছাত্রলীগের উপগ্রুপ সিএফসির কর্মী এবং দু'জনেই আমানত হলে অবস্থান করেন।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া দুই ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে হল দখল, ভাঙচুর, মারামারি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তারা মূলত ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাদাফ খানের ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে বেড়ায়। 

চবি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে ক্ষমতাসীন দলের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের প্রতি নতজানু অবস্থার বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করেছে সংশ্লিষ্টরা। 
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ শিক্ষকদের দাবি বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার ও তার প্রশাসন ক্ষমতা রক্ষার্থে সব ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ। 

অপরাধীদের শাস্তি না হওয়া এক প্রকার বিচারহীনতার সংস্কৃতির নামান্তর বলে উল্লেখ করে সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, যারা অপরাধ করে, অপরাধ প্রমানিত হলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু সেটা না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানে অপরাধ বেড়ে যাবে। 

এবিষয়ে চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী বলেন, সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে ছাড় দিতে থাকলে অন্যরাও অপরাধের প্রতি উৎসাহিত হবেন।  

ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আমার সাথে রীতিমতো প্রতারণা ও অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। 

সাংবাদিক মারধরে বহিষ্কৃতদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের ঘটনায় চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু বলেন, এই প্রশাসনের নির্লিপ্ততা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে অপরাধীদের কাছে জিম্মি চবি প্রশাসন। বার বার অপরাধীদের ক্ষমা করে সেটিই প্রমাণ করেছে তারা। এই প্রশাসনের কাছে সুবিচার প্রত্যাশা করাও যেন পাপ৷ এই প্রশাসনের জন্য শুধুই নিন্দা। ছাত্রলীগের প্রতি মানবিকতার সর্বোচ্চ উদাহরণ তৈরি করতে গিয়ে প্রশাসন নির্লজ্জতার সীমাও অতিক্রম করেছে। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য সচিব ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, তাদের বহিষ্কারের ইতিমধ্যে ৪ মাস শেষ। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং অভিভাবকদের মুচলেকায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence