‘চবি প্রশাসন নির্লজ্জ ও মেরুদণ্ডহীন’
- চবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪৭ PM , আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৪ PM
সমকালের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন বলেছেন, ‘চবি প্রশাসনের মতো এমন মেরুদণ্ডহীন, নির্লজ্জ প্রশাসন আমরা কখনো দেখিনি’। আজ মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস) ও চিটাগং ইউনিভার্সিটি এক্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের (সিইউজিএন) উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে বলতে চাই, আপনি বেশিদিন এ চেয়ারে থাকতে পারবেন না। তবে সম্মানের সঙ্গে যাবেন কি-না সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি ছাত্রলীগের মাথা না হয়ে সকল শিক্ষার্থীর মাথা হোন। এমন শাস্তির ব্যবস্থা করুণ, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সাংবাদিকদের গায়ে হাত তোলার সাহস না পায়।
মানববন্ধনে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খন্দকার আলী আর রাজি বলেন, মারজান আক্তার, দোস্ত মোহাম্মদ, মোশাররফ শাহ- একে একে আমাদের বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন। প্রশাসন এক্ষেত্রে নূন্যতম দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। আমার মনে হয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বরং খুশি হয়েছে সাংবাদিকদের মারধর করায়। কারণ সাংবাদিকরা প্রশাসনের বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম তুলে ধরছে।
এসময় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, আজকে সাংবাদিকদের মানববন্ধনে দাঁড়াতে হয়েছে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র সবার জন্য বিব্রতকর। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শুধুমাত্র মুখে না বলে, কাজে তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানাচ্ছি প্রশাসনের প্রতি।
আরও পড়ুন: খুবির প্রেমিককে লাইভে রেখে মেডিকেল ছাত্রীর আত্মহত্যা
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ম. শামছুল ইসলাম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো ব্যবস্থা নেয়। অথচ যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাদের বিভাগে শাস্তির নোটিশ যায় না। তারা অনায়াসে পরীক্ষায় অংশ নেন। আজকে বহিষ্কৃত, অছাত্ররা হলে অবস্থান করছে। এতে করে আপনাদের ব্যর্থতা সুস্পষ্ট হয়েছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের ডেপুটি এডিটর তপন চক্রবর্তী বলেন, আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর চালান, এরপর আপনারা সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালান। আপনারা কি সত্যিই ছাত্রলীগ করেন কি-না আপনাদের আচরণ দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। আপনাদের অবস্থা তো শিবিরের চেয়েও খারাপ।
চবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, যারা মোশাররফ শাহ এর রক্ত ঝরিয়েছে, তারা দেশের সকল সাংবাদিকদের রক্ত ঝরিয়েছে। সাংবাদিকরা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। আজকে সাংবাদিকরাই যদি নিরাপদ না হন, তাহলে এখানে শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ঘটনায় শুধুমাত্র আশ্বস্ত করেছেন, অথচ সময়ক্ষেপণ করে বিচারের নামে প্রহসন করেছেন। আজকে বহিস্কৃত সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এটা আপনাদের ব্যর্থতা। সাংবাদিক নির্যাতনের সকল ঘটনায় প্রশাসন দৃষ্টান্তমূলত ব্যবস্থা নিয়ে এ কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সমাপ্ত করুন।
আরও পড়ুন: ‘শিবিরের চেয়েও খারাপ ছাত্রলীগ’
এসময় আরো বক্তব্য প্রদান করেন চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও সিইউজেএন এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, চবিসাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরোচিফ ও সিইউজেএন এর সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ, সিইউজেএন এর সভাপতি, চবিসাসের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক আমাদের সময়ের চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ হামিদউল্লাহ, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের ব্যুরো চিফ শিমুল নজরুল ইসলাম, সমকালের রিজিওনাল এডিটর সারোয়ার সুমন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী আজগর চৌধুরী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও চবিসাসের সাবেক সভাপতি শাহাব উদ্দিন নিপু।
চবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমুর সঞ্চালনা ও চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী, চবিসাসের সাবেক সভাপতি সুজন ঘোষ, সৈয়দ বাইজিদ ইমন, ইমরান হোসাইন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাসনীম হাসান, জোবায়ের চৌধুরী এবং সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল্লাহ রাকীব ও মিনহাজ তুহিন।
মানববন্ধন শেষ উপাচার্যের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সাংবাদিককৃন্দ। এসময় দোষীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।