জাবির সেই ছাত্রের টেবিলে ‘দ্য ডেথ’ বই, স্ট্যাটাসে ‘অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি’

মীর মশাররফ হোসেন হলের বি-ব্লকের ১১৫ নাম্বার কক্ষ
মীর মশাররফ হোসেন হলের বি-ব্লকের ১১৫ নাম্বার কক্ষ  © সংগৃহীত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আজ মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন তার সহপাঠীরা। পরে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তারা। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

ওই শিক্ষার্থীর নাম আরাফাত রহমান সিয়াম (২৫)। তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের বি-ব্লকের ১১৫ নাম্বার কক্ষে একা থাকতেন বলে জানান তার সহপাঠীরা। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায়।

এর আগে গতকাল সোমবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টা ১৯ মিনিটে তিনি ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দেন। যার শিরোনাম ‘অন দ্য ওয়ে টু ইটারনিটি (অন্তিম যাত্রার পথে)’। যদিও তার সেই স্ট্যাটাসে সময় আজ ভোর রাত ৪টা ২৫ মিনিট লেখা ছিল। মরদেহ উদ্ধারের সময় তার পড়ার টেবিলে সাধগুরুর ‘দ্য ডেথ’ বইটি পাওয়া যায়। তার সেই স্ট্যাটাসে ব্যক্তিগত জীবনের হতাশাগ্রস্থ থেকে মৃত্যুকে বেঁচে নেওয়া শ্রেয় বলে ইঙ্গিত দেন।
 
 
সেই স্ট্যাটাসের সারমর্ম ছিল, “আজ আমি আমার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। এটি একটি স্বর্গীয় মুহূর্ত। বহুদিন থেকে আমি মেডিটেশন করি। আজকেও অন্যান্য দিনের ন্যায় মেডিটেশনে থাকার সময় কেঁপে উঠি। এ অবস্থায় আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পাই। আমাদের দেহ মূলত সীমাবদ্ধ। কিন্তু আত্মা অসীম। আর আত্মা হচ্ছে শক্তি। মৃত্যুতে এর কিছু হয় না। জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে হলে আগে মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়। মৃত্যুকে ভয় পাওয়া উচিত নয়। আমি এখন জীবনের স্বাদ আস্বাদন করার জন্য প্রস্তুত। আমি জানি পৃথিবীর সকলেই আমার বিরোধীতা করবে।” এর সাথে গসপেল অব জনের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি অংশ জুড়ে দিয়েছিলেন তিনি।
 
 
হলে তার প্রতিবেশী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা জানন, আজ সারাদিন রুম থেকে বের হননি তিনি। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার সহপাঠীসহ অন্যান্য বন্ধুরা মিলে দরজা ভেঙ্গে তাকে দড়িতে ঝুলতে দেখা যায়। দড়ি কেটে দ্রুত তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।
 
টগর দেবনাথ নামে সিয়ামের এক সহপাঠী বলেন, সে হলের বি ব্লকের ১১৫ নম্বর কক্ষে থাকতো। সন্ধ্যার দিকে আমরা রুমের সামনে গিয়ে রুম তালাবদ্ধ পাই। ডাকাডাকি করে না পেলে পরবর্তীতে দরজা ভেঙে দড়িতে ঝুলতে দেখা যায়। আমরা দড়ি কেটে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসি। এখানে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে।
 
তবে আত্মহত্যার কোন সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে তার টেবিলে সাধগুরু নামের ভারতীয় এক আধ্যাত্মিক গুরুর বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। বইটির নাম 'ডেথ; আ বুক ফর অল দোজ হু শ্যাল ডাই'। বইয়ের বিষয়বস্তু এবং ফেসবুক স্ট্যাটাসের ভাষ্য মিলিয়ে সহপাঠীরা বলছেন, এই ব্যক্তির বই ও লেকচার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন তিনি।
 
তবে সহপাঠীদের কাছ থেকে আরও জানা যায়, ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হলেও ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের সাথে শিক্ষাজীবন চালিয়ে নিচ্ছিলেন তিনি। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয়ের উপর বিশেষ পরীক্ষা দিতে হত। শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিলেন সিয়াম।
 
কেউ কেউ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, শিক্ষাজীবন নিয়ে শঙ্কিত থাকার সুযোগ নেই। কারণ তিনি ইতোমধ্যে একটি অনলাইন চাকরিতে ছিলেন। রাত ৯টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে সেন্টারে রাখা হয়েছে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস বলেন, ৭টা ১৫ মিনিটে আমাদের এখানে আনা হয়। আমরা পরীক্ষা করে দেখি আগেই মারা গেছে। আমরা যখন লাশ পাই তখন দেখেছি রশি গলার মধ্যে গেঁথে আছে, ফাঁস লেগেই তার মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা বাকি সিদ্ধান্ত নেবেন।

সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence