ছয় দশকেও ডিজিটালাইজড হয়নি রাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার

রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগাররাবি
রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগাররাবি  © টিডিসি ফটো

প্রায় ছয় দশক আগে ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এরপর এই দীর্ঘ সময়ে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। তবে পরিবর্তন আসেনি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ব্যবস্থাপনায়। এখনো এ গ্রন্থাগারে বই খুঁজতে হয় সেই সনাতন পদ্ধতিতে। আর সেই বই মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতেই ইস্যু করা হয়। 

এমনকি অনেক সময় বই থাকা সত্ত্বেও খুঁজে পান না শিক্ষার্থীরা। কারণ সব মিলিয়ে গ্রন্থাগারে আড়াই লাখের বেশি পাঠ্যবই, আলোচনামূলক বই, জার্নাল, থিসিস, সংবাদপত্র এবং সাময়িকী রয়েছে। প্রযুক্তির সহযোগিতা ছাড়া এত বিপুল সংখ্যক বইয়ের মধ্য থেকে নিজের কাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু গ্রন্থাগারটিতে ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কম্পিউটার মাত্র একটি। যদিও গ্রন্থাগার প্রশাসকরে দাবি, দক্ষ মানুষের অভাবে গ্রন্থাগারে ডিজিটাল করা সম্ভব হচ্ছে না।

এর আগে, শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে ২০১৩ সালে গ্রন্থাগারেকে ডিজিটালাইজডে করতে অটোমেশন পদ্ধতি চালুর কাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন প্রশাসক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে এই উদ্যোগ থেমে যায়। ফলে বই খুঁজতে গিয়ে রীতিমতো যুদ্ধে নামতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। 

এ বিষয়ে গ্রন্থাগারের সাবেক প্রশাসক অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস বলেন, “আমি থাকাকালীন সময়ে অনলাইন জার্নালের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টাও করেছি। এমন ব্যবস্থা করেছিলাম শিক্ষার্থীরা কম্পিউটারে অর্ডার করলেই বইটা তাঁর কাছে চলে আসবে। আবার জমা দেওয়ার সময় নিজেই জমা দেবেন। কারও খাতায় এন্ট্রি করতে হবে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধা বিবেচনা করে সমগ্র গ্রন্থাগারকেই অটোমেশনের আওতায় আনার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু অর্থাভাবে ব্যর্থ হয়েছি।" 

এদিকে, বই খুঁজে পেতে ভোগান্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে ইন্টারনেট সুবিধা এবং গ্রন্থাগারের পরিবেশ নিয়েও। গ্রন্থাগারের বিভিন্ন সমস্যা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব আল হাসান বলেন, “আমি প্রায়ই গ্রন্থাগারে পড়তে আসি। কিন্তু প্রয়োজনীয় বই ঠিকঠাক জায়গায় পাইনা। এছাড়া কর্মচারীরা সবসময়ই উচ্চ শব্দে কথা বলে, যা পড়ার পরিবেশ নষ্ট করে।”

গ্রন্থাগার সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ বছরে গ্রন্থাগারের সাধারণ পাঠকক্ষে শিক্ষার্থী কমেছে ৫ গুণ। ২০১০ সালে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থী বই পড়তেন এই গ্রন্থাগারে। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ জনে! অধিকাংশ সময়ই ফাঁকা থাকে দোতলার পাঠকক্ষ। 

এ বিষয়ে গ্রন্থাগারে প্রশাসক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, "আমাদের গ্রন্থাগার ডিজিটাল না হওয়ার পেছনে প্রধানত কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দক্ষ লোকজনের অভাব। এছাড়া, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আমরা চাইলেও ডিজিটালাইজেশন করতে পারছি না।”

এসময় তিনি আরও বলেন, “ষাটের দশকে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি ছিল মাত্র ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য। তাই এই গ্রন্থাগারকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনার আগে সংস্কার প্রয়োজন। এর জন্য আমরা একজন পরামর্শক নিয়োগ করেছি। তবে এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া।”

উল্লেখ্য, বর্তমানে তিন তলাবিশিষ্ট রাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নিচতলায় রয়েছে ১০০ আসনবিশিষ্ট একটি পাঠকক্ষ। এই কক্ষে শিক্ষার্থীরা চাকরির প্রস্তুতিমূলক পড়াশোনা করেন। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি সাধারণ পাঠকক্ষ, বিজ্ঞান কক্ষ এবং থিসিস কক্ষ। আর তিনতলায় রয়েছে সংবাদপত্র ও সাময়িকী কক্ষ।


সর্বশেষ সংবাদ