গবেষণা মেলায় আরবি হরফে কঙ্কাল নিয়ে যা জানা গেলো

আরবি হরফে কঙ্কাল নিয়ে ব্যতিক্রমী এক পোস্টার প্রদর্শন করা হয়
আরবি হরফে কঙ্কাল নিয়ে ব্যতিক্রমী এক পোস্টার প্রদর্শন করা হয়

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজন করা হয় গবেষণা ও প্রকাশনা মেলা। এই মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টলে স্থান পায় ব্যতিক্রমী এক পোস্টার। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।মেলায় পোস্টারটি প্রদর্শন করেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হোসাইন। এতে দেখানো হয় আরবি বেশ কিছু হরফের মিল রয়েছে মানব কঙ্কালের সাথে। এসকল বর্ণ ব্যবহার হয়েছে হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং আল্লাহ লেখার জন্য।

সমালোচকেরা প্রশ্ন করেছেন গবেষণার মানের ব্যাপারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিভিন্ন ভাষার হরফের সাথে মানুষ অথবা বিভিন্ন প্রাণীদেহের হাড়কে বিভিন্ন ভাবে দেখিয়ে সাদৃশ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই এ ধরনের বিশ্লেষণ যৌক্তিক নয়।

এব্যাপারে অধ্যাপক আবুল হোসাইন জানান, বিষয়টি কোনো গবেষণালব্ধ জ্ঞান বা ফাইন্ডিংস নয়। মানব কঙ্কাল নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে রিভিউ আর্টিকেল লিখেছেন, পরে সেটি পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

অধ্যাপক আবুল হোসাইনের আর্টিকেলটি ‘সিগনিফিক্যান্স অফ দ্যা স্ট্রাকচার অফ হিউম্যান স্কেলটন’ শিরোনামে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকাশ করে আমেরিকান জার্নাল অফ মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড মেডিসিন।

রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হয়ে মানব কঙ্কাল পর্যবেক্ষণের কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক আবুল হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, আমার ফিল্ড রসায়ন। ২০১৬ সালে ড্রাগ নিয়ে কাজ শুরু করি। এ কাজ করতে গিয়ে দেখলাম মানুষের বডির ফান্ডামেন্টাল যে অরগান স্কেলিটন (কঙ্কাল) অনেকটা আরবি অক্ষরের সঙ্গে মিলে যায়। যেহেতু আমি মূল গবেষণার কাজ করতে গিয়ে অ্যানাটমি-সম্পর্কিতসহ বিভিন্ন বই পড়েছি। বইগুলোর কোথায় কী পেয়েছি সেটা লিখে সবগুলোর একটা সামারি আমি প্রকাশ করেছি।’

আরও পড়ুন: শিক্ষাব্যবস্থায় রুপান্তর ঘটানোর চেষ্টা চলছে: শিক্ষামন্ত্রী

তিনি জানান, ‘এটা আমার রসায়নের ফান্ডামেন্টাল গবেষণা আর্টিকেল নয়। এটা একটা রিভিউ আর্টিকেল। আমার সাবজেক্টে কাজ করতে গিয়ে এটা একটা সাইড প্রোডাক্ট। এটা আমি রিভিউ আর্টিকেল হিসেবে মেলায় পোস্টার আকারে শো করেছি। এরপর বিভাগ থেকে যখন বলা হয়েছে এটা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তখন সরিয়ে নিয়েছি। এটা কারও পছন্দ হতে পারে বা না হতে পারে। কারও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করার কোনো ইন্টেনশন আমার ছিল না।

ধর্মের সাথে কঙ্কালকে মিলিয়ে ফেলার ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নিয়ামুল নাসের গণমাধ্যমকে জানান, কেউ একজন অন্ধের মতো কথা বললে তো হয় না। আমার কাছে মনে হয় এগুলো একটা সিস্টেম, শুধু মানব কঙ্কাল কেন, যেকোনো প্রাণীর কঙ্কালের ডিজাইন কাছাকাছি। এই ডিজাইনের মধ্যে ধর্মকে নিয়ে এলে কী ঠিক হবে? এসব কথাবার্তা আমাদের মূর্খতার পরিচয় হবে। কঙ্কালের মধ্যে আমরা আমাদের ধর্ম-সংস্কৃতিকে নিয়ে আসতে পারি না।

রসায়ন বিভাগের স্টলের পোস্টার নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়ে বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহিদা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, একটা কমিটি গঠন করে তাড়াহুড়ো করে দেয়া হয়েছে। আর পোস্টারে এমন কিছু ছিল না যে এত তোলপাড় করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে পাবলিশড প্রকাশনাগুলো দেয়া হয়েছে। পোস্টারের জন্য একটা কমিটি করে দেয়া হয়েছিল । তারাই এটি করেছে।

মেলায় রসায়ন বিভাগের স্টল নিয়ে গঠিত কো-অর্ডিনেট কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. আবু বিন হাসান সুশান গণমাধ্যমকে জানান, শতবর্ষ উপলক্ষে গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া গ্র্যান্ট যারা পেয়েছেন তারা মেলায় প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন বলে সিধান্ত হয়।

তিনি জানান, সেই গ্র্যান্ট আবুল হোসাইনও পেয়েছেন। বলা হয়েছে, রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট হিসেবে কে কোনটা দেবে সেটা তার নিজের রেসপন্সবিলিটি। অধ্যাপক আবুল হোসাইনও দিয়েছেন। মেলায় একটা স্ট্যান্ড ফাঁকা দেখে তিনি ওই পোস্টারটি ঝুলিয়েছেন। তবে সমালোচনা শুরু হলে ওনারটা সরিয়ে আরেক অধ্যাপকের পোস্টার দেয়া হয়।

এব্যাপারে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুস সামাদ গণমাধ্যমকে জানান, সমালোচনা শুরু হওয়ায় বিভাগের দৃষ্টিতে আসে এবং তাকে ডেকে এটি সরিয়ে ফেলতে অনুরোধ করা হয়। পরে তিনি সেটি সরিয়ে ফেলেন।

তিনি বলেন, আমরা বিভাগকে বলেছি যেন ওনাকে সতর্ক করা হয়। আর এটা নিয়ে আমরা উপাচার্যের সাথে কথা বলেছি। তিনিও বলেছেন, ওনাকে সতর্ক করা হোক। অনুষদ থেকেও ওনাকে সতর্ক করা হবে, যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence