নতুন কমিটি পেতে মরিয়া রাবি ছাত্রলীগের পদ-প্রত্যাশীরা

রাবি ছাত্রলীগ
রাবি ছাত্রলীগ   © সম্পাদিত

এক বছরের কমিটি দিয়ে ছয় বছর ধরে চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগ। বারবার নতুন কমিটির গুঞ্জন হলেও শেষ পর্যন্ত আশাহত হয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবে নানা গুঞ্জন-বিতর্ক শেষে এবার নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে এ মাসেই নতুন কমিটির প্রত্যাশায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন পদ-প্রত্যাশী নেতারা। কিন্তু হল কমিটির অজুহাতে বর্তমান নেতৃবৃন্দ পরিকল্পিতভাবে কালক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ তুলেছে এ নেতারা।

২০১৬ সালে রাবি ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলনে গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদ রুনুকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছর মেয়াদি কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালেই এ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ছয় বছর ধরে চলছে এ কমিটি। এমনকি ২৫১ জন বিশিষ্ট এ কমিটির ২৩০ জন নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হয়েছেন। কেননা তাদের অনেকে বিয়ে, চাকরি ও অন্যান্য কারণে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে হাতেগোনা ২১ জন সিনিয়র পদধারী নেতাসহ নতুন কিছু কর্মী ওপর ভর করে অন্ত-দ্বন্দ্বে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ এ প্রবীণ কমিটি।

জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুতই নতুন কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে জেনে বিভিন্ন জায়গায় তদবিরের পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিং জোরদার করছেন পদ-প্রত্যাশী নেতারা। এজন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের দ্বারে দ্বারে ছুটাছুটি করছেন তারা।

আরও পড়ুন শিক্ষা-গবেষণার পাশাপাশি সংস্কৃতিরও প্রাণকেন্দ্র ঢাবি: উপাচার্য

পদ-প্রত্যাশী নেতাদের অভিযোগ, পাঁচ বছর আগের সেই প্রবীণ কমিটি দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। দীর্ঘদিন এক কমিটি দিয়ে দল পরিচালিত হওয়ায় একদিকে যেমন নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠছে না, অন্যদিকে তেমনি বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। এমনকি দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় নড়বড়ে হয়ে পড়েছে শাখা ছাত্রলীগ। তাই নতুন কমিটি ঘোষণার বিকল্প নেই। তবে বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নাম করে পরিকল্পনাভাবে সময়ক্ষেপণ করছেন। তাই দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান এ নেতারা।

বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাজী আমিনুল ইসলাম লিংকন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত এক কমিটি থাকার ফলে দলীয় কোন্দল বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছেন। নিজেদের মধ্যে তেমন কোন শক্ত বন্ধন নেই। যা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় খুবই বিপদজনক। কেননা এই ক্যাম্পাস জামাত-শিবির অধ্যুষিত। ফলে আমাদের এই দলীয় বিশৃঙ্খলার সুযোগ তারা যেকোনো সময় নিতেই পারে। তাই দ্রুত নতুন নেতৃত্ব গঠনের মাধ্যমে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার হাত শক্তিশালী হবে। তবে তা না করে হল কমিটির অজুহাতে কালক্ষেপ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান নেতৃবৃন্দ। যা খুবই হতাশাজনক!

হলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার বিষয়টি কেবল কালক্ষেপণ আখ্যা দিয়ে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েত হক রাজু বলেন, এতকিছুর পর সবাই যখন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দেয়ার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছেন, তখন সভাপতি-সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নামে কালক্ষেপণ করছেন। অথচ সব হলেই প্রায় ৩০ জনের উপরে নেতাকর্মী দিয়ে আংশিক কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মেয়েদের হলে সিভি দেয়ার জন্য কোন মেয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ক্যাম্পাসে মিটিং-মিছিলে কোনদিন ৫-৬ জনের বেশি নারী কর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। এই পদক্ষেপ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত নতুন কমিটি দিতে বিলম্ব করার পায়তারা মাত্র। তাই অবিলম্বে নতুন কমিটি দিয়ে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা ও গতি ফেরাতে সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবি জানান এ নেতা।

সংগঠনটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, এ মাসেই নতুন কমিটি দেয়ার বিষয়ে কেন্দ্রসহ সবাই একমত। কিন্তু রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটি দেয়ার কথা বলছেন। অথচ সদ্য ক্যাম্পাসে আসা শিক্ষার্থীদের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিয়ে হলে কমিটি দিয়েছেন তারা। এখন তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার নামে সময়ক্ষেপণ করছেন। যাতে এ মাসও চলে যায়।

আরও পড়ুন : জাবি ভর্তিতে শূন্য আসন ১৮৭টি

এ নেতার দাবি, সম্মেলনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কমিটি হোক, যাতে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস রাজনীতি করার পূর্ণতা পায়। এছাড়া নতুন কমিটিতে এমন নেতৃত্ব আসুক, যারা সামনের দিনের নির্বাচনে একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

নতুন কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমরা কমিটি দেয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত আছি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা আসলেই সম্মেলনে দেয়া হবে।

হলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলে একটি আংশিক কমিটি হয়েছে, তাই এটা পূর্ণাঙ্গ করতে সিভি চাওয়া হয়েছে। তবে এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির কোন সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি দেয়া হবে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে অনেকে রাজনীতি করছে, তাই সকলের রাজনৈতিক একটি পরিচয় থাকা দরকার। আশা করি এমাসেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটি হবে।


সর্বশেষ সংবাদ