ইউজিসির চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক আলমগীরের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন
- আহমেদ ইউসুফ
- প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ PM , আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ PM
গত ৮ সেপ্টেম্বর ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য পদ থেকে সরে দাঁড়ান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন। এর আগে গত ১৮ অগস্ট তিনি ইউজিসির অতিরিক্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার কথা জানান। তবে দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার চিঠিতে তিনি কারণ হিসেবে তৎকালীন চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ইউজিসি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রক্রিয়াগত দিক থেকে ইউজিসির সদস্য কিংবা চেয়ারম্যানরা পদত্যাগ করলে সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানোর নিয়ম থাকলেও অধ্যাপক আলমগীর তার চিঠিটি ইউজিসির সচিব বরাবর পাঠান। ফলে প্রশ্ন উঠেছে অধ্যাপক আলমগীরের প্রায় এক বছর যাবৎ চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনের বৈধতা নিয়ে।
‘যেহেতু আমাকে দায়িত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, এমতাবস্থায় সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনরূপ সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমি চেয়ারম্যান এর অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রইলাম –অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার চিঠি
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষায় সুশাসনের দায়িত্বে থেকে নিজেই নানা অপকর্মে জড়ান ড. সাজ্জাদ
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট থেকে ইউজিসির চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তবে এ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কোন পক্ষ থেকে অনুমোদন পাননি। শুধুমাত্র ইউজিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ কর্তৃক অর্পিত হয়ে এ দায়িত্ব পালন করেন। এ সংক্রান্ত দুটি অফিস আদেশের কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে।
২০২৩ সালের গত ১৭ আগস্ট প্রথম অফিস আদেশে ড. কাজী শহীদুল্লাহর অসুস্থতাজনিত কারণে ৭৬ দিনের জন্য এবং ২ নভেম্বর দ্বিতীয় অফিস আদেশে চেয়ারম্যান বিদেশে অবস্থান করায় ফিরে না আসা পর্যন্ত অধ্যাপক আলমগীরকে অতিরিক্ত হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। তৎকালীন সচিব ড. ফেরদৌস জামানের স্বাক্ষরে দুটি অফিস আদেশ জারি করা হয়।
আরও পড়ুন: মুখে মুখে আদেশ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত দেন অধ্যাপক আলমগীর
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের কোন পক্ষের অনুমোদন ছাড়া একজন সদস্যকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অর্পণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ইউজিসি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, চেয়ারম্যান বিদেশ গমন কিংবা অসুস্থতার কারণে কাউকে দায়িত্ব দিতে হলে সেটা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য হতে পারে। এভাবে বছর পার করে দেয়া সম্পূর্ণ অবৈধ। তাছাড়া অধ্যাপক আলমগীর কিছু নিয়োগ দিয়ে গেছেন, অতিরিক্ত চেয়ারম্যান কীভাবে নিয়োগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন?
একজন চেয়ারম্যান নিজ উদ্যোগে ইউজিসির কোন সদস্যকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তৎকালীন সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এটার বিষয়ে স্পষ্ট কোন আইনি বিধান নেই। তবে অধ্যাপক আলমগীর আগেও ড. কাজী শহীদুল্লাহর কতৃক অতিরিক্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অন্য সদস্যরা পালন করেছেন।
‘এটা আসলে কোন নর্মসের মধ্যেই পড়ে না –সদ্য সাবেক সচিব ড. ফেরদৌস জামান
ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত প্রথম অফিস আদেশে অগ্রিম ৭৬ দিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হলেও দ্বিতীয় চিঠিতে সেটি বাড়িয়ে অধ্যাপক আলমগীরকে ড. কাজী শহীদুল্লাহর ফিরে না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে এ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক আলমগীরের চেয়ারম্যান হিসেবে বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে ফেরদৌস জামান বলেন, ‘এটা তারা সরকারের উপরের মহলের মাধ্যমে ব্যবস্থা করেছেন।’
গত ১৮ আগস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন ইউজিসির সচিব বরাবর অতিরিক্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার যে চিঠি দিয়েছেন সেটা সেটার বিষয়ে কথা বললে ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘এটা আসলে কোন নর্মসের মধ্যেই পড়ে না।’
তবে ইউজিসির বর্তমান সচিব ড. মোঃ ফখরুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘এটা একটা সেনসিটিভ ইস্যু। আমি কিছুদিন আগেই সচিবের দায়িত্ব পেয়েছি। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়। আপনি বর্তমান চেয়ারম্যনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।’
‘অধ্যাপক শহীদুল্লাহকে ইউজিসির কয়েকজন লোক ইচ্ছামতো ব্যবহার করেছেন। অধ্যাপক আলমগীরের ইউজিসির চেয়ারম্যান হওয়া এবং বিরত থাকার ঘটনা দুটি হাস্যরসের জন্ম দিয়ে গেছে। তিনি নিয়োগ থেকে শুরু করে টেন্ডারের মতো স্পর্শকাতর কাজগুলো করে গেছেন। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কর্তৃপক্ষ এগুলোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে অন্যরাও উৎসাহী হবে –সহকারী সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা
গত ১৮ আগস্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন ইউজিসির সচিব বরাবর অতিরিক্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার চিঠিটিও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। চিঠিতে ইউসিজির সাবেক এই সদস্য লেখেন, প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ স্বাস্থ্যগত কারণে গত ১১ সেপ্টেম্বর চেয়ারম্যান এর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, যা ঐ দিনই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চশিক্ষা ও মাধ্যমিক বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও লেখেন, ‘যেহেতু আমাকে দায়িত্ব প্রদানকারী ব্যক্তি তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন, এমতাবস্থায় সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনরূপ সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রইলাম। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: নর্থ সাউথে স্বেচ্ছাচারী-দুর্নীতিপরায়ণ ট্রাস্টিদের পুনর্বাসন হচ্ছে?
ইউজিসির সহকারী সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অধ্যাপক শহীদুল্লাহকে ইউজিসির কয়েকজন লোক ইচ্ছামতো ব্যাহার করেছেন। অধ্যাপক আলমগীরের ইউজিসির চেয়ারম্যান হওয়া এবং বিরত থাকার ঘটনা দুটি হাস্যরসের জন্ম দিয়ে গেছে। তিনি নিয়োগ থেকে শুরু করে টেন্ডারের মতো স্পর্শকাতর কাজগুলো করে গেছেন। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কর্তৃপক্ষ এগুলোর বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ করতে অন্যরাও উৎসাহী হবে।’