সরকারি চাকরিতে বিষয় কোড না থাকা বিভাগের জন্য সুখবর ইউজিসির

সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন  © লোগো ও ছবি

বিষয় কোড না থাকার কারণে বিসিএসসহ সব চাকরিতে নিজ বিভাগের নাম ব্যবহার করে আবেদন করতে পারেন না স্নাতক সম্পন্ন করা হাজার হাজার শিক্ষার্থী। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হয় ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরির মাধ্যমে। পান না শিক্ষা ক্যাডারসহ বিষয়ভিত্তিক কোনো চাকরিতে আবেদনের সুযোগ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে থাকা অনেক বিভাগের বিষয় কোড না থাকার কারণে এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়েন চাকরি প্রত্যাশীরা। তবে শুধু সরকারি নয়, অনেক বেসরকারি চাকরিতেও বিবেচিত হন না বিষয় কোড না থাকা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলনও করেছেন ভুক্তভোগীরা। এ সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে তা সমাধানে সুখবর দিয়েছে ইউজিসি।

যেসব বিভাগের নাম ও বিষয় কোড সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত নয়, সে বিভাগগুলোর তালিকা চেয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত পত্র ইতিমধ্যে সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৪ ডিসেম্বর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত পত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিষয় কোড না থাকা বিভাগগুলোর তথ্য চাওয়া হয়। পত্রে বলা হয়, গত ৩০ আগস্ট কমিশনের ৫০তম মাসিক সভায় ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন বিভাগের নাম ও বিষয় কোড অন্তর্ভুক্তি করার বিষয়ে প্রাপ্ত পত্রের প্রেক্ষিতে কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কম্পিউটার সায়েন্স এবং কম্পিউটার টেকনোলজি বিষয়ক বিভাগগুলো একই ধরনের। তাই এগুলো একটি কোডের মধ্যে আসবে। এভাবে অন্য বিভাগগুলোকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে— ড. ফেরদৌস জামান, সচিব, ইউজিসি

সিদ্ধান্তের বিষয়ে পত্রে উল্লেখ করা হয়, সভায় সরকারি বা বেসরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের নাম ও বিষয় কোড অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কমিশন নীতিগতভাবে একমত পোষণ করে। সে সঙ্গে আইসিই বিভাগসহ যেসব বিভাগের নাম ও বিষয় কোড সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত নয়, সে-সব বিভাগের নাম ও বিষয় কোড অন্তর্ভুক্তপূর্বক বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে পত্র প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, কমিশনের মাসিক সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব বিভাগের নাম ও বিষয় কোড সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত নয় সে সব বিভাগের নামের তালিকা জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

বিষয় কোড না থাকা এমন একটি বিভাগ হলো- মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (মাভাবিপ্রবি) ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ। বিষয় কোড না থাকায় প্রতিষ্ঠার প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় পার করলেও বিভাগটি থেকে ডিগ্রি নেয়া শিক্ষার্থীরা এখন পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে বিষয়ভিত্তিক ক্যাটাগরিতে সুযোগ পান না। সেই সঙ্গে আবেদনও করতে পারেন না অনেক চাকরিতে। তাই ইউজিসির এমন উদ্যোগে বেশ আশাবাদী এটিসহ এ ধরনের সমস্যায় থাকা অনেক বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে মাভাবিপ্রবির ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ইসতিয়াক আহমেদ তালুকদার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ইউজিসির এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের বিভাগের জন্য বেশ উপকার বয়ে আনবে। বিষয় কোড পেলে আমাদের শিক্ষার্থীরা অন্তত সরকারি স্কুল এবং আরও অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পাবে। আমরা অনেক বছর থেকে কোড পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। পিএসসিতে আবেদন দিয়েছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও গিয়েছি। কিন্তু পজিটিভ ফলাফল আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে শুধু আমাদের বিভাগ নয়, বিষয় কোড না থাকা অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপকার হবে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউজিসি সমন্বয় করলে বিষয় কোডের পাশাপাশি কলেজগুলোতেও বিভাগগুলো বিবেচনায় আসবে।’ তাহলে শিক্ষার্থীরা আরও উপকৃত হতো বলে জানান মাভাবিপ্রবির এ শিক্ষক।

আইসিই, অপরাধ বিজ্ঞানসহ বিষয় কোড না থাকা এমন কিছু বিভাগ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করা ভুক্তভোগী চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেক পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের পরেও তারা বৈষম্যের স্বীকার হন। বিষয় কোড না থাকায় বিভাগের কোনো পরিচিতি থাকে না বিধায় সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি চাকরিতেও গুরুত্ব পান না তারা।

তারা আরও জানান, দেশে বিদেশে গুরুত্ব আছে বিধায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অনেক বিভাগ খোলা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভালো গবেষণাও করছেন। অনেকে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়ে বিদেশেও যাচ্ছেন। কিন্তু দেশের চাকরির বাজারে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই ইউজিসির এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান তারা এবং দ্রুত এ সমস্যা নিরসনের দাবিও জানান।

আরও পড়ুন: ৬ দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শুরু

এ বিষয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক বিভাগের সরকারি চাকরি বিশেষ করে বিসিএসে কোনো সাবজেক্ট কোড থাকে না। ফলে তারা কোনো শিক্ষা বা টেকনিক্যাল ক্যাডারে সুযোগ পায় না। এ সব শিক্ষার্থীরা শুধু সাধারণ ক্যাডারে সুযোগ পায়। এ ধরনের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দাবিও আসে। তাই বিভাগগুলোর কোড দেওয়ার জন্য পিএসসির কাছে ইউজিসির পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে।’

উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কম্পিউটার সায়েন্স এবং কম্পিউটার টেকনোলজি বিষয়ক বিভাগগুলো একই ধরনের। তাই এগুলো একটি কোডের মধ্যে আসবে। এভাবে অন্য বিভাগগুলোকেও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’

বিভাগ অনুমোদনের সময় কোডের বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউজিসি সচিব বলেন, ‘তারা চায় বলে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অর্থ এই না যে, ইউজিসি বিষয় কোডের নিশ্চয়তা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী এক্সপার্টের মূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদন দেওয়া হয়।’

তবে ইউজিসি যে উদ্যোগ নিচ্ছে তা বাস্তবায়ন হলে বিষয় কোড না থাকা বিভাগগুলো কোডের আওতায় আসবে এবং এই বিভাগ থেকে ডিগ্রি লাভ করা শিক্ষার্থীরাদেরও বিশেষায়িত চাকরির সুযোগ তৈরি হবে বলে জানান সচিব।


সর্বশেষ সংবাদ