রিসার্চ প্রপোজাল কীভাবে লিখবেন?
- ড. আজিজুল হক
- প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৪২ AM , আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১০ AM
একটি গবেষণা শুরু করার আগে প্রপোজাল হলো সেই নকশা বা ব্লুপ্রিন্ট, যেখানে গবেষণার উদ্দেশ্য, সমস্যা নির্ধারণ, প্রশ্ন, হাইপোথিসিস, পদ্ধতি এবং সম্ভাব্য ফলাফল স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটি গবেষককে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়, যাতে তিনি পরিকল্পিতভাবে গবেষণার ধাপগুলো এগিয়ে নিতে পারেন। প্রপোজাল গবেষণাকে সুসংগঠিত, সময়োপযোগী ও লক্ষ্যভিত্তিক করে এবং গবেষকের দক্ষতা ও একাডেমিক যোগ্যতার পরিচায়ক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এর পূর্বশর্ত হল সঠিকভাবে তা প্রস্তুত করা। এ আয়োজনে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে রিসার্চ প্রপোজাল লেখার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
কীভাবে রিসার্চ প্রপোজাল লিখবেন?
রিসার্চ প্রপোজাল হলো আপনার গবেষণার ব্লুপ্রিন্ট। এটি আপনার গবেষণা দক্ষতা, চিন্তাশক্তি এবং পরিকল্পনার প্রতিফলন। আপনি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হতে চান, ফেলোশিপের জন্য আবেদন করেন বা গবেষণার অর্থায়নের প্রস্তাব দেন, তখন প্রথমেই আপনার রিসার্চ প্রপোজাল মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়নকারীরা দেখেন আপনার গবেষণার বিষয় কতটা প্রাসঙ্গিক, আপনি বিষয়টি নিয়ে কতটা গভীরভাবে ভেবেছেন এবং আপনার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কতটা বাস্তবসম্মত। আইডিয়া থেকে বাস্তবতা পর্যন্ত পৌঁছাতে এই প্রপোজালই আপনার প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই একটি ভালো রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করার সময় শুরুতেই খেয়াল রাখতে হবে যেন মূল্যায়ন কমিটি সহজেই বুঝতে পারে আপনার গবেষণা কেন গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি কীভাবে বিদ্যমান গবেষণায় নতুন কিছু যোগ করবে।
একটি ভালো রিসার্চ প্রপোজালে সাধারণত তিনটি বিষয় স্পষ্ট থাকতে হবে
১. কেন এই গবেষণা প্রয়োজন? (Problem statement ও Significance)
২. আপনি কী জানতে চান? (Research Questions ও Objectives)
৩. আপনি কীভাবে তা করবেন? (Methodology ও Timeline)
রিসার্চ প্রপোজালের মূল কাঠামো
১. Title
এমনভাবে title নির্বাচন করতে হবে যা দেখেই যেন গবেষণার বিষয় সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। Title অবশ্যই সংক্ষিপ্ত, স্পষ্ট এবং তথ্যবহুল হওয়া উচিত। Title-এ খুব জটিল বা অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো।
২. Abstract
Abstract সাধারণত ১৫০–২৫০ শব্দের মধ্যে লেখা ভালো। এতে গবেষণার পটভূমি, সমস্যা, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং প্রত্যাশিত ফলাফল সংক্ষেপে উল্লেখ করতে হবে। Abstract এমনভাবে লিখতে হবে যাতে পাঠক আগ্রহ নিয়ে পড়ে এবং পুরো গবেষণার মূল সারমর্ম সহজে বুঝতে পারে।
৩. Introduction
Introduction অংশে গবেষণার প্রেক্ষাপট, প্রাসঙ্গিকতা এবং বর্তমান গবেষণাক্ষেত্রে নতুন কী সংযোজন করবে তা ব্যাখ্যা করতে হবে। এখানে Problem statement স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। Research questions এবং Objectives সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।পাশাপাশি গবেষণার গুরুত্বও স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে, যাতে বোঝা যায় এই গবেষণা সমাজে কীভাবে অবদান রাখতে পারে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রভাব কী হতে পারে।
৪. Literature Review
Literature review-এ আপনার গবেষণার সাথে সম্পর্কিত পূর্ববর্তী গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে। এখানে ব্যাখ্যা করতে হবে কোন কোন ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে গবেষণা হয়েছে, সেই কাজগুলোর মূল ফলাফল কী ছিল এবং সেই গবেষণাগুলোর সীমাবদ্ধতা বা gap কোথায়। সেই সাথে স্পষ্ট করতে হবে কেন আপনার গবেষণা প্রয়োজন এবং কীভাবে এটি সেই ঘাটতি পূরণ করবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট Theoretical framework বা মডেলও ব্যাখ্যা করতে হবে।
৫. Research Methodology
এই অংশে আপনি কীভাবে গবেষণা করবেন তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করবেন। গবেষণার ধরন (Qualitative, Quantitative বা Mixed Methods) উল্লেখ করতে হবে। Sample বা অংশগ্রহণকারীদের বাছাইয়ের নিয়ম, তথ্য সংগ্রহের উপায় (Survey, Interview, Lab, Case study ইত্যাদি) এবং analysis-এর পদ্ধতি স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। পাশাপাশি ethical consideration উল্লেখ করা প্রয়োজন।
৬. Expected Outcomes and Contribution
প্রত্যাশিত ফলাফলে সম্ভাব্য গবেষণার ফলাফল এবং তা সমাজে কীভাবে অবদান রাখবে তা উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ফলাফলের বাস্তব প্রয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কেও সংক্ষেপে আলোচনা করা উচিত।
৭. Research Timeline
গবেষণার প্রতিটি ধাপের সময়কাল উল্লেখ করতে হবে। কোন কাজ কখন শুরু হবে এবং কখন শেষ হবে তা স্পষ্টভাবে লিখতে হবে। প্রয়োজনে টেবিল বা চার্ট ব্যবহার করলে বুঝা সহজ হবে।
৮. Budget (যদি প্রয়োজন হয়)
তথ্য সংগ্রহ, সফটওয়্যার, পরীক্ষানিরীক্ষা, ভ্রমণ, প্রয়োজনে বেতন এবং অন্যান্য সব ধরনের ব্যয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। বাজেট যেন গবেষণার চাহিদা অনুযায়ী বাস্তবসম্মত হয়।
৯. References
গবেষণায় ব্যবহৃত সব তথ্য বা পূর্ববর্তী কাজ সঠিকভাবে cite করতে হবে। স্ট্যান্ডার্ড Citation Style অনুসরণ করা উচিত।
রিসার্চ প্রপোজাল লেখার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ
- ভাষা যেন পরিষ্কার, ধারাবাহিক এবং সহজবোধ্য হয়।
- ব্যাকরণ ও বানান ঠিক রাখুন।
- গবেষণার প্রশ্ন, উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির মধ্যে স্পষ্ট সমন্বয় রাখুন।
- অপ্রয়োজনীয় জটিল শব্দ বা বাক্য এড়িয়ে চলুন।
- একই তথ্য বা পয়েন্ট বারবার না লেখার চেষ্টা করুন।
- অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চলুন।
লেখক: ড. আজিজুল হক
সহকারী অধ্যাপক,
কলেজ লাইফ অ্যান্ড অ্যাপ্লায়েড সায়েন্সেস,
ইয়েংনাম ইউনিভার্সিটি, দক্ষিণ কোরিয়া।