ফেসবুকে ১ হাজার ফলোয়ার হলে কত টাকা আয় করা যায়?

ফেসবুক থেকে টাকা আয়
ফেসবুক থেকে টাকা আয়  © টিডিসি ফটো

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন শুধু সময় কাটানোর জায়গা নয়, হয়ে উঠেছে উপার্জনের ক্ষেত্রও। বিশেষ করে তরুণদের কাছে ফেসবুক এখন সম্ভাবনার আরেক নাম। একসময় যেখানে শুধুই ছবি আপলোড আর স্ট্যাটাস দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ফেসবুক ব্যবহার, এখন সেখান থেকেই অনেকে করছেন লাখ টাকার বেশি আয়। তবে প্রশ্ন রয়ে যায় ফেসবুকে যদি মাত্র ১ হাজার ফলোয়ার থাকে, তাহলে কী আয় করা সম্ভব?

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই এখন ডিজিটাল মাধ্যমে আয় করার প্রবণতা ব্যাপক হারে বেড়েছে। কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা অনলাইন মার্কেটারদের মধ্যে প্রতিযোগিতা যেমন বেড়েছে, তেমনি ফেসবুকও ক্রমাগত নতুন নতুন আয়ের সুযোগ তৈরি করছে। তবু আয় করতে হলে অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে হয়। এই মানদণ্ড ছাড়াই শুধুমাত্র ফলোয়ারের সংখ্যা দেখে উপার্জন শুরু হয় না।

হাজার ফলোয়ার মানেই কি টাকা আসবে?

ফেসবুকে কেউ যদি ১ হাজার ফলোয়ার অর্জন করেন, তবে তাকে ধন্যবাদ জানানো যেতে পারে জনপ্রিয়তার প্রাথমিক ধাপে পৌঁছানোর জন্য। তবে ফেসবুক কোনোভাবেই শুধু ফলোয়ারের সংখ্যা দেখে কাউকে টাকা দেয় না। ইনস্ট্রিম বিজ্ঞাপন, ফ্যান সাবস্ক্রিপশন বা রিল বোনাসের মতো ফিচার ব্যবহার করে উপার্জন করতে হলে প্রয়োজন আরও অনেক কিছু।

মনিটাইজেশন খুলবে কখন?

ফেসবুক থেকে সরাসরি অর্থ উপার্জনের জন্য প্রোফাইল বা পেজ মনিটাইজড হতে হয়। এই মনিটাইজেশন সিস্টেম চলে ‘Meta for Creators’ প্রোগ্রামের আওতায়। ইনস্ট্রিম অ্যাডস চালু করতে হলে পেজে কমপক্ষে ১০ হাজার ফলোয়ার থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, গত ৬০ দিনের মধ্যে ভিডিও কনটেন্টে অন্তত ৬০ হাজার মিনিট ওয়াচটাইম থাকতে হবে। পাশাপাশি কনটেন্ট হতে হবে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ও মনিটাইজেশন নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে আসা অশ্লীল ভিডিও বন্ধ করবেন যেভাবে

রিল বোনাস ও ফ্যান সাবস্ক্রিপশন

রিল বোনাস হলো ফেসবুকের একটি ইনভাইটেশন-ভিত্তিক ইনসেন্টিভ প্রোগ্রাম। জনপ্রিয় রিল নির্মাতারা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট ভিউ ও এনগেজমেন্টের ভিত্তিতে অর্থ পান। ফ্যান সাবস্ক্রিপশনে দর্শকরা নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে পছন্দের নির্মাতাকে সরাসরি সমর্থন করতে পারেন। তবে এই সুবিধাগুলো পেতে প্রয়োজন বিশাল সংখ্যক সক্রিয় ফলোয়ার এবং ধারাবাহিক ভিডিও কনটেন্ট।

ব্র্যান্ড স্পনসরশিপ: কম ফলোয়ারেও আয় সম্ভব

তবে কেউ যদি ভালো কনটেন্ট তৈরি করেন, তার কন্টেন্টে যদি ভালো ভিউ, লাইক, শেয়ার ও এনগেজমেন্ট থাকে, তাহলে ব্র্যান্ড স্পনসরশিপের মাধ্যমে আয় করা সম্ভব। অনেক স্থানীয় ও মাঝারি ব্র্যান্ড এখন ‘মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সার’ খুঁজে নিচ্ছে—যাদের ফলোয়ার সংখ্যা কম হলেও নির্দিষ্ট গন্তব্য শ্রোতা আছে। এ ক্ষেত্রে ১ হাজার ফলোয়ারও যথেষ্ট হতে পারে। তবে এর জন্য দরকার মার্কেটিং দক্ষতা ও কনটেন্টের পেশাদারিত্ব।

বাংলাদেশে ফেসবুক আয়ের চিত্র

বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী সংখ্যা এখন প্রায় ৫ কোটির কাছাকাছি। এর মধ্যে প্রায় ২০ লাখ মানুষ কন্টেন্ট নির্মাণে যুক্ত রয়েছেন বলে অনুমান করা হয়। অনেকে কেবল রিল ভিডিও বা ছোট ফানি কনটেন্ট বানিয়ে প্রতি মাসে ২০–৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন পণ্যের প্রমোশন করে আয় করছেন ব্র্যান্ড পার্টনারশিপ থেকে।

একজন সফল ফেসবুক কন্টেন্ট নির্মাতার অভিজ্ঞতা

মিরপুরের বাসিন্দা হাসিবুল হাসান, ফেসবুকে ‘হাসির ঝুলি’ নামে একটি কমেডি পেজ চালান। তার পেজে এখন ফলোয়ার ১.২ লাখ। তিনি জানালেন, ‘শুরুতে আমার এক হাজার ফলোয়ার হতেই লেগে গিয়েছিল ছয় মাস। তখন টাকা আসে না। কিন্তু ধীরে ধীরে ভিডিওতে ভিউ বাড়ে, লোকে কমেন্ট করে, শেয়ার করে। এখন আমার ইনস্ট্রিম অ্যাডস চালু আছে। প্রতি মাসে গড়ে ৪০–৫০ হাজার টাকা আয় করি।’

যে ভুলে সাফল্য আটকে যায়

অনেকেই শুধুমাত্র জনপ্রিয় হতে গিয়ে কমিউনিটি গাইডলাইন ভেঙে ভিডিও তৈরি করেন এটি মনিটাইজেশনের বড় বাধা হয়ে দাড়াঁয়। আবার কেউ কেউ বারবার ভিডিও ডিলিট করেন, ফলস্বরূপ ওয়াচটাইম নষ্ট হয়। অনেকেই ভুয়া ফলোয়ার বাড়িয়ে মনিটাইজেশনের আশায় থাকেন এটি মূলত আদতে কোনো কাজে আসে না। কারণ, ফেসবুক এখন এনগেজমেন্ট ও কনটেন্টের মানই বেশি গুরুত্ব দেয়।

শেষ কথা

ফেসবুকে আয় শুরু করতে হলে শুধু ১ হাজার ফলোয়ার হলেই চলবে না। শুধু ছবি বা ভিডিও আপলোড করলেই চলবে না। দরকার হবে পরিকল্পিত কনটেন্ট নির্মাণ, দর্শকের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা এবং ফেসবুকের নিয়ম মেনে চলা। একবার যোগ্যতা অর্জন করা গেলে এটি হতে পারে পরিপূর্ণ ডিজিটাল ক্যারিয়ারের পথ। ফেসবুকে সফল হতে চাইলে, পথটি দীর্ঘ হলেও, সম্ভাবনার শেষ নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence