শিক্ষক রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে বামপন্থীদের গোলাপী দল

শিক্ষক রাজনীতি
শিক্ষক রাজনীতি  © সংগৃহীত

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বামপন্থী শিক্ষকদের কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ ছিলো না। অতীতের মতো ক্যাম্পাসগুলোতে সরব অবস্থানে নেই তারা। সমমনা শিক্ষক সঙ্কট এবং সাংগঠনিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ ডিসেম্বর। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেলগুলো। কয়েক জায়গায় বিএনপিপন্থী প্রার্থীরা কিছু কিছু পদে জয়লাভ করেছে। এসব নির্বাচনে আলাদা করে অংশ নেয়নি বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গোলাপী দল। অথচ এক দশক আগেও বামপন্থী শিক্ষকরা আলাদা প্যানেলে নির্বাচন করে বিভিন্ন পদে জয় পেয়েছেন।

আরও পড়ুন- পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি 

বাম ধারার কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রনেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে জাতীয় রাজনীতিতে ঐক্য নেই বাম সংগঠনগুলোতে। যার প্রভাব পড়েছে শিক্ষক রাজনীতিতেও। এছাড়া, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র আধিপত্যও বাম শিক্ষকদের প্রভাব কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন কোনো রাজনীতি নেই। সবাই ব্যক্তি স্বার্থের কথা চিন্তা করে কাজ করেন। শিক্ষক সমিতিগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার, শিক্ষা সঙ্কটে ত্রাতার ভূমিকায় থাকার কথা ছিলো। কিন্তু সেগুলোও এখন রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন না শিক্ষকরা। যার কারণে অনেকেই রাজনীতি বিমুখ হয়েছে। পাশাপাশি সুবিধা লাভের আশায় অনেক শিক্ষকই এখন ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চান। তাই নিজের ব্যক্তি আদর্শ বিসর্জন দিয়েও অনেকেই ক্ষমতাসীনদের ছায়াতলে ভিড়ছে। ফলে অন্য মতাদর্শের দলগুলো জনবল সঙ্কটে ভুগছে।  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মত বুর্জোয়া দলের সমর্থক শিক্ষকদের মতই মানসিকতা তৈরি হয়েছে সিংহভাগ বামপন্থী শিক্ষকদের। দেয়ানেয়ার বিষয়টিতো আছেই। তাই একই বা কাছাকাছি মানসিকতার ছোট গ্রুপের শিক্ষকরা বড় দলগুলোর শিক্ষকদের সঙ্গে পেরে না উঠাটাই স্বাভাবিক। প্রভাব তৈরির গ্রুপ হিসেবে না দাঁড়াতে পেরে তারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে। অন্য গ্রুপ বা প্যানেলের সঙ্গে মিশে শুধু নিজ নিজ অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত তারা।

আরও পড়ুন- বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি গবেষণা ও গবেষণা প্রবন্ধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আদর্শের লড়াই নেই। ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দলবদ্ধ হন শিক্ষকরা। ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করা ছাড়া ভিন্ন কোনো বলয় এখানে নেই। স্বাধীনভাবে কাজ করার বা কথা বলার সুযোগ নেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পেশাগত জীবনে নানারকম হয়রানির শিকার হন শিক্ষকরা। যার কারণে নীরব থাকেন শিক্ষকরা।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াটা এমনভাবে কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছে যার কারণে এই পেশায় এখন মেরুদণ্ড শক্ত করে কেউ আসছেন না। অথবা শিক্ষক হওয়ার পর মেরুদণ্ড শক্ত করেও চলতে পারছে না। এখানে স্বাধীনভাবে কাজ করা বা কথা বলা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাণহানিরও শঙ্কা থাকে।

বামপন্থী শিক্ষকরা এখন বেশিরভাগই আওয়ামী লীগপন্থীদের সাথে মিশে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ।

তিনি বলেন, এখন নীতি আদর্শের চেয়ে স্বার্থের দ্বন্দ্বটাই বেশি। সংখ্যায় কম হওয়ায় তারা দেখছেন যে তাদের স্বার্থ বাস্তবায়ন হচ্ছে না বা তারা যে স্বপ্ন দেখেন সেটি পূরণ হচ্ছে না। একারণেই তারা অন্য দলের ভিতরে চলে যাচ্ছে। মূলত আওয়ামী লীগপন্থী নীল দলে তারা বেশি যাচ্ছেন।

বামপন্থীদের সরব না থাকার পেছনে সাংগঠনিক দুর্বলতাকে বড় করে দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক পরিবেশকেও দায়ী করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, বাম রাজনীতিতে শিক্ষকরা আগ্রহী। কিন্তু তারা এই পরিস্থিতিতে টিকতে পারবে না ধরে নিয়ে আসছে না। নির্বাচনে গেলে এই সময় নিশ্চিত পরাজয় হবে।


সর্বশেষ সংবাদ