বাবার মৃত্যুতেও থামেননি সাজ্জাদ, অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেটে প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার

অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করে প্রথমবারেই বিসিএস ক্যাডার হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মুহাম্মদ সাজ্জাদ। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ১১ দিন আগে বাবার মৃত্যু হলেও থেমে যাননি তিনি। সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
সাজ্জাদের শিক্ষা জীবনের শুরু হয় মাদ্রাসা থেকে। দাখিল ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাড়ি জমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। তবে মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া তার জন্য ছিল কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।
এ বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে তিনি বলেন, মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ায় বিসিএস কেন্দ্রিক পড়াশোনা করে বেশিদূর আগানো আমার জন্য কঠিনই ছিল। সাহস, দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে আমি নিজ লক্ষ্যে অটুট থাকি এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাই। মাস্টার্স ও রিটেন একইসাথে কন্টিনিউ করাও আমার জন্য কঠিন ছিল। আমি ক্লাসে বসে রিটেনের বই পড়েছি। তিনি আরও বলেন, ৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ছিল ২০২২ সালের ২৭ মে, আর আমার বাবা মারা যান ১৫ মে। আমি নিজ লক্ষ্যে অটুট থেকে সেই শোক কাটিয়ে প্রিলি উতরে যাই।
প্রথম বিসিএসেই সফলতা পাওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে সাজ্জাদ বলেন, অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়া আমার জীবনের অন্যতম সাফল্য বলে আমি মনে করি। মহান সৃষ্টিকর্তা, আমার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করার দৃঢ় সংকল্প আমাকে সফল হতে প্রেরণা যুগিয়েছে।
বিসিএসের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে আমি বিসিএস প্রস্তুতি শুরু করি। প্রথম দিকে আমি আমার দুর্বল জায়গাগুলো ফাইন্ড আউট করি এবং সেগুলোতে সময় দিতে শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে প্রিলিকেন্দ্রিক বিষয়াবলি যা রিটেনের সাথে সংশ্লিষ্ট তা বিস্তারিত পড়া শুরু করি। যখনই সময় পেয়েছি, তখনই পড়েছি। পড়ার ক্ষেত্রে কোনো কমপ্রোমাইজ করিনি। ক্লাসে রিটেনের বই নিয়ে যেতাম এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা স্কিপ করে পড়াশোনা করতাম।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তুতির সময় মানসিক চাপ দূর করতে ইন্ডিয়ান সিরিজ ‘Aspirant’ দেখতাম; যা আমাকে মেন্টালি বুস্ট করত। যখনই হতাশা কাজ করত, আমি এই সিরিজের ছোট ছোট ক্লিপ দেখে নিজেকে আবারও সজীব ও প্রাণবন্ত করে তুলতাম।
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস দিতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে সাজ্জাদ বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রত্যেক বিষয়েই একটা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দরকার, তা না হলে রেসে পিছিয়ে পড়তে হয়। তাই নিজের শক্তি ও দুর্বল জায়গা বের করে সেসব নিয়ে কাজ করা জরুরি। স্বপ্নের পিছনে একাগ্রতা ও দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিবন্ধকতা আসবে কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে না পারে। নিজের ওপর বিশ্বাস ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আস্থা রেখে পরিশ্রম করলে সফলতা মিলবেই।