বাবা অটোরিকশা চালক, মেয়ে পড়বেন ঢামেকে—খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায়

বাবা-মায়ের সঙ্গে নন্দিনী রানী সরকার (মাঝে)
বাবা-মায়ের সঙ্গে নন্দিনী রানী সরকার (মাঝে)  © সংগৃহীত

অনিল চন্দ্র সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক, আর্থিক সংকট তার নিত্যসঙ্গী। সামান্য ভিটেবাড়ি ছাড়া অনিলের কোনো আবাদি জমি নেই। অটোরিকশা চালানোর আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণে কুলিয়ে উঠতে পারেন না। এর মধ্যে পরিবারের বড় মেয়ে নন্দিনী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এমন সাফল্যে আনন্দের পাশাপাশি আছে আশঙ্কা। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে দরিদ্র পরিবারটি।

নন্দিনীদের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামে। দুই বোনের মধ্যে নন্দিনী বড়। ছোট বোন বিনা রানী সরকারও মেধাবী শিক্ষার্থী। স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ১৭ জানুয়ারি এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯ জানুয়ারি ফলাফল ঘোষণায় দেখা যায়, মেধাতালিকায় নন্দিনী রানী সরকারের অবস্থান ১৩৩। তালিকা অনুযায়ী, নন্দিনী ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নন্দিনী ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। তিনি স্থানীয় গিলন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫, কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৪৬, এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

কানিজ ফাতেমা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, নন্দিনীকে যাবতীয় সহায়তা স্কুল ও কলেজ থেকে করা হয়েছে। অভাব-অনটনের মধ্যেও মেয়েটি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় স্কুল ও কলেজের সবাই খুশি হয়েছেন।

নবগ্রাম ইউনিয়নের গিলন্ড গ্রামে নন্দিনীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি টিনের ঘর। টিনগুলোতে মরিচা পড়েছে। ঘরের সামনে উঠানের এক পাশে মাটির চুলায় রান্না করছিলেন নন্দিনীর মা সিমা রানী সরকার। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে মেয়েগো ভালো কোনো জামাকাপড় দিতে পারি নাই। প্রাইভেট পড়াতে পারি নাই। স্কুলের মাস্টাররা বিনা বেতনে পড়িয়েছেন, তাগো প্রতি কৃতজ্ঞ। মাস্টাররা সাহায্য-সহযোগিতা না করলে আমার মেয়েও এত দূর আসত পারত না, ভালো রেজাল্ট করতে পারত না। মেডিকেলে আমার মেয়ে চান্স পাইছে, আমরা যে কত খুশি হইছি! কিন্তু পড়ালেখার খরচের কথা মাথায় আসলে সেই আনন্দ আর থাকে না।’

বাড়িতে আলাপকালে নন্দিনীর বাবা অনিল চন্দ্র সরকার বলেন, ইজিবাইক চালিয়ে উপার্জনের টাকায় দুই মেয়ে, স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার চালান। কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েন। সেই সংকটই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এখন তিনি সুস্থ, তবে এত টাকার খরচ কীভাবে বহন করবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।

নন্দিনীর এই সাফল্যে আনন্দিত প্রতিবেশীরাও। প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দরিদ্র পরিবারের মেয়েটি মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে আমরাও খুশি। মেয়েটির পড়াশোনায় কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি এগিয়ে এলে ডাক্তারি পড়ার একটা ব্যবস্থা হতো।’

ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে দরিদ্র রোগীদের সেবা করার স্বপ্ন নন্দিনীর। তিনি বলেন, ‘স্কুল ও কলেজে স্যাররা আমাকে বিনা বেতনে পড়িয়েছেন। বই থেকে শুরু করে সব সহায়তা পেয়েছি। আমার বাবার তো সামর্থ্য নেই যে এত টাকা দিয়ে পড়াবে। এখন সরকার বা কেউ সাহায্য করলে আমার মেডিকেলে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আমি যেমন দরিদ্র, অনেক দরিদ্র মানুষ আছে, যারা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, আমি তাদের সাহায্য করতে চাই, সেবা করতে চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence