শারীরিক প্রতিকূলতাকে জয়, সাড়ে ৩ ফুট উচ্চতা নিয়ে মেডিকেলে অভাবনীয় সাফল্য

চন্দ্রজিত সাহা
চন্দ্রজিত সাহা  © সৌজন্যেপ্রাপ্ত

সমাজের আর পাঁচজনের থেকে আলাদা তিনি। তার উচ্চতা মাত্র সাড়ে ৩ ফিট। জন্মের কিছুদিন পর থেকেই থমকে গেছে তার শারীরিক বৃদ্ধি। স্বল্প উচ্চতার জন্য আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের কটাক্ষ শুনতে হত তাকে। ইচ্ছা থাকলেও অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে খেলাধুলায় অংশ নিতে পারতেন না, তেমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারতেন না। তবে থমকে যায়নি নরসিংদীর অদম্য তরুণ চন্দ্রজিত সাহার জীবন ও স্বপ্ন। বেঁচে থাকার জন্য, স্বপ্ন পূরণের জন্য, নিন্দুকের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন পড়াশোনাকে। নিজেকে  প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে যোগ্য জবাব যে দেওয়া যাবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি।  স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন এই তরুণ।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় চন্দ্রজিত সাহা ৮০.৫ নম্বর পেয়েছেন। মেধাতালিকায় ২৩৮৭তম হয়েছেন। তিনি শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। 

অদম্য ইচ্ছা থাকলে স্বপ্ন পূরণে কোনো কিছু্‌ বাধা হতে পারে না—এ কথা বিজ্ঞজনদের। সেটিই যেন এবার সত্যি করে দেখালেন এই তরুণ। সব বাধা পেরিয়ে পড়াশোনায় সাফল্য পেয়েছেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তবে তার সাফল্যের পথ ছিল অনেক কঠিন, লড়াই ও সংগ্রামের।

এবার ছিল তার ‘সেকেন্ড টাইম’ ভর্তি পরীক্ষা। যার ফলে তার ৩ নম্বর কর্তন হয়েছে। এজন্য কোনো আফসোস নেই চন্দ্রজিত সাহার। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসক হব, মেডিকেলে পড়ব, এ কথা শুনে অনেকেই মুচকি হাসতেন। প্রথমবার অল্প কিছু নম্বরের জন্য চান্স হয়নি আমার। তাই দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়েছিলাম। অনেকে নিষেধ করেছিলেন, বলেছিলেন বাদ দাও। তোমাকে দিয়ে হবে না। তবে আমি প্রতীক্ষা থেকে সরে আসিনি।’

চন্দ্রজিত সাহার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদরের মধ্য কান্দা পাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম ইন্দ্রজিত সাহা ও মায়ের নাম সুপ্তি সাহা। ব্রাহ্মন্দী কামিনী কিশোর মৌলিক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। উভয় পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ-৫। 

কলেজের শিক্ষক, RTDS-এর শিক্ষক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে চন্দ্রজিত সাহা।

প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেননি চন্দ্রজিত সাহা। অনেকে তার মনোবল ভাঙা চেষ্টা করেছেন। বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তবে তাকে কেউ দমাতে পারেননি। দ্বিতীয়বার ঠিকই সাফল্য পেয়েছেন। এজন্য তিনি তার বাবা-মা ও কোচিংয়ের শিক্ষকদের বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

চন্দ্রজিত অনলাইনে আরটিডিস-এ কোচিং করেছেন। এ ছাড়া অন্য কোথাও পড়েননি, কোচিং করেননি। তিনি বলেন, কোচিং বলতে আমি একমাত্র অনলাইনে ছিলাম, RTDS-এর সঙ্গে ছিলাম। বিশেষ ভাবে সেকেন্ড টাইমারদের জন্য মাইনুল ভাই, যিনি একজন সেকেন্ড টাইমার, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২০১৬-১৭ সেশনে ১০ম হয়েছিলেন, তিনি আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। তাছাড়াও রিজভী ভাই, সাদী ভাই, শুভ ভাই, রাহাত ভাই, জাদিদ ভাই মোটামুটি সবাই আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন।

চন্দ্রজিত সাহাকে কোচিংয়ে নানাভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন ডা. রিজভী তৌহিদ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও  মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জাতীয় মেধায় ১ম (২০১৬-১৭ সেশন) হয়েছিলেন। ডা. রিজভী তৌহিদ বলেন, ‘চন্দ্রজিত সাহা অত্যন্ত মেধাবী ছেলে। এককথায় অদম্য তরুণ। তার কঠিন প্রতীক্ষা ও দৃঢ় মনোবলের জন্যই সাফল্য পেয়েছে সে। আরটিডিসের পক্ষ থেকে আমরা থেকে সহযোগিতা করেছি, তার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছি। সে তার স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপে সাফল্য পেয়েছে, ভবিষ্যতেও সাফল্যের ধারা বজায় রাখবে আশা করি।’

নিজের সাফল্যে শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চন্দ্রজিত সাহা বলেন,  ‘আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য প্রাণপ্রিয় নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ ভূঁইয়া স্যারের প্রতি জানাই অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের কঠিনতম একটি সময়ে আতিকুর রহমান স্যার ছিলেন কথা বলার সঙ্গী। কিছুদিন পর পরই কল দিয়ে খোঁজ-খবর নিতেন। আমাকে উৎসাহ দিতেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়া মাঝে মাঝেই মেসেজের মাধ্যমে খোঁজ-খবর নিতেন শ্রদ্ধেয় মঈন উদ্দিন স্যার। স্যারের সাথে আমার বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয়েও আলোচনা হতো। স্যারের নির্দেশেই আমি গত দেড় মাস সময় সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছিলাম। আর কলেজ জীবনে স্যার ছিলেন আমার জীববিজ্ঞানের পাথেয়। আরেকজন সম্মানিত শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মেহেদী হাসান স্যার ছিলেন আমার রসায়নের শিক্ষাগুরু। স্যার সবসময়েই আমাকে স্যারের প্ৰিয় ছাত্র হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। অপরদিকে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি আমার পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষাগুরু শ্রদ্ধেয় সেলিম গাজী স্যারের কথা না বললেই নয়, কলেজ জীবনে স্যারকে আমি অনেক জ্বালিয়েছি। স্যারের কারণেই আমার পদার্থবিজ্ঞান বিষয়টি এতটা ভালো লাগতো আমার।’

ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও লক্ষ্যের কথা জানিয়ে চন্দ্রজিত সাহা বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমি একজন কার্ডিওলোজিস্ট হয়ে মানব সেবা করতে চাই। মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে চাই। সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী।’


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence