বাবার পড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ফিহা, করোনাকাল কাজে লাগিয়ে সাফল্য

 মাহবুবা ফিহা
মাহবুবা ফিহা  © টিডিসি ফটো

সদ্য প্রকাশিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষার সম্মিলিত মেরিট লিস্টে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন মাহবুবা ফিহা। তার সাফল্যের গল্প নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সেখানে তিনি আলাপ করেছেন, এ পর্যায়ে আসার পেছনের গল্প নিয়েও।

মাহবুবা ফিহার জন্মস্থান ও বেড়ে ওঠা ময়মনসিংহে। বাবা মো. আব্দুল হাই পেশায় একজন শিক্ষক এবং মা মমতাজ বেগম গৃহিণী। তাঁর স্কুল ছিলো বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন।

আইইউটির রেজাল্ট দেরখার পর অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে মাহবুবা ফিহা বলেন, রেজাল্ট আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এতটা আশা করিনি। ইঞ্জিনিয়ারিং এডমিশনের জন্য প্রিপারেশন শুরু করেছিলাম ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে। তখন করোনার সময় ছিল। বাসায় কোনো কাজকর্ম ছিল না। ভেবেছি এডমিশনের প্রিপারেশন শুরু করলে মনে হয় সে চাপে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়বে।

মাহবুবা ফিহা বলেন, আইইউটি থেকে আমার বাবা মাস্টার্স করেছিলেন। আমার ফ্যামিলির জন্য এটি একটি ড্রিম ইউনিভার্সিটি। ভর্তি পরীক্ষায় আমি মোট ৯৭ টা দাগিয়েছি। কয়টা সঠিক হয়েছে জানি না, ইংলিশ পার্টটুকু খুব একটা ভালো হয়নি।

তিনি আরো বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে আমি যা শিখেছি বেশির ভাগই ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করে শিখেছি। লকডাউনের কারণে অনলাইন ক্লাস হতো। আমি ক্লাস ফাকি দিয়ে ফেসবুকে ঢুকে বসে থাকতাম। ২০২০ সাল এভাবেই চলে গেছে। ২০২১ সাল থেকে ঠিক করেছিলাম সিরিয়াস হব। তখন টিচারদের ক্লাসনোটস, ইউটিউবের ফ্রি ক্লাস, আর অনলাইনে কোচিং ক্লাস করেছি। ২০২২ এ প্রচুর পড়েছি, বায়োলজি ছাড়া। 

মাহবুবা ফিহা জানান, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছেন। তবে মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোন প্রস্তুতি ছিল না।

উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এইচএসসিতে কেন খারাপ রেজাল্ট হয়েছে আমি নিজেও জানি না। গণিত প্রথম পত্রে বইয়ের কমন জিনিস আর দ্বিতীয় পত্রে বেছে বেছে প্রমাণ এর প্রশ্ন উত্তর করেছি, যাতে নাম্বার না কাটে। কীভাবে যেন ১৭৬/২০০ এসেছে জানি না।

পড়াশোনার বাইরে বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছেন মাহবুবা ফিহা। স্কুল থেকে বিভিন্ন কুইজেও পাঠাতো। তিনি বলেন, যেদিন মনে হতো অনেক পড়া জমে গেছে ওইদিন অনেকটা পড়া হতো। যেদিন পড়তে ইচ্ছা করত না, একদমই পরতাম না। এটা করা উচিৎ হয়নি আমার, এতে পড়ার অভ্যাস ঠিক থাকে না।

পড়াশোনার অনুপ্রেরণা নিজের ভাই বলে জানান তিনি। মাহবুবা ফিহা বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা বন্ধ করে দিয়েছি। পরিকল্পনা মতো না হলে পরে প্রচন্ড কষ্ট লাগে। ঠিক করেছি জীবনে যা সুযোগ পাব ইন শা আল্লাহ কাজে লাগাবো। জীবন যেদিকে যায় সেদিকেই যাব।

সফলতার পেছনে নিজের মা এবং প্রত্যেক প্রত্যেক শিক্ষকেরা কথা জানান তিনি। স্ট্রাগল সেরকম কখনোই করতে হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকে বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। মাহবুবা ফিহার সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা, বুয়েটের ১৮ হাজারের তালিকায়ও নাম না আসা।

জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে মাহবুবা ফিহার পরামর্শ, জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে বলব কনফিডেন্স হচ্ছে সবচেয়ে জরুরি। যেভাবে পড়লে মনে হবে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি, সেভাবেই পড়া উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ