ঢাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন অভিভাবকরাও

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ   © টিডিসি ফটো

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভে নেমেছেন আন্দোলনকারীরা। শনিবার (০৩ আগস্ট) রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর, শান্তিনগর, আফতাবনগর, প্রগতি সরনী, বাড্ডা, রামপুরা, শনির আখরা এলাকায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

এ সময় তারা আন্দোলকারীদের ওপর গুলি বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতীয় পতাকা এবং প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান ধরেন তারা। কোথাও কোথাও এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরা। ঢাকার এই বিক্ষোভ কর্মসূচির সব পয়েন্টে পুলিশের সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

সায়েন্স ল্যাবে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ

শনিবার বেলা ১২টার দিকে ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর দুইটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নিয়ে তাদের বিক্ষোভ করতে দেখায় যায়। এতে আজিমপুর-মিরপুর সড়কে যানজট তৈরি হয়। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সকাল থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নিলেও কর্মসূচিতে তারা কোনো বাধা দেয়নি। বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’সহ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

যাত্রাবাড়ীতে তীব্র যানজট

দুপুরে যাত্রাবাড়ীর শনির আখরা ও কাজলা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের উপরেও যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, "শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। কোনো যানবাহন চলতে দিচ্ছে না। তাদেরকে সড়ক ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।"

আফতাবনগরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরা

বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনের রাস্তায় শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে রামপুরা ব্রিজ থেকে আফতাবনগর যাওয়ার রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুপুর ২টার দিকে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাজারো শিক্ষার্থী।

এ সময় রাস্তায় পুলিশ অবস্থান করলেও ছাত্রদের উপস্থিতি বাড়লে তারা সরে যান। এর আগে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলসহ শিক্ষার্থীদের ঢল নামে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে অভিভাবকদেরকেও যোগ দিতে দেখা গেছে।

বাড্ডা থানার ওসি আবু সালাম বলেন, "আমরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আন্দোলনকারী যেসকল শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলেছি। আন্দোলনকারীরা আমাদেরকে জানিয়েছেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি পালন করবেন। "নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবস্থান নিয়েছে।"

মিরপুর ১০ নম্বরের গোল চত্বরে শিক্ষার্থীরা

বেলা ১১টার পরে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ১০ নম্বর গোলচত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

প্রগতি সরণিতে বিক্ষোভ

কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে প্রগতি সরণি সড়কে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে ও শান্তিনগর মোড়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। এসব এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় এই বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এছাড়া রোববার থেকে ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ ডাক দিয়েছে তারা। ২০১৮ সালে সরকার চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের শুরুতে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রথমে পরিপত্র ফিরিয়ে আনতে, অর্থাৎ কোটা না রাখার দাবিতে সোচ্চার হলেও পরে সংস্কারের দাবি সামনে আনে।


সর্বশেষ সংবাদ