নুরের উপর ক্ষোভ, ছাত্র অধিকারের কার্যক্রম স্থগিত করলেন মামুন

হাসান আল মামুন ও নুরুল হক নুর
হাসান আল মামুন ও নুরুল হক নুর  © ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। স্ট্যাটাসে স্পষ্ট না বললেও সংগঠনটির সাবেক নেতা ও বর্তমান গণ অধিকারের নেতা নুরুল হক নুরের উপর ক্ষোভ থেকে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, এই নাম ব্যবহার করে কোথাও কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হলে তাকে আমি প্রতিহত করবো। অতি দ্রুত হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হবে। নাচতে নেমে ঘোমটা দিয়ে লাভ কি? ভদ্র মানুষদের জায়গা দুনিয়ায় কোথাও নেই।

তিনি (মামুন) সংগঠনে এ ধরনের স্থগিতাদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। সংগঠনের গঠনতন্ত্র আছে, সংগঠন সে অনুযায়ী সংগঠন চলবে। -রাশেদ খাঁন

সংগঠনটির স্থগিতাদেশের বিষয়ে মামুনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘‘এই ছাত্র অধিকার পরিষদ গঠনের সময় সকলকে আহ্বায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু নিজের জীবনের ভয়ে কেউ রাজি হয়নি। কেউ যখন ছিলো না পদ নেওয়ার জন্য তখন আমি নিজ থেকেই বলি আমি দায়িত্ব নিলাম এদেশের শিক্ষার্থীদের কোটা মুক্তি দিবো।

পরিকল্পিতভাবে একই বাদী কর্তৃক দুটি আলাদা আলাদা বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলা সাজিয়ে আহ্বায়ক হওয়ার কারণে আমাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো। আমি সংগঠনের সিদ্ধান্ত মেনে নিলাম। দীর্ঘ ১১ মাস জেল কাটলাম। ৩টি মামলার মধ্যে দুটি মামলা জজ কোর্ট খারিজ করে দেয় অপর মামলাটি মহামান্য হাইকোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে এই মন্তব্য করে যে এই মামলাটি চলতে পারে না।

আমার মামলায় মোট সাক্ষী ছিলেন ৬ জন। যাদের ৪ জনের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালীতে। আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলা হলো সেই মামলার একজন সাক্ষী গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব পদে আছেন। ইতিহাসের এমন বিরল ঘটনা কি আছে যে, যে মামলায় আমি ভিপি নুরসহ আমরা ছয়জন আসামি। এই ছয়জন আসামির মধ্যে নুরসহ আরেক জনকে জেলে যেতে হয়নি। বাকি ৪ জনকে বিনা অপরাধে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়েছে।

আসামি পক্ষ আমরা সবাই গণ অধিকার পরিষদ করছি। কিন্তু বাদী পক্ষ এবং মামলার সাক্ষী কীভাবে আমাদের একই সাথে সংগঠন করে? এই মামলাটি একটি ইতিহাস। আচ্ছা বলুন তো আমাদের বিরুদ্ধে একটা মামলা হলো, মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিন্তু সাক্ষী সব বাইরের। কেন বাদী কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীকেও সাক্ষী করতে পারলেন না? ৬৪টি জেলার মধ্যে থেকে এক বরিশাল থেকেই ৪ জন সাক্ষী করা লাগলো?

আজ সেই কালো দিন। বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্ন ভাঙার দিন। একটা ছেলের জীবন ধ্বংসের দিন। একটা ছেলের পরিবার ধ্বংসের দিন। দিনের পর দিন না খেয়ে পড়ে থাকা। দিনের পর দিন আত্মহত্যার পথ থেকে ফিরে আসা একটা জীবন নিয়ে চলার দিন।

আপনারা দুটি প্রশ্ন করতে পারেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন কি আপনি একা করেছেন? ছাত্র অধিকার পরিষদ কি আপনার একার? একই প্রশ্ন আবার আপনাদের করছি। গণ অধিকার পরিষদের জন্ম হয়েছে কোন আন্দোলনকে কেন্দ্র করে? গণ অধিকার পরিষদ কি ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর একা গঠন করেছেন? গণ অধিকার পরিষদ কি তাঁর একার?’’

ওই স্ট্যাটাসটি সংগঠনটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনেরও নজরে এসেছে। তিনি বলেছেন, মামুনের সঙ্গে তাদের সবার সু-সম্পর্ক রয়েছে। হঠাৎ তিনি এ ধরনের স্ট্যাটাস কেন দিয়েছেন সেটি তাদের বোধগম্য নয়।

জানতে চাইলে রাশেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাকে বলেন, তিনি (মামুন) সংগঠনে এ ধরনের স্থগিতাদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। সংগঠন কাউন্সিলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কাউন্সিলের মাধ্যমে আসা নেতৃত্ব সংগঠনের ভবিষ্যৎ ঠিক করবেন। এছাড়া সংগঠনের গঠনতন্ত্র আছে, সংগঠন সে অনুযায়ী সংগঠন চলবে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসের দ্বিতীয় অংশে মামুন লিখেন, ‘‘এবার আসি এদেশের গনতন্ত্রের নমুনা নিয়ে, ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে যতগুলো দল এদেশে গড়ে উঠেছে এই দলগুলো মূলত রাজতন্ত্র। রাজাকে আটকানোই হলো দাবা খেলার প্রধান লক্ষ্য। রাজা আটকে গেলো মানে পুরো টিম পরাজিত। এই সাধারণ বিষয় টুকু বুঝেন না? এভাবেই লক্ষ তরুণের জীবন ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

গনতন্ত্র বলতে আমি বুঝি সম্মিলিত কিছু মানুষের দেশের জন্য কিছু করার প্রচেষ্টা।যেখানে থাকবে জবাবদিহিতা। গনতন্ত্রের মধ্যে জবাব দিহিতা না থাকলে সেটাকে গনতন্ত্র বলে না। আমেরিকার প্রসিডেন্টকে যেখানে জবাবদিহির আওতায় আনা হয়েছে সেখানে...। ছাত্র অধিকার পরিষদের নাম ব্যবহার না করে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে আপনারা আপনাদের কার্যক্রম চালান, আমার কোনো আপত্তি নেই। 

উভয়পক্ষের গণ অধিকার পরিষদের সাথে আমার আর কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। একক গণ অধিকার পরিষদ ছাড়া আমি রাজনীতি করবো না এবং করতেও দেবো না। আজকের পর থেকে যাকে যেখানে পাবো কুত্তার মতো পিটাবো। ‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যে বা আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই, যে আমায় করেছে পর’।’’

ছাত্র অধিকার পরিষদের জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সকল কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হলো। -হাসান আল মামুন

স্ট্যাটাসের শেষ তিনি লিখেছেন, এদেশের লক্ষ লক্ষ বেকারের জন্য কোটা মুক্ত বিসিএস উপহার দিলাম। আর নিজ ইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদাম বিক্রি করবো। তবুও রাজনীতির নামে বেশ্যবৃত্তি করবো না।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের পূর্বনাম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। বাংলাদেশের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার ও অন্যান্য বৈষম্য দূরীকরণের উদ্দ্যেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একটি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়।


সর্বশেষ সংবাদ