প্রাথমিকের শিক্ষকতা, ছাত্রলীগের রাজনীতি দুটোই করেন ইডেনের শিলা

জেবুন নাহার শিলা
জেবুন নাহার শিলা  © ফাইল ফটাে

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কোনও চাকরিজীবী সংগঠনটির স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন না। এমন স্পষ্ট নির্দেশনার পরও চাকরির পাশাপাশি স্বপদে বহাল তবিয়তে আছেন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জেবুন নাহার শিলা৷

চলতি বছরের শুরুর দিকে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলেও এই ছাত্রলীগ নেত্রী এখনও রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন। থাকেন ইডেন কলেজের আয়েশা সিদ্দিকা হলের ৩০১ নম্বর কক্ষে।

জানা গেছে, জেবুন নাহার শিলার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়৷ ২০২৩ সালে টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা অনুযায়ী ১৩ নম্বরে রয়েছেন শিলা৷ তার যোগ দেওয়া স্কুলের নাম পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারী তিনি ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছে ৷  তবে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে যোগদানের পর নিয়মিত ক্লাসে যান না। অধিকাংশ সময়ই থাকেন ইডেন মহিলা কলেজের হলে৷ অংশগ্রহণ করেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও।

নিয়মিত স্কুলের ক্লাসে অংশ নেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে পশ্চিম কালিদাস পানাউল্লা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধীরেন চন্দ্র সরকার দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ২৪ জানুযারি আমার স্কুলে যোগ দিয়েছেন৷ তবে তিনি স্কুলে অনিয়মিত না। ২-৩ দিন ছুটি নিয়ে গলায় অপারেশনের জন্য ঢাকায় গেছেন।

মেডিকেল সার্টিফিকেট বা কোন রেফারেন্স জমা দিয়ে ছুটি নিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওনার অপারেশন হইছে, কাগজপত্র পরে জমা দিবে।

অসুস্থতার কাগজ যাচাই-বাছাই ছাড়াই কিভাবে ছুটি দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপারেশন হোক বা অন্যকিছু হোক তিনদিনের ছুটি তো আমি এমনেই দিতে পারি। তিনি সুস্থ না অসুস্থ… ওনি বললো গলায় সমস্যা, অপারেশন করবে। তাই ছুটি দিয়েছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের একাধিক নেত্রী বলেন, জেবুন নাহার শিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সবচেয়ে সিনিয়র৷ তার ছাত্রত্ব আরও আগেই শেষ হয়েছে৷ সর্বশেষ তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছেন৷ এখনও তিনি হলে সিট দখল করে রেখেছেন৷ এসব কর্মকান্ড আমাদের ছাত্রলীগের জন্যও কিছুটা বিব্রতকর৷ শুনেছি তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির পদের জন্যও চেষ্টা করছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সহ-সভাপতি জেবুন্নাহার শিলা। তিনি দাবি করেন, এখনও তার ছাত্রত্ব বিদ্যমান রয়েছে এবং সামনে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করবেন।

সরকারি চাকরি করেও কিভাবে ছাত্রলীগের পদে রয়েছেন জানতে চাইলে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের কমিটি হয়েছে আরও এক বছর আগে। এরপরে আমার চাকরির পরীক্ষা ও ভাইবা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমন কোন নিয়ম আছে যে কেউ ছাত্রলীগ করলে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না? ছাত্রীগের ছেলেমেয়েরা কি চাকরি করবেনা? 

“ক্যাম্পাসের দলীয় কোন্দলের কারণে আমার সম্পর্কে এমন কথা ছাড়ানো হচ্ছে। আমার যখন ভালো কিছু হবে তখন তো আমি এমনিতেই চলে যাব। আমার প্রাইমারিতে চাকরি হয়েছে সেখানে আমি কন্টিনিউ করব কিনা, সেখানে চাকরি করবে কিনা সেটিও একটি বিষয়। এটি সাধারণ বিষয় নিয়ে এতকিছু করার কোন দরকার ছিল না। আমি চাকরি থেকে রিজাইন (অব্যাহতি) দিয়েছি। সেই কপি আমার কাছে আছে।”

কতদিন আগে অব্যাহতি নিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একমাস আগেই অব্যাহত নিয়েছি।

কিন্তু তার অব্যাহতি সংক্রান্ত কোন তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাওয়া যায়নি জানালে পরবর্তীতে তিনি স্বীকার করেন, এখনো চাকরি অব্যাহত রয়েছে। 

একপর্যায়ে তিনি বলেন, ইডেন মহিলা কলেজে ছাত্রলীগ করেন আবার চাকরিও করেন এমন অনেকেই রয়েছে। ইডেন কলেজে ৪৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি হয়েছে। তার মধ্যে কয়জনের ছাত্রত্ব আছে? এগুলো নিয়ে এত নোংরামি করার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসের দলীয় কোন্দলের কারণে আমার সম্পর্কে এমন কথা ছাড়ানো হচ্ছে। আমার যখন ভালো কিছু হবে তখন তো আমি এমনিতেই চলে যাব। আমার প্রাইমারিতে চাকরি হয়েছে সেখানে আমি কন্টিনিউ করব কিনা, সেখানে চাকরি করবে কিনা সেটিও একটি বিষয়। এটি সাধারণ বিষয় নিয়ে এতকিছু করার কোন দরকার ছিল না। 

এ বিষয়ে ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চাকরি হয়েছে কয়েক মাস হল। আমাদের কমিটি তো প্রায় এক বছর হয়ে গিয়েছে। সামনে আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে সেখানে এই পদটি না করে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেতু আমাদের কথা হয়েছে অথচ ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রাম মিটিং মিছিলে অংশগ্রহণ করছে না। মূলত ও সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলো না যে আসলেই জবটা করবে কিনা।

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাতে তারা সাড়া দেননি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence